জনগণকে প্রতিপক্ষ বানালে এর পরিণতি শুভ হবে না বলে প্রশাসনের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনকে খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জনগণকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়, সংসার চলে। সুতরাং জনগণকে সম্মান করুন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না। কথায় কথায় গুলি করবেন না। আজকে যেমন র‌্যাবের ওপরে স্যাঙ্কশন (নিষেধাজ্ঞা) এসেছে। ঠিক তেমনি যেকোনো বাহিনীর ওপরেও আসতে পারে যদি না আইন মেনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে থাকে। গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

উত্তরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সদস্যদের হাতে গুম হওয়া ছাত্রদলের সাজেদুল ইসলাম মুন্না ও ঝন্টু হোসেনের পরিবারের কান্নার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আজকে দেশে মানবাধিকার নেই, গুলি করে হত্যা করা হয়, গুম করে নিয়ে যায় সাদা পোষাকধারীরা।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল-ডাল-লবণ-তেলের মূল্য কমানো আন্দোলন করছি, পেট্রোল-ডিজেল-কেরোসিনের মূল্য কমানোর জন্য আন্দোলন করছি, সারের দাম কমানোর জন্য আন্দোলন করছি, আমাদের ভাই ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জের শওকত প্রধান যে হত্যা করা হয়েছে তার বিচার করার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। দেশের মানুষ গর্জে উঠেছে। নুরে আলমরা প্রাণ দিতে দ্বিধা করেনি। আমরা কেউ প্রাণ দিতে দ্বিধা করবো না। আমাদের দাবি একটাই, এই দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা। আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই, ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই, বাঁচার অধিকার ফিরে চাই, শান্তিতে বাস করতে চাই। আমরা এই চোর-ডাকাত আওয়ামী লীগ তাদের হাত থেকে মুক্তি চাই।

তিনি বলেন, এ্যালিভেটেড রাস্তা- ১০ বছর ধরে এর নির্মান কাজ চলছে। তারপরও তার কাজ শেষ হয় না। কারণ তা নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে নির্মান খরচ হচ্ছে ২১৩ কোটি টাকা। পৃথিবীর কোনো দেশে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে এতো খরচ হয় না। এভাবে তারা সারাদেশে মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি চলছে। বাংলাদেশের মানুষকে তারা না খাইয়ে রাখছে, শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে গেছে।

নতুন ইসি ছাড়া কোনো নির্বাচন নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ব্যর্থ সরকারকে এই মুহুর্তে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং সরকারকে পদত্যাগ করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশনের অধিনে কোনো নির্বাচন হবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব দলের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্য একটা নির্বাচন চাই।

খালেদা জিয়াকে সরকার ভয় পায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সাজা দেয়া হয়েছে, তার প্রতি অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে। তাকে যে মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে-এটা কোনো মামলাই নয়। ২ কোটির মামলা- সেই টাকা এখন ব্যাংকে বেড়ে ৮ কোটি টাকা হয়েছে। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে সব ডাক্তারা বলেছেন। কিন্তু এরা তাকে বাইরে চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। কারণ দেশনেত্রীকে তারা ভয় পায়। যদি উনি আবার বেরিয়ে আসেন, আবার রাজপথে নামেন তাহলে হেমিলোনের বংশীবাদকের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ নামবে তখন তাদের তখতে তাউস উড়ে চলে যাবে।

উত্তরার পওয়েল কনভেনশন সড়কে বিএনপি মহানগর উত্তর পূর্ব জোনের উদ্যোগে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম ও নারায়নগঞ্জে শাওন প্রধান হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। উত্তরার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে অংশ নেয়।

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, তাবিথ আউয়াল, এস এম জাহাঙ্গীর, কফিল উদ্দিন, যুব দলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াছিন আলী, মহিলা দলের নায়েবা ইউসুফ, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের রাসেল বাবু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।#