Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুন্সীগঞ্জে আহত যুবদল নেতা শাওনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন মীরকাদিম পৌর যুবদলের ৮নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম শাওন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টায় শাওনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম। আজ শুক্রবার তার জানাযার নামাজ নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত হবে।
গত বুধবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলার মুক্তারপুরের পুরনো ফেরিঘাট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছোড়া মুহুর্মুহু টিয়ারশেল, রাবার বুলেট গুলি এবং ইটপাটকেলের আঘাতে উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তারা হলেন- মিরকাদিম পৌর বিএনপির কর্মী মোহাম্মদ শাওন হোসেন, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শাওন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
শাওনের ছোটো ভাই সোহাগ বলেন, বুধবার দুপুরের খাবারের পর ভাই বলেছিলেন, একটু ঘুরে আসি। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার সন্ধান পাই। এসে দেখি, তিনি অচেতন অবস্থায় আছেন। পরে রাত ১১টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ভাইয়া মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায়, শাওন দুই বছর আগে বিয়ে করেন। তার ১ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
এদিকে শাওনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসপাতালে উপস্থিত দলের নেতাকর্মীরা। সংবাদ শুনে সাথে সাথে হাসপাতালে ছুটে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, সাবেক সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভ‚ইয়া পিংকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভ‚ইয়া জুয়েলসহ আরো অনেকে।
এসময়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেন, হত্যা, গুলি আর নির্যাতন করে কোনো স্বৈরাচারী সরকারই টিকে থাকতে পারেনি। এ সরকারও পারবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এ সরকারের পতন ঘটবে, সেদিন এ জুলুমের বিচার হবে। প্রতিটি ফোঁটা রক্তের হিসাব কড়ায় গÐায় নেওয়া হবে। তিনি বলেন, অত্যন্ত ঠাÐা মাথায় পরিকল্পিতভাবে শাওনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই আন্দোলনকে আরো বেগবান করা হবে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নেতাকর্মীদেরকে হত্যা ও জখমের প্রতিবাদে কেন্দ্রের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বেলা ৩টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে যোগ দিতে মিছিল নিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর এলাকায় আসেন। এসময় পুলিশ তাদের সেখানে অবস্থান নিতে বাধা দেয়। মুক্তারপুর থেকে পরে নেতাকর্মীরা ট্রাকে করে পুরনো ফেরিঘাট এলাকায় যান। সেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল আসতে শুরু করে। এ সময় মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বিএনপির একটি মিছিলের ব্যানার ধরে টান দেন। এতে নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে বাগি¦তÐায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। ঘটনাস্থলে বিএনপির বেশ কয়েকজন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, তার মৃত্যুর সংবাদে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শাওন ছিল মীরকাদিম পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। নিহত শাওন মীরকাদিম পৌরসভার মুরমা গ্রামের সোহরাব আলীর পুত্র। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে শাওন ছিল বড়। শাওনের ৮ মাসের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। মিশুকচালক শাওন বাসা ভাড়া নিয়ে মুন্সীগঞ্জে থাকতো। শাওনের মৃত্যুর সংবাদ রাতে বাড়িতে আসলে পরিবারে মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। শাওনের স্ত্রী সাদিয়া মৃত্যুর সংবাদ শুনে নির্বাক হয়ে যান। শাওন ছিল পরিবারের একমাত্র উর্পাজন সক্ষম। শাওনের স্ত্রী কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, এখন তার সংসার কিভাবে চালবে। শিশু আবরারের এখন কী হবে। শাওনের মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা শাওনের বাসায় ছুটে যান। শহর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহবুবুর আলম স্বপন শাওনের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেন। শাওনের মৃত্যুতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুবদল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ