Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সীরাত : মানব জীবনের সর্বোত্তম নমুনা-১

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’ সূরা আহযাব : ২১। এই আয়াতে আল্লাহপাক রাসূলে কারীম (সা.) এর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। আর তা হচ্ছে, তিনি আল্লাহভীরুদের ‘উসওয়ায়ে হাসানা’ উত্তম আদর্শ। রাসূল এবং পয়গম্বর যিনি হন, তিনি আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য আদর্শ নিয়ে আসেন এবং আদর্শ হয়ে আসেন।

আল্লাহপাক তাঁর হেদায়েত ও পথনির্দেশ পৌঁছাবার জন্য মানবজাতির মধ্য থেকে তাঁর কিছু বিশিষ্ট বান্দাকে নির্বাচন করেন এবং তাঁদের মাধ্যমে তাঁর পথনির্দেশ বান্দাদের কাছে প্রেরণ করেন। হযরত আদম (আ.) থেকে নবী ও রাসূলের এই ধারা আরম্ভ করেছেন এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। সূরাতুল বাকারায় আছে, হযরত আদম আ.-কে লক্ষ করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, যখন তাঁকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়- তোমরা পৃথিবীতে নেমে যাও, এরপর আমার পক্ষ থেকে যদি তোমাদের নিকট হেদায়েত ও পথনির্দেশ আসে তো যারা এই পথনির্দেশ অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না। (সূরা বাকারা : ৩৮)।

আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আ.-এর মাধ্যমে হেদায়েত পাঠানোর ধারা শুরু করেছিলেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর মাধ্যমে সেই ধারাকে পূর্ণাঙ্গ ও সমাপ্ত করেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের জীবনের শেষ দিকে বিদায় হজ্বের সময় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এই আয়াত নাযিল হয়েছে : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে সম্পূর্ণ করলাম। তোমাদের ওপর আমার নিআমতকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা : ৩)। এটা হলো আদম (আ.) থেকে নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার পথনির্দেশ প্রেরণের যে ধারার সূচনা হয়েছিল সেই ধারার সমাপ্তি।
আল্লাহ তাআলা দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন। এখন কিয়ামত পর্যন্ত এই দ্বীনই অনুসরণীয়, সকল মানুষের জন্য অনুকরণীয়। নবী ও রাসূলগণ নিছক ‘বার্তাবাহক’ ছিলেন না; বরং তাঁরা ছিলেন ওই আসমানী বার্তার বাস্তব নমুনাও। আল্লাহ তাআলা বান্দাদের কাছে যে শিক্ষা ও বিধান পাঠিয়েছেন তাঁরা ছিলেন ওই শিক্ষার বাস্তব নমুনা। আম্বিয়ায়ে কেরাম তাওহীদ-রিসালাত ও আখিরাতের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন আর এইসব বিষয়ের প্রতি তাঁদের ঈমানই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।

তাঁরা আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিয়েছেন আর তাঁরাই ছিলেন সবচেয়ে বড় আবেদ। তারা বান্দার হকের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন আর বান্দার হক কীভাবে আদায় করতে হয় তা তাদের কর্ম দ্বারা দেখিয়ে গেছেন। তারা উত্তম স্বভাব-চরিত্রের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন আর তারাই ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। এভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত শিক্ষা ও বিধানের তাঁরা ছিলেন বাস্তব নমুনা। কোরআন মাজীদে আম্বিয়ায়ে কেরামের গুণাবলি এবং তাঁদের দাওয়াতের যে ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে তা এই বাস্তবতার দলিল। কোরআনের সেই বৃত্তান্ত এক মধুর দৃষ্টান্ত। হযরত মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী রাহ.-এর ভাষায় কোরআন যখন আম্বিয়ায়ে কেরামের গুণাবলি বয়ান করে তখন যেন মনভরে প্রিয়ের কাহিনী বর্ণনা করে।



 

Show all comments
  • Antara Afrin ৩ অক্টোবর, ২০২২, ৮:৩২ এএম says : 0
    এই মহামানবের শান ও মর্যাদা, জগৎখ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতার স্বাতন্ত্র ও ভিন্নতার এটিও এক বিরাট দলিল যে, আজ পর্যন্ত তার মুবারক ব্যক্তিত্বকে যে পরিমাণ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সাথে দেখা হয় তার শতভাগের একভাগও অন্য কারো ভাগ্যে জুটেনি!
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ৩ অক্টোবর, ২০২২, ৮:৩৩ এএম says : 0
    আমরা জানি যে, কুরআন ইসলামী শরীয়তের মৌলিক ও প্রথম উৎস। এবং মানুষের সুখ-শান্তি ও চিরন্তন সফলতার চাবিকাঠি। পৃথিবীর বহু মানুষ বিশেষত মুসলিমগণ কুরআনকে সহীহ অর্থে বোঝা, তার বিধানাবলী জানা এবং এই সৌভাগ্যগ্রন্থের রহস্য সম্পর্কে অবগত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে থাকে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এটা সহজ হবে সীরাত অধ্যয়নের মাধ্যমে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন