Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সেনা মোতায়েন হবে কিনা সিদ্ধান্ত আজ

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাবিবুর রহমান : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে সেনাবাহিনী থাকবে না পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিয়ে  নির্বাচন হবে তা সিদ্ধান্ত হবে আজ শনিবার।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে ঘিরে  বিএনপির প্রাথী মেয়র প্রার্থী আইনজীবি সাখাওয়াত হোসেন খান সেনা মোতায়নের দাবি জানিয়ে কমিশনে লিখিত আবেদন করেছেন।  অন্য দিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলছেন, সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নাই। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে সশস্ত্র বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে।
নারায়ইগঞ্জ সিটি কপোরেশন নির্বাচন ও ৬১ জেলা পরিষদ নিবার্চন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা আজ শনিবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খানের স্বাক্ষরিত সংশোধিত নোটিসে এ তথ্য জানা গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের সুবিধার্থে গত রোববার ইসির নিরাপত্তা পরিকল্পনার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে সশস্ত্র বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা ছক তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিয়েই এই নির্বাচন হবে কি না তা চূড়ান্ত হবে আজ শনিবার। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মাঠে নামার প্রস্তাব নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে কমিশন।
সূত্র জানায়, নাসিক নির্বাচনে বিএনপি সেনা মোতায়েনের দাবি আমলে নেবে কি না তা আজকের  বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিবে কমিশন। এ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনি এলাকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনে ইসির প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে প্রস্তাবটি গোপন রাখা হয়েছে। এর আগে কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শনিবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলেছে ইসি।
নাসিক নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে কি না জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো: জাবেদ আলী ইনকিলাবকে বলেন, সেনা মোতায়েন ছাড়া কী ভালো নির্বাচন করা যায় না? আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দেখা যাক কী হয়। আমরাতে সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়েছি। তারাও থাকবে, বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয় তার পরে বলতে পারব।
ইসির উপ-সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান  ইনকিলাবকে জানান, নাসিক ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
ইসির প্রস্তাবিত নিরাপত্তা পরিকল্পনায় দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের পাহারায় অস্ত্রসহ সাতজন পুলিশ, অস্ত্রসহ তিনজন ব্যাটালিয়ন আনসার, অস্ত্রসহ দুইজন অঙ্গীভূত আনসার, লাঠিসহ ১২ জন আনসার/ভিডিপি সবমিলিয়ে ২৪ জন নিরাপত্তাকর্মী থাকবে। সাধারণ কেন্দ্রে ওই সংখ্যা হবে ২২জন। এতে অস্ত্রধারী নিরাপত্তা কর্মী দুইজন কম থাকবে। এখনও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা তৈরি হয়নি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ডে ১৭৪টি কেন্দ্র ও একহাজার ৩০৪টি বুথ রয়েছে। নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তার বিষয়ে বলা হয়েছে, এ নির্বাচনে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মোট ২৭টি পুলিশের মোবাইল ফোর্স এবং তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একটি করে মোট ৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে র‌্যাবের ২৭টি টিম, প্রতি দুই ওয়ার্ডের জন্য বিজিবির একটি করে মোট ১৪ প্লাটুন সদস্য এবং তিন প্লাটুন কোস্টগার্ড সদস্য মোতায়েন করা হবে। ইসির প্রস্তাবনায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র‌্যাব বা পুলিশের টিম নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণের পরদিন অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট চার দিন এসব সদস্য মাঠে থাকবেন। তবে সেনাবাহিনীর বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে. সেনাবাহিনীর জন্য সরকারকে চিঠি দেয়া হবে। দিলে নামানো হবে।
এদিকে নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা বা ভোটার নন এমন ব্যক্তিদের নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে ইসি। এতে বলা হয়েছে, আগামী ১৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টার আগেই এসব ব্যক্তিদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে হবে। ভোটগ্রহণের দিন অন্য এলাকার প্রভাবশালীরা অবস্থান করলে বা নির্বাচনে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করলে বা বিস্তারের চেষ্টা করলে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে আগামী ২১ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ২২ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্যাক্সি ক্যাব, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ২৩ ডিসেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জাতীয় হাইওয়ের ক্ষেত্রে এ বিধি-নিষেধ প্রযোজ্য হবে না।
প্রস্তাবনায় ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকেরা ছোট ছোট দল করে পর্যায়ক্রমে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাবে। একটি দল পরিদর্শন করে বের হয়ে আসার পর আরেকটি দলকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া যেতে পারে।
ভোটগ্রহণের কয়েকদিন আগ থেকে অস্ত্রের লাইসেন্সধারীরা অস্ত্রসহ চলাচল করতে না পারে; সেজন্য জেলা প্রশাসক নির্দেশনা জারি করবেন। এ নির্বাচনে আচরণ বিধি দেখভালে ২৭জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ভোটগ্রহণের দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত প্রতিটি বাহিনীর মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে আরো ৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ভোটগ্রহণের দুই-তিনদিন আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় সেল স্থাপন করা হবে। ওই সেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। এ ছাড়া ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ আগামী ২০ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় জনসভা আহবান, মিছিল বা শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সেনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ