Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশে ইসলাম প্রবেশের ইতিহাস

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাও. এইচএম গোলাম কিবরিয়া রাকিব

॥ শেষ কিস্তি ॥
মুহাদ্দিস শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা : মুহাদ্দিস শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা হিজরী সপ্তম শতকে ঢাকা জেলাধীন সোনারগাঁও আগমন করেন এবং এখানে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দানের ব্যাপক ব্যবস্থা করেন। ফলে সোনারগাঁও ইলমে দ্বীনের একটি শিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়। পূর্ব বাংলার রাজধানী হিসেবে যখন সোনারগাঁয়ে বহুসংখ্যক কোরআন-হাদিস বিশারদ সমবেত হন। ফলে এ স্থানের বহুলোক ইলমে দ্বীনের শিক্ষালাভ করে পারদর্শিতা অর্জন করেন। তখন সে অঞ্চলে দ্বীনচর্চার এতই ব্যাপকতা ছিল যে, দ্বীনচর্চার কেন্দ্র হিসেবে বহু মসজিদ ও খানকা নির্মাণ করা হয়।
হজরত শাহজালাল ইয়ামানী : তিনি আরবের ইয়েমেন হতে বাংলাদেশের সিলেট আগমন করেন এবং ৩৬০ জন সহচর আউলিয়াসহ বাংলাদেশে দ্বীন প্রচার করেন। পাশাপাশি ইলমে হাদিস শিক্ষাদান করেন।
শাহ বদরুদ্দীন বদরে আলম জাহেদী : তিনি হজরত শিহাবুদ্দীন ইমাম মক্কীর বংশধর। তাঁর পিতা তার প্রতি দক্ষিণ পূর্ববঙ্গে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব অর্পণ করলে তিনি অসংখ্য সহচরসহ চট্টগ্রামে আগমন করেন এবং তথায় ইসলামের আলো বিস্তার করেন। মুসলমানগণের মাঝে তিনি ইলমে দ্বীনের জ্যোতি ছড়িয়ে দেন।
হজরত খানজাহান আলী : তিনি দক্ষিণ বাংলার খুলনা অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেন। পাশাপাশি ইসলামে দীক্ষিত মুসলমানগণকে তিনি ইলমে দ্বীনের শিক্ষাদান করেন।
সৈয়দ আলী বাগদাদী : তিনি একশ’জন সহচরসহ ইসলাম প্রচারের উদেশ্যে তুঘলক রাজত্বের শেষের দিকে বাগদাদ হতে ভারতে আগমন করেন। তিনি কিছুকাল দিল্লী অবস্থান করেন এবং তথায় সৈয়দ রাজত্ব শুরু হলে সৈয়দ রাজবংশে বিবাহ করেন। রাজ দরবার হতে বাংলার ফরিদপুর জেলার ঢোল সমুদ্র নামক স্থানে ১২ হাজার বিঘা লা-খেরাজ জমি প্রাপ্ত হয়ে তিনি বাংলায় আগমন করেন। দীর্ঘকাল ইলমে দ্বীনের প্রচার ও প্রসার শেষে ঢাকার মিরপুরে ইন্তেকাল করেন।
মাওলানা হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরিদপুরী : তিনি ফরিদপুর জেলার মাদারীপুরে শিবচর থানার অন্তর্গত শামাইল নামক গ্রামে তালুকদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮ বছর বয়সেই তিনি মক্কায় চলে যান এবং তথায় তিনি শায়খ তাহের সম্ভলের নিকট হাদিস, তাফসির ও ফিকহশাস্ত্রে দীক্ষা লাভ করেন। সেখানে দীর্ঘকাল অবস্থানের পর তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং নিজ এলাকায় ইলমে দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
মাওলানা আবদুল কাদের সিলেটী : তিনি ছিলেন মাওলানা ইদ্রীস সিলেটীর পুত্র। তিনি একজন বিখ্যাত আলেম ও হাদিস বিশারদ ছিলেন। হাদিস বিষয়ে তাঁর লিখিত বিভিন্ন কিতাব রয়েছে।
মাওলানা ইমামুদ্দীন হাজীপুরী : তিনি শাহ আবদুল আযীয দেহলভীর এবং সৈয়দ আহমদ বেরলভীর খলিফা ছিলেন। তিনি সৈয়দ আহমেদের সাথে পেশওয়ার জেহাদে যোগদান করেন। সৈয়দ আহমেদের শাহাদাতের পর তিনি রামপুর হয়ে নিজ জেলা নোয়াখালীতে প্রত্যাবর্তন করেন। এখানে তিনি জীবনের বাকি অংশ কোরআন ও হাদিসের চর্চা, প্রসার ও প্রচারে অতিবাহিত করেন।
মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী : তিনি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে জৌনপুরীর এক সম্ভ্রান্ত ছিদ্দিকী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাওলানা আহমদুল্লাহ আমানীর নিকট ইলমে হাদিস শিক্ষাগ্রহণ করেন। সৈয়দ শহিদ বেরলভীর নিকট থেকে তিনি ইলমে মারেফত অর্জন করেন। সৈয়দ শহিদের আদেশে তিনি বাংলাদেশে ইলমে দ্বীন ও ইলমে হাদিসের প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। প্রায় একান্ন বছরকাল এ কাজে ব্যাপৃত থেকে তিনি উত্তরবঙ্গের রংপুর জেলায় ইন্তেকাল করেন।
মাওলানা হাফেয আহমদ জৌনপুরী : তিনি কলিকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উচ্চস্তরের আলেম ও হাদিস বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি তার গোটা জীবন বাংলাদেশে ইসলাম ও ইলমে দ্বীনের প্রচারে ব্যয় করেন।
মাওলানা আবদুল ওয়াহেদ চাটগামী : তিনি চট্টগ্রামের খরন্দ্বীপে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম যুগে মাওলানা ইয়াকুব নানুতবী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণের নিকট ইলমে দ্বীনের শিক্ষাগ্রহণ করেন। পরে নিজ এলাকায় এসে মাওলানা আবদুল হামীদসহ কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তির সহযোগিতায় ১৯০১ সালে তিনি হাটহাজারীতে ‘মইনুল ইসলাম’ নামে একটি কাওমী মাদরাসায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯০৮ সালে মাদরাসাটিকে তিনি দাওরায়ে হাদিস স্তরে উন্নীত করেন।
মাওলানা ওয়াজীবুল্লাহ সন্দ্বীপী : তিনি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরীর সাথে দেওবন্দে ইলমে দ্বীনের শিক্ষাগ্রহণ করেন। শিক্ষাগ্রহণ শেষে তিনি নোয়াখালী আহমাদিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন এবং সমগ্র জীবন ইলমে দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে নিজেকে উৎসর্গ করেন। তিনি একজন অসাধারণ মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি ও ইলমে দ্বীনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন।



 

Show all comments
  • Aminul Islam ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:৪১ এএম says : 0
    Thanks to the writer for this article
    Total Reply(0) Reply
  • Mizanur Rahman ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:৪৫ পিএম says : 0
    এখনতো ইসলাম এদেশ থেকে বের করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে, এই দেশ ইসলাম কিভাবে থাকবে তা নিয়ে ভাবুন, লেখালেখি করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • তারেক মাহমুদ ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৫:২১ পিএম says : 0
    ইনকিলাবের কাছ থেকে এই ধরনের নিউজ বেশি বেশি আশা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৫:২৪ পিএম says : 0
    হে আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের জন্য কবুল করো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ