Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এখনও ১৭০-এ খুশি বাংলাদেশ!

প্রস্তুতি ম্যাচে আজ মুখোমুখি আফগানিস্তান

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে ভঙ্গুর হৃদয় নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আগের দিনই অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে। সাকিব আল হাসানরা আস্তানা গেড়েছেন ব্রিজবেনে। ছবির মতো সুন্দর কুইন্সল্যান্ডের অ্যালান বোর্ডার ফিল্ডেই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ চেনা আফগানিস্তান। তার আগে ম্যাচ ভেন্যুতেই গতকাল প্রথম অনুশীলন করে দল। বিবিবির পাঠানো দুটি ভিডিওতে টেলএন্ডারদের ব্যাটিং নিয়েই দেখা গেল বাড়তি গুরুত্ব। ক্ষুদ্র সংস্করণের এই ক্রিকেটে যে তাদেরও দায় থাকে দলকে কিছু দেবার!

নেট অনুশীলনের চারটি উইকেটই সবুজ ঘাসে ভরা। ব্রিজবেনের চেনা বাউন্স ও গতি তো আছেই। চ্যালেঞ্জিং সেই উইকেটে ইয়াসির আলি চৌধুরি, আফিফ হোসেনরা অনুশীলন করলেন পাল্টা আক্রমণের। আরেক নেটে স্কুপে হাত পাকানোর কাজ করলেন নুরুল হাসান সোহান। তবে তারা অল্প সময়ই ছিলেন নেটে। ঐচ্ছিক অনুশীলনে আসেননি সাকিব আল হাসান, লিটন দাসরা। লম্বা সময় ব্যাটিং করলেন বোলাররা।
অনুশীলন শেষে ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স জানালেন, প্রয়োজনের সময় বোলারদের কাছ থেকেও ব্যাটিংয়ে কার্যকর অবদান চায় দল, ‘ওদেরকে (বোলাররা) নিয়ে আলাদা নেটে কাজ করলাম। টার্গেট ব্যাটিং করা হলো, ইয়র্কার ও সেøা বোলিংয়ে তাদের স্কিল নিয়ে কাজ হলো। ব্যাটসম্যানদেরও যেমন থ্রো ডাউন করানো হয়, আন্ডার আর্ম খেলানো হয়, সেরকমই স্কিল সেশন হলো ওদের। কালকে (পরশু) রাতে ওদের লম্বা ফ্লাইট ছিল, তাই খুব বেশি কাজ করাতে চাইনি। সা¤প্রতিক সময়ে ওদের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ হয়নি, কারণ টপ অর্ডার ১০ ওভার পর্যন্ত ভালো করেছে। ওদের নিয়ে কাজ করে যেতে হবে, কারণ কোনো একটা পর্যায়ে ওদের ব্যাটিং লাগবে আমাদের।’
ম‚ল ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সৌম্য সরকারের নেট সেশন পর্বই নজর কাড়ল বেশি। বাইরে থেকে এসে বিশ্বকাপের ম‚ল স্কোয়াডে জায়গা করে নেওয়া এই ওপেনারের সঙ্গে নেটে অনেকটা সময় কাটালেন টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরণ শ্রীরাম। নিজেই আর্ম থ্রোয়ারে বিভিন্ন রকম শটের অনুশীলন করালেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে। এক পর্যায়ে ক্রমাগত শুধু শর্ট বল তাক করা হলো সৌম্যর দিকে। কোনোটি বুক উচ্চতায়, কোনোটি কাঁধ কিংবা নাক উচ্চতায়। তিনি একের পর এক পুল খেলে গেলেন। টাইমিং ঠিকঠাক করতে পারলেন বেশির ভাগ পুল শটেই। একটি বাউন্সারে সৌম্যর র‌্যাম্প শট দেখে শ্রীরাম তো উচ্ছ¡সিত হয়ে উঠলেন। তিনি জানেন কিনা কে জানে, একসময় এসব র‌্যাম্প বা পেরিস্কোপ কত ভালো খেলতেন সৌম্য! বাউন্সারের ফাঁকেই হুট করে একটি ফুল লেংথ বল ছুড়লেন শ্রীরাম। সৌম্য প্রস্তুত ছিলেন এবার। তার দারুণ স্ট্রেট ড্রাইভে মুগ্ধতার উচ্চারণ শোনা গেল টেকনিকাল কনসালটেন্টের কণ্ঠে।
সৌম্যর স্কোরিংয়ের বিকল্প বাড়ানো, ক্রিজের ব্যবহার করে ভালো বলেও চার-ছয় আদায় করা ও গ্যাপ বের করা নিয়েই ম‚ল কাজ করছিলেন শ্রীরাম। এই প্রস্তুতি পর্বই বলে দিচ্ছিল, সৌম্যকে নিয়ে পরিকল্পনা আছে দলের। জেমি সিডন্সের কথায়ও সেটিরই প্রকাশ ফুটে উঠল। প্রথম ঘোষিত বিশ্বকাপ দল থেকে সাব্বির রহমানের বদলে সৌম্যকে নেওয়ার কারণ তিনি বোঝাতে চাইলেন অল্প কথায়, ‘১৭ জন ক্রিকেটার ছিল আমাদের দলে, ১৫ জন নিতে হতো। দলের স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের প্রয়োজন মনে হয়েছে, সেটাই করেছি আমরা। সৌম্য অবশ্যই ৫০ বা ৬০ রানের ইনিংস খেলেনি, সেটা সাব্বিরও করেনি। আশা করছি, সামনের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ও বিশ্বকাপে দলের সবাইকে ভালো ফর্মে পাওয়া যাবে।’
সৌম্যর অন্তর্ভুক্তির পর বাংলাদেশের সম্ভাব্য উদ্বোধনী জুটি নিয়েই সম্ভবত এখন সবচেয়ে বেশি কৌত‚হল। নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে চার ম্যাচে চারটি উদ্বোধনী জুটি খেলানো হয়েছে। সামনে এখন বিশ্বকাপের অফিসিয়াল দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। এই দুই ম্যাচে বিশ্বকাপ একাদশের ব্যাটিং কম্বিনেশনের সম্ভাব্য ছবি পরিস্কার হবে বলে জানালেন সিডন্স, ‘আমাদের চ‚ড়ান্ত ব্যাটিং অর্ডারের অনেকটা কাছাকাছি কিছুই দেখা যাবে এই দুই ম্যাচে। আমাদের দল খুব বেশি টি-টোয়েন্টি জেতেনি, চেষ্টা করছে সেরা সমন্বয় ও সেরা ব্যাটিং অর্ডার বাছাই করতে। আমরা অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছি (ব্যাটিং অর্ডার চ‚ড়ান্ত করার)। খুব কাছাকাছি আমরা এখন (ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করার)। আমাদের ভাবনায় আমরা সঠিক আছি বলেই মনে করি। প্রয়োজন এখন কোনো একজনের নিজেকে মেলে ধরার ও বড় স্কোর গড়ার।’
টি-টোয়েন্টিতে ২০০ রান বিশ্বক্রিকেটে যতটা নিয়মিত, বাংলাদেশ দলের জন্য ততটাই বিরল। এই মাইলফলকের দেখা মেলে এখানে কদাচিৎ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সব মিলিয়ে ৬৭ ইনিংস আগে ব্যাট করে মাত্র দুইবার ২০০ ছুঁতে পেরেছে বাংলাদেশ। অন্য দিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিপক্ষরা নয়বার ২০০ রান করলেও রান তাড়ায় বাংলাদেশের জয় ¯্রফে ১টি।
অস্ট্রেলিয়ায় সমান বাউন্স ও বল দারুণভাবে ব্যাটে আসার উইকেটে এবারের বিশ্বকাপেও বড় স্কোরের খেলা হতে পারে। তবে দুইশ রানে তাকিয়ে মোহাবিষ্ট নন সিডন্স, ‘নিউজিল্যান্ডে (ত্রিদেশীয় সিরিজে) কেবল একটি স্কোর ছিল দুইশ ছাড়ানো। ২০০ করা নিয়ে তাই আমাদের ভাবনা নেই। আমরা যদি ১৬০-১৭০ নিয়মিত করতে পারি, আমাদের বোলিং আক্রমণ দিয়ে আমরা ম্যাচ হারার চেয়ে জিতবই বেশি। আমার মনে হয় না, এখানে ২০০ দরকার আছে। কালকেও ২০০ দরকার হবে না, বিশ্বকাপেও ২০০ রানের স্কোর খুব একটা জরুরি হবে না। ১৭০-১৮০ এখানে হবে আদর্শ স্কোর। আমাদের বোলিং আক্রমণের জন্য এটা যথেষ্ট হবে।’
মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ সবশেষ ম্যাচেই ক্রাইস্টচার্চে গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের কাছে হেরেছে ১৭৩ রানের পুঁজি নিয়েও। গত মাসে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮৩ রান নিয়েও হেরে গিয়ে তাদের অভিযান শেষ হয় গ্রæপ পর্ব থেকে। বিশ্বকাপের অফিসিয়াল প্রস্তুতি আজ মাঠে নামা আফগানদের বিপক্ষে ৯ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ দেড়শ ছাড়াতে পেরেছে কেবল একবার!

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ