Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শাহজালাল বিমানবন্দরে সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব অর্থায়নে অত্যাধুনিক রাডার

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পিপিপি’র মাধ্যমে রাডার স্থাপন বাতিলের চূড়ান্ত পর্যায় : প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বিমানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিভিল এভিয়েশনের ১ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা লুটপাটের পাঁয়তারা ভেস্তে গেল
স্টাফ রিপোর্টার : অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অর্থমন্ত্রী ও বিমান মন্ত্রী পরামর্শ ক্রমে  বাতিল হতে যাচ্ছে  শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রার্ডার নির্মাণের নামে ১৭ শ’ কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে  অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ওই প্রকল্পটি বাতিলের জন্য ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত পর্যায় রয়েছে। গতকাল বেসরকারী বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে হযরত শাহজালাল (রহ.) আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক রাডার  টাওয়ার স্থাপনের নামে প্রায় ১৭ শ’ কোটি টাকা লুটপাটের যে আয়োজন করেছিল সিভিল এভিয়েশনসহ একটি প্রভাবশালী চক্র তা এখন ভেস্তে গেল।  প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর মাধ্যমে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ৩শ’ কোটি টাকায় অনুমোদন করা হয় ২০১২ সালে। পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে  পিপিপির মাধ্যমে ১৭ শ’ ৫৫ কোটিতে করার জন্য সিভিল এভিয়েশন সিদ্ধান্ত নেয়। তিন শত কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের পর রহস্যজনক কারণে তা ১৭ শত ৫৫ কোটিতে করার প্রচেষ্টা চালায় ওই চক্র। বিষয়টি বিমান মন্ত্রণালয়ের নজরে যাওয়ার পর প্রকল্পের ব্যয় পুনরায় মূল্যায়নের জন্য বিমান মন্ত্রী রাশেদ থান মেনন সিভিল এভিয়েশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ৬ নভেম্বর বিমান মন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান জাকিয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সিভিল এভিয়শনকে এ নিদের্শ দেয়া হয়। চিঠির নির্দেশে বলা হয়েছিল, এ প্রকল্পের জন্য যে সব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা হবে তার মুল্য তালিকা এবং কোম্পানীর নামসহ একটি তালিকা  মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য সিভিল এভিয়েশনকে নিদের্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাডারের যন্ত্রাংশ এব কোন কোন কাজে কি কি ব্যবহার করা হবে এর মূল্যতালিকা এবং প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ্য করে বিস্তারিত মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও অন্যান্যদের প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় ব্যয়ের একটি তালিকাও মন্ত্রণালয়কে দিতে বলা হয়েছিল।
মন্ত্রণালয় সুত্র জানায়, পিপিপির মাধ্যমে ১৭ শ’ ৫৫ কোটি টাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রার্ডার স্থাপনের যে প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তা অত্যাধিক ব্যয় বলে দরপত্রের মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে তা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সর্ব শেষ গতকাল  রাডার স্থাপনের ওই প্রকল্পটি বাতিল করে সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপন করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এ পর্যায়ে দরপত্র পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ না করে দ্রুত সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব অর্থে তা বাস্তবায়নের জনেও মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন এবং অত্যাধুনিক রাডার স্থাপন এখন সময়ের দাবী। রাডার স্থাপন প্রকল্পটি পিপিপি এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্ত এখন আর তা হচ্ছে না। তিনি বলেন এ প্রকল্প বাতিলের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব অর্থায়নে তা করার জন্য বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছি। এব্যপারে সিভিল এভিয়েশনকে নিদের্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, রাডার টাওয়ার স্থাপন এখন জরুরী হয়ে পড়ছে। মন্ত্রী বলেন, রাডার টাওয়ার স্থাপনসহ সকল  কারিগরী বিষয় সিভিল এভিয়েশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখছে।
এদিকে সিভিল এভিয়েশনের একটি সূত্র জানায়, একটি অসাধু চক্র এবং প্রকল্প পরিচালক মাত্র ৩ শত কোটি টাকা  বিনিয়োগ বিপরীতে ১৭শ কোটি টাকায় প্রকল্পটি অনুমোদনের পাঁয়তারা করেছিল। মুলত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নামে তারা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ তৈরী করেছিল। এ প্রকল্পটি বাতিল হলে দেশ প্রায় ১২ শ কোটি টাকার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। কারণ তা বাস্তবায়ন করতে ৫ শ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে না। এছাড়া সিভিল এভিয়েশনের এক হাজার কোটি টাকার বেশি নিজস্ব অর্থ ব্যাংকে অলস পড়ে রয়েছে। তাই সিভিল এভিয়েশন নিজস্ব অর্থায়নে তা বাস্তবায়ন করতে পারবে। পিপিপি এর মাধ্যমে রার্ডার স্থাপন প্রকল্পটি বাতিল হলে শুধু সিভিল এভিয়েশন নয়, সরকার বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।
সিভিল এভিয়েশন একটি সুত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পটি ২০১২  থেকেই সিএএবি এর বহুল আলোচিত ভুয়া ও অসত্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে বানানো। সিএএবি এর কাছে যথেষ্ট টাকা না থাকার কারণ দেখিয়ে রাডার কন্ট্রোল টাওয়ার এবং সংশিষ্ট কমিউনিকেশন ইকুয়ুপমেন্ট নামে প্রথম থেকেই এই কাজটি পিপিপি এর মাধ্যমে করার চেষ্টা শুরু হয়। সিএএবি এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের পিপিপি এর মাধ্যমে করতে চায় যা কিনা তাদের বাৎসরিক আয়ের শতকরা ৮০ ভাগের যোগান দেয়। সবচেয়ে বেশী আয়ের এই প্রকল্পটি পিপিপি এর মাধ্যমে করলে ব্যাপক লুটপাটে সুযোগ পাবে পিপিপি মালিক পক্ষ। কারণ তারা এই বাৎসরিক আয়ের একটি বড় অংশের ভাগ পাবে। এটাই পিপিপি এর মাধ্যমে কাজ করানোর প্রধান উদ্দেশ্য বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন। প্রথম বছরে ২৫০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী ১০ বছরে ৪০-৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সিএএবি এর বাৎসরিক আয়ের বেশীর ভাগ অংশ নিয়ে যাবে ওই কোম্পানী। অপর দিকে অবশিষ্ট আয় দিয়ে সিএএবি তাদের ৯টি বিমান বন্দর পরিচালনা ও কোটি কোটি টাকায় স্থাপিত যন্ত্রপাতি পরিচালনা করবে। যে কাজ সিএএবি এর বাৎসরিক আয়ের শতকরা ৮০ ভাগ যোগান দেয়, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প-এ বিনিয়োগ করার জন্য সিএএবি এর কাছে ৩শ’ কোটি টাকা নেই এটা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে সংশ্লিষ্টরা দাবী করে ছিলেন।  কিন্ত প্রকৃতপক্ষে সিভিল এভিয়েশনের এক হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংকে অলস পড়ে আছে বলে সিভিল এভিয়েশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ