Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পরিবেশ শোকের, দিবসটি বিজয়ের : আজ ১৬ ডিসেম্বর

| প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর : বিজয় মানেই আনন্দ। আনন্দ উপভোগ করতে মনের বিশেষ অবস্থার প্রয়োজন। মনের এই বাস্তবতা তৈরি হয় পরিবেশের উপর। পরিবেশ নির্ভর করে সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর। বাংলাদেশের এখন যে সার্বিক অবস্থা তাতে বিজয়ের আনন্দে ভেসে বেড়াবার পরিবর্তে নিখোঁজ গুম হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে যে কোন প্রক্রিয়ায় আত্মরক্ষার উপায় খুঁজতেই মানুষ উদগ্রীব। ঠিক এমন একটা অবস্থাই তৈরি হয়েছিল বিজয়ের আগ দিয়ে। দিন বা রাতে কেউ পারতপক্ষে ঘর থেকে বের হতো না এই ভয়ে যে আবার ফিরতে পারবে কিনা। কেন সে অবস্থা হয়েছিল তা বোধকরি নতুন করে আলোচনার অবকাশ রাখে না। একটি জাতির জন্মলগ্ন চলছিল। একদিকে মুক্তিযুদ্ধ অন্যদিকে হায়নার আক্রমণ। এরপর অনেক দিন কেটে গেছে। মানুষ ভেবেছিল সেই দুঃসহ দুর্বিষহ দিনগুলোরও বোধহয় অবসান হয়েছে। ইতিহাসের সবচেয়ে বড়শিক্ষা মনেকরা হয় ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না সে কারণেই বোধহয় নতুননামে আবার ফিরে এসেছে সেই বিভীষিকাময় অতীত। এবারে কোন বিদেশি শাসকের হাতে নয় স্বদেশি শাসকরাই পুনরাবৃত্তি করছে সেইসব স্মৃতি। সবকিছু সত্ত্বেও আজ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। রাজনৈতিক বিজয়ের দিন। দেশব্যাপী যে বিজয় দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে তা যেহেতু রাজনৈতিক বিজয় তাই এর আনন্দও ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিজয়ের আনন্দ তা যে কারণেই হোক এর ধরনই আলাদা। বাঁধভাঙা জোয়ারের সাথেও এর কোন তুলনা হয় না। ’৭১ সালের এই দিনে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসান হয়। নিঃসন্দেহে দিনটি ইতিহাসের নিরিখে মহা গৌরবময়। কারণ অনেক প্রতীক্ষিত ছিল এ বিজয়।
এটিই প্রথম নয়, আরো একবার এ অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করেছিল। উৎসবে উপভোগ করেছিল দিনটি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় সে আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি বা হতে পারেনি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যারা রাজধানীতে ছিলেন তারা প্রত্যক্ষ করেছেন কিভাবে দীর্ঘ কমাসের অবরুদ্ধ ঢাকাবাসী দিনটি উদযাপন করেছিল। মনে হয়েছে, ধরে প্রাণ এলো। যদিও ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই তা বোঝা যাচ্ছিল বিজয় কেবল সময়ের ব্যাপার। তবু দিনটির জন্য যে প্রত্যাশা, বুক ভরা আশা তার কি অন্য কোন তুলনা আছে। এমনিতেই বলা হয়, অপেক্ষার সময় দীর্ঘতর হয়। সেদিক থেকে ২৬ মার্চ যখন স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল তার থেকে ৯ মাস অনেক লম্বা সময়। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে অনেক বিতর্কের হয়তো ফয়সলা হতে পারতো । যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি ও বাস্তবতার আলোকে যেন তর সইছিল না, সইবার কথাও কথা নয়। যেহেতু বিষয়টি কেবল ৯ মাসের যুদ্ধ নয় বরং জাতির অভ্যন্তরে লালিত বহু বছরের স্বাধীনতা এবং স্বাতন্ত্র্য সাংস্কৃতিক বিকাশের যে বদ্ধমূল ধারণা ছিল তার শুভ সূচনা বলে কথা। এর তুলনা অন্যকিছুর সাথে নয়। তবুও মনে হয় শীতের সকালে ১৬ ডিসেম্বরের প্রথম সূর্যোদয় যেন অন্য যে কোন দিনের চেয়ে আলাদা ছিল। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ যাই থাক না কেন, হৃদয়ের উষ্ণতায় বাংলাদেশ তথা ঢাকার পরিবেশ ভিন্নরূপ ধারণ করেছিল। সেদিনের কথা আজও অনেকেই নানাভাবে স্মরণ করেন। স্মৃতি রোমান্থন করেন। শুধু যোদ্ধা বা সংগঠকরাই নয়, সাধারণ নাগরিকরাও তাদের নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, যে পর্বত প্রমাণ প্রত্যাশা নিয়ে সেদিন বাংলার জনগণ আনন্দ মিছিলে সমবেত হয়েছিল বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বোধকরি এবারের বিজয় দিবসে সে হৃদয়ের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের বদলে নয়া শঙ্কা দানাবেঁধে উঠতে শুরু করেছে।
বর্তমান সময়ে এমনিতেই মনে করা হয়, সার্বভৌমত্বের পুরনো সংজ্ঞা এখন আর তেমন কার্যকর নেই। একসময় ভৌগোলিক স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বলতে রাষ্ট্রীয় অসীম ক্ষমতার অস্তিত্ব অনুভব করা যেতে এখন আর তেমনটা নেই। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা এবং পরাশক্তির নির্লজ্জ আক্রমণ নীতির কারণে তুলনামূলক বিবেচনায় দুর্বল দেশগুলো এখন অনেকটাই ভীতসন্ত্রস্ত। প্রতিটি দেশের গোপন খবরই এখন মুহূর্তের মধ্যে প্রকাশিত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশকে যদি বিদ্যমান বিবেচনায় আনা যায়, তাহলে যে কেউ স্বীকার করবেন, বাংলাদেশের মত একটি রাষ্ট্র আর কতক্ষণই বা স্বকীয়তা নিয়ে টিকে থাকতে পারবে। বাংলাদেশের অবস্থা হচ্ছে, একদিকে শাসকদের জনভিত্তি নেই অন্য দিকে শাসকমহল জনতার স্বার্থ রক্ষার চেয়ে প্রতিবেশীর স্বার্থ রক্ষার্থেই অধিকতর মনোযোগী। বাংলাদেশের সামরিক শক্তি এমন কোন পর্যায় নেই যেখানে যুদ্ধ করে বা প্রতিরোধ গড়ে তুলে দীর্ঘসময় টিকে থাকতে পারবে। তবে অবশ্যই প্রত্যক্ষ প্রতিরোধের পাশাপাশি পরোক্ষ প্রতিরোধের বিষয়টি তথা জনতার প্রতিরোধকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সুতরাং আগ্রাসনের বিষয়টি কেবল প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ দিকটিও বিবেচ্য।
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিরক্ষানীতি এবং সংস্কৃতি এখন যেভাবে যে ধারায় চলছে তাতে বোধকরি কেউ এটা অস্বীকার করবে না বা করতে পারবে না যে বাংলাদেশকে তার প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ পেতে হলে একটি প্রভাব বলয় মুক্ত বাস্তবতায় যেতে হবে বা হওয়ার অনুকূলে নীতিনির্ধারণে কৌশলী হতে হবে। সোজা ভাষায়, বলতে গেলে এটা বলা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ, ভারতীয় বৈষম্যমূলক অর্থনীতির শিকার। অন্যদিকে চোরাকারবার গেড়ে বসেছে। ফলে জাতীয় অর্থনীতি চলে গেছে লুম্পেনদের হাতে-যা সমৃদ্ধির অন্তরায়। সীমান্তে চোরাকারবারিরা নিরাপদ হলেও সাধারণ মানুষের জানমাল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অন্যদিকে সীমান্ত রক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছে দেশের অভ্যন্তরে মানুষের অধিকার দমনে। সীমান্ত নিয়ে দুদেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশীদের হত্যা না করার বারবার সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ফল পাওয়া যায়নি। চীনের সাম্প্রতিক কিছুটা সহায়তার পর ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সরকারে দৌড়ঝাঁপ দেখে মনে হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে আসলে আমরা কেনি পথে? আলোচনা-সমালোচনা যাই হোক না কেন, প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, বৃহৎ প্রতিবেশী সুপ্রতিবেশী সুলভ আচরণ করতে বাংলাদেশের সাথে অভ্যস্ত নয় অথবা প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। ভারতের সাথে এ অঞ্চলের অন্য যে ক’টি দেশের সীমান্ত রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশেরই বরং তুলনামূলক বিবেচনায় বন্ধু হবার কথা ছিল। কারণ ভারত দাবী করে এবং বাস্তবতাও এই যে, ভারতীয় বাহিনী ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী পাশে দাঁড়িয়েছিল। সে কারণেই বাংলাদেশের কাছে তাদের প্রত্যাশা নাকি বেশী। কিন্তু ভারতীয়রা যে আচরণ বাংলাদেশীদের সাথে করছে তা কোন বিবেচনাতেই বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। শুধু সীমান্ত অথবা ব্যবসা-বাণিজ্যই নয় বরং যৌথ নদীর পানি আটকে দিয়ে বাংলাদেশে মরুকরণের যে প্রক্রিয়ায় ইন্ধন যোগাচ্ছে সে সব বিবেচনা করলে এটা বলা যায়, বাংলাদেশ সমৃদ্ধি অর্জন করুক এটা ভারতীয় নীতি কৌশলের অংশ নয়। সে কারণেই বাংলাদেশকে যদি শক্তি-সামর্থ্যে ভারতের সমান হতে হয় বা হওয়া সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ-ভারত নীতিতে ভারসাম্য আসবে। যেমনটা চীন ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ভারতীয় নীতি।
ঐতিহাসিক বিচারে বাংলাদেশ আপন বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বল। পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিশেষ করে ভারত শাসিত পশ্চিমবাংলার নাগরিকদের ভাষা বাংলা হলেও আমাদের সাথে তাদের মনমানসিকতা মেধা, মনন, চিন্তা ও চেতনার সূত্র উৎসে বৈপরিত্য রয়েছে। এর কারণও ঐতিহাসিক। বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে প্রকৃতপক্ষে বর্ণবাদ, ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার নিষ্পেষণে নির্যাতিত শ্রেণীর ইসলামী সাম্যবাদী পতাকাতলে আশ্রয় গ্রহণের মধ্যদিয়ে। অন্যদিকে নির্যাতনকারী শ্রেণীর ছায়া হিসেবে রয়েছে পশ্চিমবাংলা এবং ভারত। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য যারা প্রাণ বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি তাদের উত্তরাধিকারীরাই দুই বাংলার মিলিত স্বাধীন বা স্বতন্ত্র বাংলা গঠনের বিরোধিতা করেছিলেন ’৪৭ সালে। এরাই হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে হিন্দু বাংলা গড়ার যে কংগ্রেসীয় প্রস্তাব করেছিল সেটাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাই প্রকৃত বাংলাদেশ। মুসলিম সংস্কৃতির প্রাধান্য বর্তমান সময়ে নানামাত্রিক আলোচনার সূত্রপাত করেছে। একথা বলা অনূচিত নয় যে, সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতিফলনই হচ্ছে ভাষার শব্দ সম্ভার। সে কারণেই বাংলাভাষার প্রতি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানীদের যতটা দরদ ছিল তার আংশিক যদি পশ্চিম বাংলার বাঙালিদের থাকত তাহলে তারা হিন্দিসহ অন্য ভাষার আগ্রাসন রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ হতো। বাংলা সংস্কৃতি রক্ষায় চেতনাসমৃদ্ধ হত। প্রসঙ্গ উত্থাপনের কারণে যে, অনেকে এখন যখন ’৪৭-এর ভারত বিভাগ ভুল বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের কথার সত্যতা যদি মেনে নিতে হয় তাহলে বাস্তবতা হলো এই যে, স্বাধীন বাংলার কোন অস্তিত্ব থাকত না। সে অর্থে বাংলা ভাষারও কোন আলাদা পরিচিতি থাকত না। বিবেচ্য হচ্ছে, যারা এই ভাষার স্বাধীন মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের এই অবদানের কোন সুযোগই থাকত না। সুতরাং বাংলাভাষাকে বিশ্বের দরবারে মহীয়ান করতে আমাদের উপরই দায়িত্ব বর্তিয়েছে ভাষার অগ্রযাত্রা নির্বিঘœ করার। এই দায়িত্ব পালনের চিন্তা থেকেও বলা যায়, বাংলাদেশ যদি স্বকীয় মর্যাদায় নিজের অবস্থান তুলে ধরতে না পারে একটি মর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে তাহলে পৃথিবীর অন্যতম আধুনিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে বিশ্বের দরবারে টিকিয়ে রাখা যাবে না। এবাওে দেশের মিডিয়াগুলো নতুন বাস্তবতার সম্মুখীন। মিডিয়াগুলো স্পষ্টতই বলছে তারা সরকারি নীতির কারণে বৈষম্যেও শিকার। দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষা করা না গেলে জাতীয় বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ সম্ভব নয়।  কোন জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলার অর্থই হচ্ছে স্বাধীণতা বিলুপ্ত বা পদানত হওয়া। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্যদিয়ে যে আত্মশক্তির উদ্বোধন হয়েছেন তা কার্যকরভাবে বিকশিত করা না গেলে বিজয় দিবসের চেতনার প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন সম্ভব নয়।
ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এমন জায়গায় যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে এ অঞ্চলের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।  বাংলাদেশ যে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি রয়েছে যা মূলত মুসলমান সুফিসাধকদের দ্বারাই ছড়িয়ে পড়েছে তার নজিরও বিশ্বের জোটা ভার। বিচ্ছিন্নভাবে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা হলেও এ উদ্যোগ কখনও সফল হয়নি। বিশ্বে যারা নিজেদের মানবাধিকারের ধারক-বাহক বলে মনে করেন, নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে পরিচিত করার চেষ্টা করেন, সেসব দেশেও গত কয়েক বছর ধরে একজন মুসলমানের জানমাল যেমনি নিরাপদ নয় তেমনি একজন মুসলমানের পক্ষে অবাধ চলাফেরার সুযোগ অবারিত নয়। প্রকৃত বিবেচনায় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোন ব্যত্যয় ঘটেছে এমন উদাহরণ দেয়া যাবে না। প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবাংলায় একজন মুসলমান ছেলে উচ্চ বর্ণের এক হিন্দুর মেয়েকে বিয়ে করলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রেয়োগ করে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেশী মিয়ানমারের কথাই বলুন সেখানে নির্বিচারে রোহিঙ্গা মুসলমাদের নিধন করা হচ্ছে। এ থেকে আমাদেরও শিক্ষণীয় রয়েছে। জাতীয় সংস্কৃতি রক্ষা করা না গেলে ধর্ম পালনের স্বাধীনতাও সংরক্ষণ অসম্ভব। বাংলাদেশেও এর উদাহরণ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। বিজয় দিবসের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে বিজয় হয়েছে তা ধরে রাখতে না পারলে বোধকরি বিশ্বের এই অনন্য উদাহরণও টিকিয়ে রাখা যাবে না।
এক শতাব্দীতে আমরা দু’বার স্বাধীন হয়েছি। এই স্বাধীনতার পুরো অর্জনই রাজনৈতিক নেতৃত্বের। বহু ত্যাগ, সাধনা, মেধা মননের সমন্বয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সফলভাবে এগুতে না পারলে হয়তো কোন বিবেচনাতেই এ অর্জন সম্ভব হতো না। সহজ ভাষায় এটা বলা যায়, দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সঠিক পথে না এগুলে সার্বিকভাবে অগ্রগতি সম্ভব নয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পর বিরোধী ধারায় চলছে। এমনকি কথাবার্তাতেও রাজনৈতিক সীমা রক্ষিত হচ্ছে না। ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের আলোচনাও শুরু করা যায়নি। করা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান সম্ভব হয়নি। এই বিরোধ তৃণমূল পর্যায়ের নয়। তৃণমূলের জনগণ যারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইতিহাস, ঐতিহ্যের অনুরূপ রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিশ্বাসী তাদের বোধ বিশ্বাস কার্যত অবহেলিত। নির্বাচনী বিতর্কের জের ধরে কার্যত জাতীয় স্বাধীনতাই হুমকির মুখে পড়তে বসেছে। জাতীয় ঐক্য না থাকলে স্বাধীনতা অর্জিত হতো না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে প্রকৃত ঐক্য গড়ে তোলা না গেলে বিজয়ের আনন্দ সবার ঘরে পৌঁছে দেয়া সম্ভব নয়। এ বছর এমন এক সময় দিবস পালিত হচ্ছে যখন দেশের পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিটি বিজয় দিবসের স্বাদ আস্বাদনে জাতীয় সম্প্রীতির যে প্রসঙ্গ রয়েছে তার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক মতৈক্যের কোন বিকল্প নেই। সকলের মনে যদি এ বিষয়টি কার্যকর হয় তাহলেই বিজয়ের আনন্দ সবার ঘরে পৌঁছে যেতে পারবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিজয়

১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন