Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রেসিডেন্টের উদ্যোগ সফল হোক

সম্পাদকীয়-১

| প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আজ বিকেলে বঙ্গভবনে যাচ্ছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। ১০ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের মতে, তারা নিরপেক্ষ, শক্তিশালী ও সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছেন। তারা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন থেকেই তা আঁচ করা যাবে। বিএনপি মনে করে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার কৃতকর্মের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণরূপে জনগণের আস্থা হারিয়েছে। অনুরূপ কোনো নির্বাচন কমিশন গঠন করলে নির্বাচন কখনোই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণের আস্থাও সেই নির্বাচন কমিশনের ওপর থাকবে না। গণপ্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন সম্ভবপর করে তুলতে হলে এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, যা হবে স্বাধীন, দলনিরপেক্ষ, শক্তিশালী ও সাহসী। উল্লেখ করা যেতে পারে, বিএনপি এখন আর নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের ওপর খুব জোর দিচ্ছে না। সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এর আগে দলের তরফে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ বিষয়ে ১৩ দফার একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন। এ প্রস্তাবের আলোকে সকলের কাছে গ্রহণীয় একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেই দলটি সন্তুষ্ট থাকবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এ নিয়ে দলের তরফে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার যে প্রস্তাব দেয়া হয়, তার প্রেক্ষিতেই আজকের আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জানা গেছে, প্রেসিডেন্টর সঙ্গে আলোচনায় দলটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবির পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সার্চ কমিটি গঠনের কথাও বলবে এবং সার্চ কমিটির জন্য কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের নামও প্রস্তাব করবে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হয়ে যাবে। তার আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেহেতু বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার মেয়াদকালে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচন পরিচালনায় তার সক্ষমতা, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা প্রদর্শনে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে সুতরাং স্বাধীন, দক্ষ, শক্তিশালী, সাহসী ও দলনিরপেক্ষ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিকল্প নেই। সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত। তিনি কাক্সিক্ষত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন। ‘সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা’র কথা এ জন্য বলা যে, প্রধানমন্ত্রীর  পরামর্শ ছাড়া স্বাধীনভাবে ও একক সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্টের পক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা সম্ভব নয়। সংবিধানে সে সুযোগ নেই। এরপরও  মনে করা হয়, রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে প্রেসিডেন্ট এ ক্ষেত্রে তার প্রভাব রাখতে পারেন। এই বিবেচনা থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নির্বাচন  কমিশন গঠন বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে সংলাপ বা আলোচনার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। প্রেসিডেন্ট এই আহ্বানে সাড়া দিয়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং আজ থেকেই সেই আলোচনার শুরু। এখানে বিশেষভাবে বলা দরকার, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও প্রেসিডেন্টের এই উদ্যোগ সমর্থন করেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি আলোচনা করবেন। আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তিনি যেভাবে চাইবেন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। আমরা সেটা মেনে নেব।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর আলোচনার গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রকারান্তরে প্রেসিডেন্টের ওপরই দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা ও প্রভাব যদি এ ক্ষেত্রে না খাটানো হয়, তবে এই আলোচনার মাধ্যমেই একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হতে পারে। এ ব্যাপারে সব দলের বিশেষ করে দুই বৃহৎ দলÑ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সহযোগিতা একান্তভাবেই কাম্য। আমরা জানি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ জিল্লুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। সে আলোচনার ফলাফলও আমরা জানি। শেষে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন তিনি। তার গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে এখানে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন নেই। শুধু এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, এ রকম দুর্বল, অদক্ষ, নতজানু ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের ইতিহাসে আর একটিও গঠিত হয়নি। অতীতের এই অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদকে অবশ্যই সফল হতে হবে। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক বন্ধ্যাত্ম কেটে যাওয়ার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সে সম্ভাবনাকে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই কাজে লাগাতে হবে। আমরা কায়মনোবাক্যে প্রত্যাশা করি, প্রেসিডেন্ট সফল হোন। তার উদ্যোগ-আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা ফলপ্রসূ হোক। একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সেই নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অচলাবস্থার অবসান ঘটুক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন