Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমনের বাম্পার ফলন: খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাত এবং অনাবৃষ্টির কারণে এবার আমন ধানের উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। কোনো কোনো অঞ্চলে কৃষকরা বেশ দেরিতে চাষ শুরু করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পেছনে ফেলে কৃষকরা ফসল ফলিয়েছে। দেশের সর্বত্রই এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠে মাঠে সোনালী ফসল দেখা যাচ্ছে। রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, নাটোর, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার মাঠে মাঠে এখন সোনালী ফসলের ঢেউ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধান কাটাও শুরু হয়েছে। এক তৃতীয়াংশ ধান কাটা হয়েছে। অচিরেই পূর্ণদ্যোমে ধান কাটা শুরু হবে। এবার আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ২২০ টন। আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। এটি দেশের জন্য সুসংবাদ। অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, অনুকূল আবহাওয়া এবং সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রণোদনা ও সময়মতো সার সরবরাহ করায় এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

বিশ্বে খাদ্যসঙ্কটের পূর্বাভাস আগে থেকেই দেয়া হয়েছে। দুর্ভিক্ষ হতে পারে এমন বার্তাও জাতিসংঘ থেকে দেয়া হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যসশ্য উৎপাদনকারী ইউক্রেন নিষেধাজ্ঞার কারণে তার উৎপাদিত ফসল পুরোপুরি রফতানি করতে পারছে না। গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত দেশটি ১ কোটি টন শস্য রফতানি করতে পেরেছে, যা তার রফতানি লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ। এর ফলে বিশ্বে খাদ্যসঙ্কটকে তীব্র করে তুলছে। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, আমাদের দেশও খাদ্য ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগামী বছর দেশে খাদ্যসঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে বলে সকলকে সতর্ক করেছেন। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তিনি প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার তাকিদ দিয়েছেন। কৃষিমন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অধিদফতরকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সরকারি যেসব জমি পতিত অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোতে ফসল ফলানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রেলওয়ের জমি থেকে শুরু করে অন্যান্য সংস্থার অধীন চাষের উপযোগী জমিতে আবাদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির এ উদ্যোগ সময়োপযোগী এবং খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। আমনের টার্গেট পূরণ হবে না বলে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, আল্লাহর বিশেষ রহমতে তা কেটে গেছে। বিশ্বে যখন খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন ব্যাহত হচ্ছে, তখন দেশে আমনের বাম্পার ফলন কিছুটা হলেও স্বস্তির বিষয়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত ফসল যদি বিদেশে রফতানি করা যায়, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা যাবে। এদিকে আমন ধান ঘরে তোলার পাশাপাশি বোরো উৎপাদনেরও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কৃষকরা বীজতলা তৈরি ও জমি প্রস্তুত করা শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে, বোরো মৌসুমেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। বলা বাহুল্য, আমাদের দেশের কৃষকের খাদ্য উৎপাদনের স্পৃহা চিরন্তন। তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে উৎপাদন করে থাকে। এক্ষেত্রে উৎপাদন উপকরণÑ বীজ, সার ও সেচের সুবিধা অবারিত থাকলে উৎপাদনের হারও বেড়ে যায়। এবারের আমনের বাম্পার ফলনের ক্ষেত্রে তা পরিলক্ষিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও অনাবৃষ্টির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অদম্য স্পৃহার কারণেই তাদের এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

উৎপাদিত আমন ধান সংগ্রহে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। এটাও খেয়াল রাখতে হবে, কৃষক যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায়। প্রায় প্রতিবছরই কৃষক উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ কৃষক ফসল সড়কে ফেলে প্রতিবাদ করে। খাদ্যসঙ্কটের এই সময়ে যাতে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতে হবে। আসন্ন বোরো মৌসুমে কৃষক যাতে সময়মতো সার, বিদ্যুৎ, সেচ সর্বোপরি নগদ আর্থিক সহায়তা পায়, এ ব্যাপারে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এবারের আমনের বাম্পার ফলন এবং আসন্ন বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ফসলের সমন্বয়ে দেশে বড় ধরনের খাদ্য মজুদের আশা রয়েছে। এ আশা বাস্তবায়ন করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন