Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আজানের কথা

মুস্তাফিজুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার। আজানের সূচনা ধ্বনি। প্রতিদিন আমরা পাঁচবার এ আজান ধ্বনি শুনে থাকি। আজান ধ্বনিগুলোর অর্থ সবাই না বুঝলেও এ কথা সবাই বুঝে যে, এখন নামাজের সময় হয়ে গেছে। একটু পরেই জামাত শুরু হবে। তথাপি আজানের রয়েছে গুঢ় অর্থ ও মর্ম।

দুনিয়াতে অনেক কিছুই আছে বড়। রয়েছে বড়ত্বের অহমিকা ও দম্ভ। কিন্তু আল্লাহর বড়ত্ব সব কিছুকে ছাপিয়ে। দুনিয়াতে কোনো কিছুকে বা কাউকে বড়ত্ব তিনিই দান করেন। মহামহীম সেই আল্লাহর মহিমা ও বড়ত্ব দিয়ে সূচনা হয় আজান-ধ্বনির। মানুষ যেন বিনয়াবনত হয় আল্লাহর বড়ত্বের কথা ভেবে। এরপর রয়েছে তাওহীদের সাক্ষ্য। তাওহীদের বিশ্বাস মানুষকে করে দেয় সবচে দামি, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী।

এরপর আজানের ধ্বনিতে রয়েছে রিসালাতের সাক্ষ্য। রিসালাতের সাক্ষ্য ছাড়া তাওহীদের সাক্ষ্য অর্থহীন। উভয় সাক্ষ্য মিলে ঈমান পূর্ণ হয়। রিসালাতের সাক্ষ্য আমাদের এই বার্তাই দেয় যে, পৃথিবীর অন্য কোনো পথ ও মতে প্রকৃত সফলতা ও কামিয়াবী নেই। দৃশ্যত যতই তা যুক্তিযুক্ত ও হৃদয়গ্রাহী হোক না কেন। সুতরাং রাসূলের অনুসরণই আমাদের শিরোধার্য।

উপরন্তু এতে আরো রয়েছে নামাজ ও কল্যাণের দিকে আহ্বান। তাওহীদ ও রেসালাতের পরই নামাজের স্থান। হযরত উমর (রা.) বলেছেন, আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নামাজ। আজানের শব্দ বিন্যাসেও সেই ধারাক্রম রক্ষা করা হয়েছে।
কল্যাণ-গ্রহণ মানুষের স্বভাবজাত প্রেরণা। কিন্তু তাওহীদ, রিসালাত ও নামাজের কল্যাণের দিকে আহ্বান এই তাৎপর্যই বহন করে যে, জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণ আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশনার মধ্যেই নিহিত। শুধু নিজস্ব মেধা ও বোধ-বুদ্ধি এ ক্ষেত্রে বিচার্য নয়।

তারপর আজানের শব্দে পুনরায় এসেছে আল্লাহর বড়ত্বের উচ্চারণ। মানুষ যেন কখনোই অহংবোধে পতিত না হয় সেজন্যে আল্লাহর বড়ত্বের কথা বারবার। অহমিকা এতই জঘন্য যে, তা মানুষকে সত্য গ্রহণে বাধা প্রদান করে।
অবশেষে তাওহীদের বাণী পুনঃউচ্চারণের মধ্য দিয়ে আজান শেষ হয়। মানুষ যেন সর্বদাই তাওহীদের বিশ্বাসে অটল থাকে। তাওহীদের বিশ্বাস নিয়েই যেন তার জীবনের শুভ সমাপ্তি ঘটে।

আজান ইসলামের একটি শিআর বা অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ নিদর্শন। শিআরের গুরুত্ব স্বীকৃত। ইসলামের শুরুর দিকে মুমিনদের কীভাবে নামাজের জন্য একত্র করা হবে- এ বিষয়ে আল্লাহর রাসূল (সা.) সাহাবীদের নিয়ে পরামর্শ সভা করেছেন। বিভিন্ন সাহাবী বিভিন্ন রকম মত দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল নানা কারণে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় সেসব মত খণ্ডন করেছেন। অবশেষে জিবরীল (আ.)-এর মাধ্যমে স্বপ্নযোগে এক সাহাবী আজানের শব্দগুলো জানতে পারলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে তা সমর্থন করলেন। তো আজানের কালিমাগুলো সম্পূর্ণরূপে ঐশী নির্দেশনাপ্রসূত। এবং আল্লাহর রাসূল কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। আজান কতটা গুরুত্ববহ- আজানের শুরুতেই তা স্পষ্ট।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যদি আজান ও প্রথম কাতারের ছাওয়াবের কথা জানতো তাহলে লটারি করে হলেও তা অর্জনের চেষ্টা করত। (সহীহ বোখারী : ৬১৫, ২৬৮৯)। হযরত মুআবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সুদীর্ঘ গ্রীবার অধিকারী হবে মুয়াজ্জিনগণ। (সহীহ মুসলিম : ৩৮৭)। অন্য হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছাওয়াবের প্রত্যাশায় সাত বছর আজান দিবে তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি লেখা হবে। (জামে তিরমিজি : ২০৪)। এছাড়াও আজানের অনেক ফজিলত হাদীসে বিবৃত হয়েছে, যা আজানের গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে দেয়।



 

Show all comments
  • MD Tuhin ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৪৭ এএম says : 0
    মহিমান্বিত কিছু শব্দমালার নাম আজান। এই আজানের ভেতর লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৪৮ এএম says : 0
    আজানের বাক্যসংখ্যা ১২, আর বছরের মাসের সংখ্যাও ১২। এর দ্বারা বোঝা যায়, মুমিনের জন্য ১২ মাসই নামাজ ফরজ। পুরো আজানের মধ্যে ঘুরেফিরে যে কয়টি অক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে তার সংখ্যা ১৭—
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৪৮ এএম says : 0
    আজানের শুরু হয় ‘আল্লাহ’ শব্দ দিয়ে। আবার শেষও হয় ‘আল্লাহ’ শব্দ দিয়ে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা বহন করে যে আল্লাহই শুরু, আল্লাহই শেষ। আল্লাহর বিকল্প কিছু হতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন