Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশ-ভারত পর্বত প্রমাণ বাণিজ্য বৈষম্য

প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন যে, দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের মধ্যে প্রতিবেশী ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে ৫ হাজার ৮১১ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। পক্ষান্তরে ৫২৭ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। অর্থাৎ ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৫ হাজার ২৮৪ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোটির হিসাবে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ৫৮২ কোটি ডলার আর ভারতে বাংলাদেশে রফতানির পরিমাণ মাত্র ৫৩ কোটি ডলার। ১০ বছর আগে ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ঘাটতি ছিল ১৬০ কোটি ডলার। ১০ বছরে এই ঘাটতি বেড়েছে ৪২২ কোটি ডলার। অর্থাৎ বিগত ১০ বছরে ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে টাকার হিসাবে ৪১ হাজার কোটি টাকা। ২ সপ্তাহ আগে একটি বাংলা সহযোগী জানিয়েছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আট বছরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় চার গুণ। ক্রমেই বাংলাদেশের প্রতিকূলে যাচ্ছে বাণিজ্যিক ভারসাম্য। বাংলাদেশ ব্যাংক ও রফতানি  উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, একবছরের ব্যবধানে ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘটতি বেড়েছে ৩৩.৭৬ শতাংশ। যদিও এ সময়টায় ট্রানজিট থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করার সুযোগসহ অনেক কিছু পেয়েছে ভারত। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক কেবলই দেয়ার। পত্রিকাটির ভাষায়, মনে হয়, ত্যাগেই আনন্দিত এ দেশের সাধারণ মানুষ ও নীতি-নির্ধারকেরা।
অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। একটু আগে বলা হয়েছে যে, বাণিজ্য ঘাটতি ভয়াবহ রূপে বেড়েছে বিগত ১০ বছরে। এর মধ্যে জেনারেল মঈন উদ্দিন ফখরুদ্দিন সরকারের ২ বছর এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ৭ বছর,  মোট ৯ বছর। এই ৯ বছরে, বিশেষ করে বিগত ৭ বছরে বাংলাদেশ ভারতকে শুধুই দিয়েছে। বিনিময়ে অনেক কিছু পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিছুই পায়নি। ৬৭ বছর আগে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ভারত সাবেক পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশের নিকট থেকে যতকিছু চেয়েছে, বিগত ৭ বছরে তার সবকিছুই পেয়েছে। বাংলাদেশের নিকট থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো বহুমুখী ট্রানজিট তথা করিডোর সুবিধা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭টি রাজ্যে বিদ্রোহ দমনে বাংলাদেশের সক্রিয় সহায়তা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহ দমনে বাংলাদেশের সক্রিয় সহায়তা। ১৯৪৭ সালের পর থেকেই উত্তর-পূর্ব ভারতের এই ৭টি রাজ্য স্বাধীন হওয়ার জন্য প্রথমে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে এই আন্দোলন সশস্ত্র তৎপরতায় পর্যবসিত হয়। এই সশস্ত্র তৎপরতার জন্য ভারতকে ৩ থেকে ৪  লাখ সৈন্য এই অঞ্চলে মোতায়েন রাখতে হয়। বিশ্বশক্তি হওয়ার পথে এটি ছিল ভারতের জন্য একটি বড় অন্তরায়। পশ্চিম দিকে পাকিস্তান এবং উত্তর-পূর্ব দিকে ৭ প্রদেশÑ এই দু’টি অঞ্চলকে বৈরী রেখে ভারতের পক্ষে পরাশক্তি হওয়া সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারের সক্রিয় সহায়তায় বিচ্ছিন্নতাবাদ নিয়ন্ত্রণে আসায় এই অঞ্চল থেকে ভারত টেনশন মুক্ত হয়েছে। এটি ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় পাওনা। এ দু’টি সুবিধা ছাড়াও বিগত ৭ বছরে বাংলাদেশ ভারতকে দিয়েছে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুবিধা। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, কক্সবাজারের অদূরে সোনাদিয়ায় গণচীন কর্র্তৃক যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথা ছিল সেটি পরিত্যক্ত হয়েছে। তার পরিবর্তে এখন নাকি পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হবে এবং সেই নির্মাণ কাজ নাকি বাস্তবায়ন করবে ভারত।
ভারতকে এত কিছু দেয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা এবং শুল্ক, আধাশুল্ক এবং অশুল্ক প্রাচীর অপসারণ করে বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস। সীমান্তে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনী বিএসএফ নির্বিচারে গুলি করে বাংলাদেশীদেরকে মারছে। এই হত্যাকা- বন্ধ করার জন্য ভারতের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দও কথা দিয়েছিলেন। ভারত এসব কোনো ওয়াদাই বাস্তবায়ন করেনি এবং বাংলাদেশও এত কিছু দেয়ার বিনিময়েও কিছুই পায়নি। তিস্তা থেকে বাংলাদেশ এক কলসি পানিও আনতে পারেনি। উপরন্তু গঙ্গাচুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের যতটুকু পানি পাওয়ার কথা ছিল এখন বাংলাদেশ তার অনেক কম পানি পাচ্ছে। ভারতের মত বিশাল দেশে বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যের পরিমাণ সীমিত। তারপরেও যে পরিমাণ পণ্য ভারতের আমদানি করার কথা ছিল সেই পরিমাণ পণ্য তারা আমদানি করেনি। ট্রানজিট দেয়ার সময় বাংলাদেশের একশ্রেণীর ভারতপ্রেমী ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও পলিটিশিয়ান কত রঙিন স্বপ্ন দেখিয়েছেন। বলেছেন যে, ট্রানজিট দিলে নাকি বাংলাদেশের পণ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭টি রাজ্যের বাজার সয়লাব হয়ে যাবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের বাজার ভারতের পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। বাণিজ্য ঘাটতির যে পরিমাণ বাণিজ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদে পেশ করেছেন, এটি তো শুধু বৈধপথে আমদানি-রফতানির ঘাটতির চিত্র। অবৈধ অর্থাৎ চোরাচালানের মাধ্যমে এর চেয়ে ৪ গুণ পণ্য ভারতে থেকে আমদানি হয়। ভারতকে সুবিধা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ একাধিক সীমান্ত পয়েন্টে সীমান্তহাট খুলেছে। সেখানে বাংলাদেশী পণ্যের বিকিকিনি খুব বেশি হচ্ছে বলে শোনা যায় না। বরং সেখানেও ভারতীয় পণ্যের ছড়াছড়ি। বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো ভারতীয়রা সীমান্তে তাদের পণ্য ডাম্প করছে। এই পাহাড় প্রমাণ বাণিজ্য ঘাটতি রোধ করতে হলে লেজুড়বৃত্তি করে সেটি দূর করা যাবে না। এ জন্য বাংলাদেশের যে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল সেগুলো আদায় করতে হবে। বাংলাদেশের মনোভাব হতে হবে, বকশিস চাই না, হিসাবের পাওনা চাই।



 

Show all comments
  • সান্তানুর রহমান খোকন ৪ জুলাই, ২০২০, ১:৩২ পিএম says : 0
    নেপালের মতো দেশও তাদের জাতীয় স্বার্থে ভারতের চোখে চোখ রেখে চলেছে সেখানে আমরা এতো বেশী ধামাধরা যে আমাদের পরনের কাপড় নিয়ে টানাটানি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ-ভারত পর্বত প্রমাণ বাণিজ্য বৈষম্য
আরও পড়ুন