Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তিরক্ষা মিশনে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকান্ড বরদাশত করা হবে না : সেনাবাহিনীকে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৫ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের সুনাম সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সরকার এক্ষেত্রে কোনো রকম অনাকাক্সিক্ষত কর্মকা- বরদাশত করবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ক্ষুণœ হয় এমন কোনো অনাকাক্সিক্ষত কর্মকা- আমরা বরদাশত করব না। তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম অক্ষুণœ থাকবে। যে যেখানেই নিয়োজিত থাকুন না কেন নিজেদের দায়িত্ব মর্যাদার সঙ্গে পালন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) ২০১৫-’১৬ কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে এই অনুষ্ঠানে তিনি গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন। ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের কমানডেন্ট মেজর জেনারেল সাজ্জাদুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত সদস্যদের সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনোভাবেই সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও অনেক সুনাম কুড়িয়েছে, যা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষার পাশাপাশি কর্মরত দেশগুলোতে গণতন্ত্রের বিকাশ, আর্থ-সামাজিক, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও পুনর্গঠনে ব্যাপক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে সেনা সদস্যদের সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি দেশপ্রেমিক এই বাহিনী সিডর ও আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিসংযোগ ও রানা প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।
দেশে বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে আমরা সমুদ্রসীমা বিজয় অর্জন করেছি। ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় ও স্থলসীমানা নির্ধারিত হয়েছে। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে।
তিনি বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর তার সরকার এখন জনগণের পুষ্টিচাহিদা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। বাজেটের শতকরা ৯০ ভাগ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। জীবনমানের পরিবর্তনের ফলে ৫ কোটি মানুষ নি¤œআয় থেকে মধ্যবিত্তে উন্নীত হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে এ বছর বিনা মূল্যে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭২টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ (২০০৭ সাল) থেকে বর্তমানে ২০.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। দেশে এখন সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তার নেতৃত্বাধীন ৯৬ মেয়াদের সরকার দেশে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশে রেখে যাওয়ার পরও বিএনপি-জামায়াত সরকার ৫ বছরে এই হার বাড়ানোর পরিবর্তে উল্টো ৪৫ শতাংশে নামিয়ে আনে এবং খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশকে আবারও খাদ্য ঘাটতিতে নিয়ে যায়।
দেশে বর্তমান মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগই অতীতের সকল আন্দোলন, সংগ্রামে বিজয় ও কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের কা-ারি ছিল এবং আগামীতেও আওয়ামী লীগই অর্থনৈতিক মুক্তির দিশারী।
তিনি বলেন, বিশ্বে মোট শান্তিরক্ষীর ১০ জনের ১ জন বাংলাদেশের। ১৯৮৮ সালে এ মিশন শুরুর প্রথম বছর ‘পর্যবেক্ষক’ থেকে পরে পরিচালিত মোট ৬৬টি মিশনের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৫টিতে অংশ নেয়। বর্তমানে পরিচালিত ১৬টি মিশনের ১১টিতে বাংলাদেশের ৮ হাজার ৫০১ শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন ।
সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের জাতীয় সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনী স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় ক্ষমতা কাঠামোর অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান।
জাতির পিতা এই উপলব্ধি থেকে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সুশৃঙ্খল ও পেশাদার একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় ।
সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণে সরকার ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে, একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্টাফ কলেজের বহুতল একাডেমিক ভবনসহ আরও কিছু উল্লেখযোগ্য স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, যা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।
এ বছর মোট ১১ জন মহিলা অফিসার এই কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছর মহিলা অফিসারদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ বর্তমান সরকারের ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ নীতির সাফল্যের আরেকটি স্বাক্ষর। গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের সহধর্মিণীগণ প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন গঠনমূলক সামাজিক কর্মকা-ে অংশ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রশংসা করে বলেন, ‘পিএসসি’ ডিগ্রি অর্জনকারীদের স্ত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং উৎসাহের ফলে আজ গর্বিত মিরপুরিয়ান।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারী সৈনিকদের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে তার সরকারই প্রথম বারের মতো সেনাবাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বক্তৃতার শুরুতেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে জীবন দানকারী বাংলাদেশের ১২৮ বীর সৈনিককে স্মরণ করেন। তিনি স্বজন হারানো পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এছাড়া, ব্রাজিল, চীন, মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিয়েরালিওন, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তানজানিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাম্বিয়ার ৬৭ জন কর্মকর্তা এ বছর এই কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
এই কোর্সে গ্র্যাজুয়েশন করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫৮, নৌবাহিনীর ২৩ ও বিমানবাহিনীর ২০ জন এবং ব্রাজিল, চীন, মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিয়েরা লিয়ন, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র ও জাম্বিয়ার মোট ২৬৮ জন অফিসার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সনদ নেন।  
বিদেশী অফিসারদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ট্র্যাক থ্রি ডিপ্লোমেসির এই যুগে পিএসসি ডিগ্রি অর্জনকারী বিভিন্ন দেশের সেনা সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ভাববিনিময়, একে অন্যের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং কোর্সে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কৃতির সংহতি ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।    
বিভিন্ন খাতে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আমাদের দেশ। আমরা রক্ত দিয়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছি। আমরা কারও কাছে মাথা পাতব না। আমার কাছে দেশের মর্যাদা অনেক। আমরা কারো কাছে হেয় হতে চাই না। সেজন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শান্তিরক্ষা মিশনে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকান্ড বরদাশত করা হবে না : সেনাবাহিনীকে প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ