Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সমবায় অধিদপ্তরে দুর্নীতি ও একজন বাবলা দাশ গুপ্ত

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

উৎপাদনশীলতা ও সামাজিক উন্নয়ন-অগ্রগতির মাধ্যমে সমৃদ্ধ দেশ গঠনে রাষ্ট্রের অঙ্গিকারে পালন সমবায় অধিদপ্তর অনুঘটকের ভ’মিকা পালন করার কথা। কিন্তু সমবায় অধিদপ্তর সে দায়িত্ব কতটা পালন করতে সক্ষম হচ্ছে, তার যথাযথ মূল্যায়ণ হচ্ছে না। সত্তুরের দশকের শেষদিকে শুরু হওয়া জোরদার সমবায় আন্দোলন দেশের কৃষি ও ক্ষুদ্রশিল্পে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল তা অব্যাহত থাকলে দেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাশাপাশি সমবায় মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের দুর্নীতি-অস্বচ্ছতার কারণে সমবায় আন্দোলন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে। সেখানে সমবায়ের নামে যৌথ সম্পদের লুটপাট, অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠিত অনেক সমবায় সমিতির পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। সমবায় সমিতিগুলো বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা পরিচালিত হলেও অস্বচ্ছতা ও আইনের ফাঁক-ফোঁকড় গলিয়ে যৌথ সম্পদের তছরুপ ও অপব্যবহারের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব অপকর্মের সাথে সমবায় অধিদপ্তরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো অনুসন্ধান ও জবাবদিহিতা না থাকায় সমবায় অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে যাওয়ার তথ্য প্রায়শ গণমাধ্যমে উঠে আসছে।

গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সমবায় অধিদপ্তরের একজন উচ্চমান সহকারীর দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থলোপাট করে বিপুল বিত্ত-বৈভব ও বিদেশে অর্থপাচারের ঘটনা উঠে এসেছে। সমবায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত উচ্চমান সহকারী বাবলা দাশ গুপ্ত’র নিয়োগ বাণিজ্য ও প্রভাবের যে চিত্র এই রিপোর্টে পাওয়া গেছে তা অভাবনীয়, অকল্পনীয় বটে। দেড়শতাধিক নিকটাত্মীয় ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে ৫ শতাধিক লোককে সমবায় অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা অফিসে চাকরি দেয়ার কৃতিত্ব বাবলা দাশ গুপ্তের। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চলা নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অনেকগুলো ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি, মার্কেটসহ দেশে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ছাড়াও সেকেন্ড হোম ভারতেও রয়েছে বাড়ি ও ফ্ল্যাট। বাবলা দাশের দুর্নীতি ও সম্পদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) এরই মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানা যায়। বাবলা দাশের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া দেড় শতাধিক নিকটাত্মীয়র নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে যে তথ্য ইনকিলাবের অনুসন্ধানী রিপোটে উঠে এসেছে, তা’ এ দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির একটি ‘টেক্সটবুক এগ্জাম্পল’ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। বিভিন্ন সরকারি দফতর-অধিদপ্তরে বাবলা দাশের মত ব্যক্তিরা জনগণের সম্পদ লুন্ঠন করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিচ্ছে।

এই সরকারের প্রথম ১০ বছরে ব্যাংক ও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার হালদারের ১১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার সাম্প্রতিক অর্থ কেলেঙ্কারির অন্যতম। অবশেষে পিকে হালদার ভারতীয় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সেখানে বিচারের আওতায় রয়েছেন। তবে তার দ্বারা লুণ্ঠিত অর্থ ফেরত আনার কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এ সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাক থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংঘটিত ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির সাথে এস কে সুর চৌধুরি, পিকে হালদারসহ একটি প্রভাবশালী চক্রের যোগসাজশ খৃুঁজে পাওয়া যায়। তারা বাংলাদেশ থেকে অর্থ লুন্ঠন করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। বাবলা দাশ গুপ্ত সমবায় অধিদপ্তরের বড় কোনো কর্মকর্তা নন। একজন উচ্চমান সহকারী মাত্র। অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে নিয়োগ. পদায়ণ ও বদলি বাণিজ্যে তার এমন প্রভাবের নেপথ্য শক্তি কে বা কারা, তা খুঁজে বের করা জরুরি। সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তরুন কান্তি শিকদার, সমবায় উপমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সচিব মশিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার দায় এড়াতে পারেন না। বাবলা দাশ গুপ্তের মত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বিভিন্ন সরকারী অফিসে দুর্নীতি-লুটপাটের মৌরসি পাট্টা খুলে বসেছেন। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। দুদকের নাম কা ওয়াস্তে অনুসন্ধানের পর দায়মুক্তির ধারাক্রম বন্ধ করতে না পারলে সরকারি অফিস ও প্রভাবশালী মহলের দুর্নীতি, অর্থ-লুটপাট ও পাচার বন্ধ করা অসম্ভব। দেশের মেধাবি তরুণরা ভাল ফলাফলসহ উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট নিয়েও যখন চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে, তখন বাবলা দাশ গুপ্তরা অন্ধকার পথে শত শত নিকটাত্মীয় ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে অযোগ্য, অদক্ষদের সরকারি দফতরে চাকরি দিয়ে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করছেন। সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন