Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকার রাস্তায় লক্কড়-ঝক্কড় বাস

ফিটনেস সার্টিফিকেট না পেয়ে অবাধে চলছে : সাড়ে ৩ হাজারের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অবৈধ

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : চলাচলের জন্য ‘ফিট’ নয়। নেই ফিটেনস সার্টিফিকেট। তারপরও ঢাকার রাজপথে চলছে কয়েক হাজার ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কর বাস-মিনিবাস। রুট পারমিট না থাকার পরেও কয়েকশ’ বাসযাত্রী পরিবহন করে চলেছে। বিআরটিএ সূত্র জানায়, গত তিন মাস যাবত বিআরটিএ ত্রুটিযুক্ত কোনো গাড়িকে রুটপারমিট দেয়নি। ঢাকায় সহস্রাধিক বাস-মিনিবাসের ফিটনেসের মেয়াদ এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে ফিটনেস সার্টিফিকেট মেলেনি। বিআরটিএ-তে কম্পিউটারাইজড ফিটনেস মেশিন বসানোর পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই বলে সেগুলোর চলাচল কিন্তু বন্ধ নেই। সবই সদর্পে চলছে ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে। আলাপকালে কয়েকজন বাস মালিক জানান, বিআরটিএ ফিটনেসের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করার পর ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই চলছে কয়েক হাজার বাস ও মিনিবাস। এর মধ্যে ১৫ বছরের পুরাতন থেকে শুরু করে এক বছরের নতুন বাসও আছে। বিআরটিএর সচিব মুহাম্মদ শওকত আলী ইনকিলাবকে বলেন, আনফিট গাড়ি যাতে চলাচল করতে না পারে, সে জন্য বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। এর বাইরে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব এগুলোকে চলতে না দেয়া।   
পরিবহন মালিক সমিতির হিসাব মতে, ঢাকায় ১৯৩টি বাস রুটে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এর মধ্যে সহস্রাধিক বাস ১৫ বছরের পুরনো। সেগুলোকে রাজধানীতে চলাচলের জন্য আর অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু ফিটনেস সার্টিফিকেট ও রুট পারমিট ছাড়াই নির্দিষ্ট রুটে যাত্রী বহন করে চলেছে। যাত্রীবাহী এসব বাস যে কেউ দেখলেই বুঝবে এগুলোর ফিটনেস নেই। জেনেশুনেই বাধ্য হয়ে যাত্রীরা এসব বাসে চড়তে বাধ্য হচ্ছে। গুলিস্তানে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রাবণ পরিবহনের বেশির ভাগ বাসের বেহাল অবস্থা।
বাসের বডির অংশ খুলে পড়ে গেছে। কোনোটার সামনের বিরাট অংশই ভাঙা। পেছনের বাম্পার খুলে ঝুলে আছে। জানালা বলতে কিছু নেই। ভেতরে বসার সিটগুলো নড়বড়ে। জোড়াতালি দিতে দিতে সিটকভারের উপর দুর্ভিক্ষের ছাপ পড়ে গেছে। তারপরেও এসব বাস শহরতলীর যাত্রী বহন করে চলেছে। জানতে চাইলে নবাবগঞ্জের যাত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, বাসগুলোর বেহাল দশা সত্ত্বেও নিরুপায় হয়ে আমরা চড়ছি। বিকল্প থাকলে চড়তাম না। এখন উপায় না পেয়ে চড়তে বাধ্য হচ্ছি। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, এরকম লক্কর-ঝক্কর বাস রাস্তায় যাতে চলতে না পারে তা দেখার দায়িত্ব তো পুলিশের। কিন্তু পুলিশ কিছু বলে না বলেই এরা আমাদের কাছে থেকে ভাড়া ঠিকই নিচ্ছে, কিন্তু সার্ভিসতো দিচ্ছে না। এটাকে স্রেফ প্রতারণা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মালিক সমিতি ইচ্ছা করলেই এসব বাস চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে। শুধু শ্রাবণ পরিবন নয়, গোটা রাজধানীতে চলাচলরত সাড়ে তিন হাজার বাসের মধ্যে দুই হাজারেরও বেশি বাসের এমন বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোম্পাানগুলো হলোÑ গাবতলী-সায়েদাবাদ রুটের ৮ নম্বর মিনিবাস, মোহাম্মদপুরের মেশকাত পরিবহন, দিশারী পরিবহন, ইউনাইটেড পরিবহন, মতিঝিল-গাজীপুরের গাজীপুর পরিবহন, তানজিল পরিবহন, মিরপুর সার্ভিস, ইটিসি ট্রান্সপোর্ট, এটিসিএল, তরঙ্গ পরিবহন, মিডওয়ে, আজিমপুরের ভিআইপি পরিবহন, মিরপুর চিড়িয়াখানা রুটের নিউভিশন পরিবহন, যাত্রাবাড়ী টঙ্গীর তুরাগ পরিবহন, সালসাবিল পরিবহন, অনাবিল পরিবহনসহ আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানী। বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব কোম্পানীর বাসগুলোর বেশির ভাগই ‘জ’ সিরিয়ালের। এগুলোর বয়স ১৫ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, গত তিন মাস যাবত বিআরটিএ এসব লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া বন্ধ রেখেছে। এখন কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে ফিটনেস টেস্ট করা হয়। সে কারণে পুরনো বাসগুলোকে আর ফিটনেস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই বলে বাসগুলো চলাচল কিন্তু বন্ধ হয়নি। মিরপুর রুটের এক বাস মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফিটনেস না পেলে কি হবে। ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে সবই চলছে আগের মতোই। আরেক মালিক বলেন, আমার জানা মতে, কম্পিউটার পদ্ধতিতে ফেল করে গত এক বছরে সাত-আটশ’ বাস ফিটনেস ছাড়াই চলাচল করছে। ওই বাসগুলোর বয়স বেশি না। এক বছর বা দুই বছর হবে। কিন্তু হেড লাইটের আলো বেশি এবং ব্রেকের অবস্থা ভালো না হওয়ায় বাসগুলো ফিটনেসে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। কিন্তু মালিকপক্ষ বাসগুলো আগের মতোই চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশকে টাকা দিয়ে। এ প্রসঙ্গে বিআরটিএর সচিব মুহাম্মদ শওকত আলী গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার পদ্ধতি আধুনিকায়ণ করা হয়েছে। এতে কাউকে আর ছাড় দেয়া হবে না। তবে ফিটনেসবিহীন বাস-মিনিবাস রাজপথে চলছে এমন তথ্যে তিনি বিস্ময় প্রকাশষ করে বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। রাস্তায় তো পুলিশ আছে। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলে কিভাবে? সচিব বলেন, কারো কাছে এই ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমাদের জানান। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
জানা গেছে, রাজধানীতে চলাচলরত  লক্কর-ঝক্কর মার্কা যানবাহনের প্রকৃত সংখ্যা কতো তার সঠিক হিসাব বিআরটিএ-তে  নেইই। তবে গত বছর আগস্ট মাসে অভিযান শুরুর পর ফিটনেস করানো এবং অভিযানে আটক গাড়ির সংখ্যা হিসাব করলে এ সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি হবে। এক বছর আগে হাইকোর্ট যখন ফিটনেসবিহীন মোটরযান চলাচল বন্ধের জন্য সরকারকে নির্দেশনা দেন তখন রাজধানীতে এর সংখ্যা ছিল দেড় লাখ। হাইকোর্টের নির্দেশের পর ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বিআরটিএ। মাসখানেক এই অভিযানে গতি থাকলেও পরবর্তীতে তা ঝিমিয়ে পড়ে। অভিযান শুরু হলে লক্কর-ঝক্কর মার্কা গাড়ি চলাচল আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। সে ধাক্কা সামলিয়ে এখন সেগুলো আবার রাজপথে। এসব গাড়িই রাজধানীর গলার কাঁটার মতো প্রতিনিয়ত ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে চলেছে। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলাচলের অযোগ্য এসব গাড়ি দিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছে এক শ্রেণির পরিবহন মালিক। সেবা তো দূরের কথাÑ যাত্রীরা সামান্যতম নিরাপদ নয় এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সাথে ভোগান্তি তো আছেই। এরকমের ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় চলাচলের কারণে শুধু দুর্ভোগই নয়, ক্ষতির মুখে পড়ছে ঢাকার পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্যও। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই অবাধে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চললেও নেয়া হচ্ছে না যথাযথ ব্যবস্থা।



 

Show all comments
  • সেলিম ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৩৬ পিএম says : 0
    ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছে করলে একদিনেই এগুলো বন্ধ করতে পারে।
    Total Reply(1) Reply
    • SM Hashmat Zahan ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৯ পিএম says : 4
      Mr.Salim. Thanks for your comments but how police will stop all unfit car from the city? They are..................

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকা

৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ