Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পরিকল্পিত রাজধানী চাই

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হেলেনা জাহাঙ্গীর : রাজধানী থেকে ক্রমান্বয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা। ঢাকার প্রথম পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে ভাবা হয় ওয়ারীকে। পাকিস্তান আমলে গড়ে তোলা হয় ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা। আদর্শ শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পঞ্চাশের দশকে রাজধানীর যেসব এলাকা আবাসিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল ধানমন্ডি তার অন্যতম। পরবর্তী সময়ে গুলশান, বনানী, বারিধারাকেও আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এসব এলাকা এখন আবাসিক হিসেবে চিহ্নিত করার উপায় নেই। প্রতিটি আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন স্থাপন করা হয়েছে। কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানাও। ঢাকা শহরজুড়েই এখন বাণিজ্যিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্য চলছে। যে কারণে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডিসহ আবাসিক এলাকা তার নিজস্ব চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে।
স্বাধীনতার পর গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয় ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে। ডিআইটির পক্ষ থেকে গড়ে ওঠা এসব আবাসিক এলাকার প্লট যারা পেয়েছেন তারা তাদের বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লট শুধু আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহারে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। কিন্তু এ প্রতিশ্রæতি ভঙ্গই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবাসিক এলাকায় যথেচ্ছভাবে গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। নজরদারির কেউ না থাকায় সরকারিভাবে গড়ে ওঠা প্রতিটি আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হচ্ছে।
এক সময় রাজধানীর ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমার মূল কেন্দ্র ছিল মতিঝিল-দিলকুশা এলাকা। কালের বিবর্তনে গুলশান এখন সে স্থান দখল করেছে এমনকি বিদেশিদের কাছেও এটি দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। বিলাসবহুল হোটেল, গেস্টহাউজ, বায়িং হাউস, ট্রাভেল এজেন্সি, জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, বিপণি বিতান, রেস্তোরাঁ, ব্যাংক, বীমা, হাসপাতালের কারণে গুলশানকে এখন আবাসিক এলাকা হিসেবে ভাবাই দায় হয়ে পড়েছে। চিহ্নিত আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিক এলাকার রূপ ধারণ করায় ভয়াবহ যানজটের শিকার হচ্ছে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকা।
একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশবান্ধব রাজধানী গড়ে তোলার স্বপ্ন আজ অবধি পূরণ হয়নি। কিন্তু এই রাজধানীকে আমরা তিলে তিলে তিলোত্তমা করে গড়ে তুলতে চাই। দিনে দিনে নগরীর পরিধি বাড়লেও পরিকল্পনার অভাব এখনো প্রকটভাবেই দৃশ্যমান। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও মানুষের লোভের আগুনে পুড়ছে রাজধানীবাসীর স্বপ্ন।
রাজধানীর আবাসিক এলাকাতেই একের পর এক গড়ে উঠছে অবৈধ শিল্পকারখানা। নগরবাসী আবাসিক এলাকায় কারখানার অবাধ অবস্থানে অসহায়। ফলে বাধ্য হয়েই নগরবাসীর অনেককেই কারখানা ভবনে কিংবা এর আশপাশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করতে হচ্ছে। এতে শব্দ দূষণসহ নানা ধরনের দূষণের শিকার হচ্ছেন নগরবাসী।
তথ্য মতে, রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগ, হাজারীবাগ, ইসলামবাগ, বংশাল, কোতোয়ালী, চকবাজার, যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর, সূত্রাপুর, কদমতলী, পোস্তগোলা, ধোলাইখাল, ফরিদাবাদ, ইসলামপুর, বড় কাটরা, সোয়ারিঘাট, পোস্তাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বহু বছর ধরেই হাজার হাজার শিল্পকারখানা চালু রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব শিল্পকারখানা শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিও বটে। কারণ এসব শিল্পকারখানায় ব্যাটারি ঢালাই, ওষুধসামগ্রী, পলিথিন ব্যাগ, পলিথিনের দানা, প্লাস্টিক সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক পাখা ও তার, আচার, চকোলেট, বিস্কুটসহ নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে বিপুলসংখ্যক ঝালাই কেমিক্যাল, রেক্টিফায়েড স্পিরিট, নানা ধরনের সুগন্ধি ও আতর, আতশবাজি, পটকা, সাইকেল, নাটবল্টু, খেলনা, প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির কারখানা। একই সাথে নকল প্রসাধনী সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের গহনা, জুতা, স্যান্ডেল, রাবার, রং, সলিউশন, বিøচিং পাউডার, ওয়াশিং সামগ্রী, ভিসিডি প্লেয়ারসহ আরো অনেক পণ্য তৈরির কারখানাও রয়েছে এসব এলাকায়।
রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে হলে এর পরিবেশ বদলে দিতে হবে। রাজধানীর বাতাসে এখন বিষ। খালগুলো মরে গেছে, দখল হয়ে গেছে। বিষাক্ত বর্জ্য রাজধানীর পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। একদিকে ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য রাজধানীর পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে। অন্যদিকে পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদামগুলো আবাসিক এলাকায় যে কোন ধরনের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় রাসায়নিকের গুদাম ও ট্যানারি ঢাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। রাজধানীকে বাসযোগ্য করার স্বার্থে এটা করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
ষ লেখক : চেয়ারম্যান, জয়যাত্রা ফাউেন্ডশন



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিকল্পিত রাজধানী চাই

২০ জানুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন