Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রেমিট্যান্স বাড়াতে দক্ষ কর্মী প্রেরণে জোর দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশে কর্মসংস্থান বেড়েছে। তবে আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের তথ্য মতে, চলতি বছর বিদেশে কর্মসংস্থান বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২৭ তারিখ পর্যন্ত বিদেশে কর্মসংস্থান পাওয়া কর্মীর সংখ্যা ৭ দশমিক ৫ লাখ। গত বছর একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ৫৫ লাখ। ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং-এর হিসাবে ২০০৮ সালের পর এবারই জনশক্তি রফতানির সংখ্যা ও হার সবচেয়ে বেশি। ওই বছর ৮ দশমিক ৭৫ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়। বিদেশে কর্মরতদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স এ বছর এসেছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর এসেছিল ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জনশক্তি রফতানি যথেষ্ট বাড়লেও সেই তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়ার কারণ সম্পর্কে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন জানিয়েছেন, এ বছর বিশ্বব্যাপী তেলের মূল্য হ্রাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের কর্মসংস্থান বাজারগুলোতে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে, যেখানে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশের বেশি কর্মী কাজ করে। রেমিট্যান্স আর্নিং দেশ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট উল্লেখ করে তিনি আরো জানিয়েছেন, ওই রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান সাত নম্বরে থাকলেও সম্ভবত এখন অবস্থান দাঁড়াবে ১০ নম্বরে। সংস্থাটির তথ্য মতে, এবার সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সউদী আরব থেকে। তার পরেই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া। জনশক্তি রফতানির দিক দিয়ে ওমান শীর্ষে। তারপরের অবস্থান সউদী আরবের। এরপর কাতার। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার জনশক্তি বাজারের অবস্থা হতাশাজনক। ওই দুই বাজারে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান তেমন একটা হয়নি।
জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি আমাদের আশান্বিত করলেও রেমিট্যান্স কমে যাওয়া হতাশাজনক। এটা ঠিক, বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ শ্লথ হয়ে গেছে। তবে এটাই এর একমাত্র কারণ নয়। আরো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষ কর্মীর স্থলে আধাদক্ষ ও অদক্ষ কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি একটি। জানা যায়, বিদেশে কর্মসংস্থানপ্রাপ্ত কর্মীদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ দক্ষ, ১৭ শতাংশ আধাদক্ষ এবং ৪০ শতাংশ অদক্ষ। দক্ষ কর্মীর তুলনায় আধাদক্ষ এবং আধাদক্ষ কর্মীর তুলনায় অদক্ষ কর্মীর বেতন ও সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। একথাও শোনা যায়, অন্যান্য দেশের কর্মীদের চেয়ে বাংলাদেশী কর্মীরা অনেক কম বেতন পায়। প্রতিযোগী দেশগুলো দক্ষকর্মী প্রেরণে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে এবং কর্মীদের বেতনের ব্যাপারে দরকষাকষি করে। এ দু’ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে। বাংলাদেশ যদি দক্ষ কর্মী প্রেরণে যথোচিত অগ্রাধিকার দিত ও দক্ষ কর্মী বেশি সংখ্যায় পাঠাত, একই সঙ্গে বেতনাদির ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখত বা দর কষাকষি করত তাহলে রেমিট্যান্স অনেক বেশি লাভ করতে পারত। বিদেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। সেই নিরিখে দক্ষকর্মী তৈরি অর্থাৎ কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা অনেকবার অনেকভাবে বলা হলেও এক্ষেত্রে যতটা অগ্রগতি হওয়ার কথা ততটা হয়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশী কর্মীরা কোথায় ও কি কাজে, যাচ্ছে তাদের বেতন ও সুবিধাদি কি রকম, সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো খোঁজ-খবর ও তত্ত্বাবধান নেই। বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো কর্মীদের খুব একটা উপকারে আসে না। তাদের অভিযোগ ও অসুবিধার প্রতিকারে দূতাবাসগুলো তেমন কোনো ভূমিকা রাখে না।
দেশে কর্মসংস্থানের প্রচ- অভাব। কয়েক কোটি লোক কার্যত বেকার, যাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ শিক্ষিত। দেশে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ফলে নতুন কর্মসংস্থান খুব একটা সৃষ্টি হচ্ছে না। এমতাবস্থায়, বিদেশে জনশক্তি রফতানির, যেখানে যতটুকু সুযোগ আছে, তা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে বেকারত্ব যেমন কমত, তেমনি বর্ধিত হারে রেমিট্যান্সও পাওয়া সম্ভব হতো। প্রাপ্ত রেমিট্যান্স আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে আরো ভালো অবদান রাখতে পারত। এই বিবেচনাকে সামনে রেখেই জনশক্তি রফতানির ওপর আরো জোর দেয়া প্রয়োজন। যেহেতু দক্ষ কর্মী রফতানিতে আয় বেশি, সুতরাং যত বেশি হারে ও সংখ্যায় সম্ভব দক্ষ কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মানব সম্পদ উন্নয়নে দেশের উদ্যোগে ও প্রয়াসের প্রশংসা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে পাওয়া গেলেও তাকে যথেষ্ট বলে মনে করার কারণ নেই। মানব সম্পদ উন্নয়ন বিশেষ করে বিদেশে কর্মসংস্থান প্রত্যাশীদের দক্ষ কর্মী করে তোলার কাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের কর্মসংস্থান বাজারগুলোতে এখন যে মন্দাবস্থা দেখা দিয়েছে তা সাময়িক। এরপরও সেখানে দক্ষ কর্মী ও পেশাজীবীদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাদের চাহিদা মোতাবেক দক্ষ কর্মী ও পেশাজীবীদের পাঠাতে পারলে কর্মসংস্থান যেমন আরো বাড়বে, তেমনি রেমিট্যান্সও বাড়বে। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়া অন্যান্য দেশেও বিশেষত, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিদেশি কর্মীর চাহিদা মোটেই কম নেই। এই বাজারগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি আরো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ  ও ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন