Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বর্ষ শেষে শান্তিনিকেতন

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাহমুদ শাহ কোরেশী : পশ্চিমবঙ্গে শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী এখন এক বিশ্বমর্যাদার ভ্রমণ কেন্দ্র। ২৯ ডিসেম্বর ২০১২ সালে তৃতীয়বার তিন রাতের জন্য আমরা কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে শান্তিনিকেতন যাই। বহু খাতা, এমনকি একটা বাঁধানো ডায়েরি বই থাকতে আমি সাদা কাগজে এই কাহিনী লিখে রেখেছি।
এই ভ্রমণ ছিল একান্তভাবে আমার মেয়ের পরিকল্পিত। আমার মেয়ে নুসরাত, তার মেয়ে প্রমা ও ছেলে প্রত্যয়ের জন্য ঢাকার দিল্লী পাবলিক স্কুলের উপযোগী পোশাক-আশাক, বইপত্র কিনতে হয়। ক্রিসমাস উপলক্ষে কলকাতার আকর্ষণীয় দর্শনযোগ্য সবকিছু দেখে একটা নতুন গাড়ি নিয়ে রওনা। এবারের চালক একজন বিহারী। একটু রুক্ষ্ম মেজাজের। তবে গাড়ি ভালোই চালায়।
সুন্দর রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল, ঠা-া আছে তবে কিছু কম, ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল, গড়ের মাঠ পেরিয়ে প্রায়-হাওড়া দ্বিতীয় সেতু- এই প্রথম এর ওপর দিয়ে যাচ্ছি। একটু বেশি চমকপ্রদ। দিল্লী যাবার রাস্তায় দুর্গাপুর ডিরেকশনের পথে পড়ল এক অদ্ভুত এলাকা শক্তিগড়-ল্যাংচা নাম নিয়ে অনেকগুলো ছোট বাড়ি। জানা গেল, ল্যাংচা নামের একটা বিশেষ মিষ্টি এখানে তৈরি হয়। বর্ধমান বাইপাসে ঢুকলাম। সামান্য কিছু রাস্তা ছাড়া যাত্রাপথ যথেষ্ট ভালো। ২ জায়গায় অশারণে টোল নিল একটা অবন সেতু, আরেকটা বোলপুর চেক। অবশ্য ২০/২৫ রুপির ব্যাপার। কিছু রাস্তায় ধান শুকাতে দেয়া হয়েছে। বাড়িঘর কম, একটু ছাড়াছাড়া, সাড়ে তিন ঘণ্টার জন্য আমাদের নির্ধারিত হোটেল ‘গ্রীন চিলি-’ কিংবা মনোরঞ্জন গেস্ট হাউস। এলাকার নাম ভুবন ডাঙা। পরে বিশ্বভারতী থেকে ফিরতি পথে দেখলাম লেখা রয়েছে- ‘নজরুল পথ’।
আমাদের জন্য যথেষ্ট ঘোরাঘুরি করে হোটেল ঠিক করে ছিলেন সংখমিত্রা। একজন পিএইচডি ছাত্রী। আমাদের জামাই মোহসিন হাবিবের বন্ধু অমিতের ঘনিষ্ঠ। তিনি আমার জন্য বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিত রায়কে বলে রেখেছিলেন। রায় মহাশয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন। তাঁর সুবাদে গ্রন্থাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত ওড়িয়া বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোরঞ্জন প্রধানকে আমার প্রয়োজনের কথা জানালাম। একটা তালিকা পেশ করলাম। বইগুলো যথাস্থানে আছে কিনা এবং থাকলে ফটোকপি করা যাবে কিনা। শুধু একটা ছোট বই পাওয়া গেল। নীতিভঙ্গ করে পুরো বইটি গ্রন্থাগারকর্মী একভদ্রলোক কোনো ফি’জ না নিয়ে তাদের নিজেদের প্রয়োজনে কাজটা করা হয়েছে দেখিয়ে নিয়ে এলেন। এটা এক অসাধারণ সৌজন্য বলতে হবে। আমি অবশ্য উপহার স্বরূপ নিয়ে এসেছি ৪টি বই। ৪টা অবধি গ্রন্থাগারে কাটিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে হোটেলে ফিরলাম। হোটেলে ফিরেও খুব সমাদর পেলাম। চা খেলাম। আগে বলা হয়নি দুপুর বেলায় চমৎকার বাঙালি মধ্যাহ্ন ভোজন হয়েছিল আমাদের। বিশেষ করে অতি বড় বড় পাবদা মাছ পাতে পাওয়া এক অবিশ্বাস্য ঘটনা বলা যেতে পারে।
সন্ধ্যায় আবার আচমকা আজানের ধ্বনি শুনতে পেলাম। আগে কখনো শুনিনি। এই ব্যাস। প্রথমবার রতন কুঠি, দ্বিতীয়বার পূর্বাচল গেস্ট হাউসে ছিলাম, আজান শুনেনি কখনো।
পরদিন সবাই শান্তিনিকেতন দেখতে গিয়ে যথারীতি চারুকলা বিভাগের উন্মুক্ত প্রদর্শনী দেখলাম ও ছবি তুললাম। কিছু বই কিনলাম। অন্য কোথাও প্রবেশ দুরূহ। লম্বা লম্বা কিউ। আমার স্ত্রী ও কন্যা বাচ্চাদের নিয়ে ভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করল। আমি বইপত্র নিয়ে চলে এলাম হোটেলে।
বিকেলে বেরুলাম মেলা পরিদর্শনে। লোকউৎসবের চূড়ান্ত প্রদর্শনী শান্তিনিকেতনে। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, উড়িষ্যা কোথাও কেউ বাকি নেই যে এখানে অংশগ্রহণ করেনি। বছরের শেষ রজনীর উদ্যমতাও অনুভূত হয়েছিল বৈকি! অন্যবার আমরা বিশ্বভারতী ও রবীন্দ্র সদনগুলো দেখেছি এবং এবার মূলত মেলাই দেখলাম। নয়নমন সার্থক করে অপরাহ্নে কলকাতা ফিরলাম।
লেখক : শিক্ষাবিদ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন