Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এমপি লিটন হত্যায় অংশ নিয়েছিল ৫ জন

১৮ সন্দেহভাজন আটক

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সুন্দরগঞ্জে সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালিত : উপজেলা ও জেলা শহরে বিক্ষোভ


গাইবান্ধা জেলা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা : দুর্বৃত্তদের গুলিতে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকায় রোববার সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। পৌর আওয়ামী লীগের ডাকা এ হরতাল চলাকালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এছাড়া গাইবান্ধা জেলা শহরেও জেলা যুবলীগের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
গতকাল সকালে হরতালের সমর্থনে সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা এলাকায় লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামী ২০ ডাউন ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি দীর্ঘ সময় অবরোধ করে রাখা হয়। এছাড়া পিকেটাররা বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে গাছ কেটে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং সকল সড়ক অবরোধ করে রাখে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া ঘটনার পর থেকে গোটা সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং প্রতিবাদে মাঝে মাঝে বিক্ষোভ মিছিল করে বিক্ষুব্ধ ও শোকাহতকর্মী সমর্থকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বামন ডাঙ্গাসহ সুন্দরগঞ্জ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
১৮ জন আটক : সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আতিয়ার রহমান জানান, এই খুনের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে শনিবার রাতেই ৬ জনকে এবং রোববার আরও ১২জনসহ মোট ১৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে গোপনীয়তার কারণে পুলিশ আটককৃতদের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।
ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় আ’লীগের প্রতিনিধি দল : এমপি লিটনকে হত্যা করার পর ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে যুগ্ম সারাধণ স¤পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক স¤পাদক সংসদ সদস্য এবিএম মোজাম্মেল হক, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি এমপি ডা. ইউনুস আলী সরকার এমপি। শনিবার রাতেই গাইবান্ধায় এসে পৌঁছান এবং গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে অবস্থান করে রোববার সকালে তারা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যান।
নামাজে জানাযা ও দাফন : রংপুর পুলিশ লাইনে এমপি লিটনের প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর হেলিকাপ্টারযোগে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তার মরদেহ রোববার দুপুরের পর ঢাকায় নিয়ে যায়। সোমবার সেখানে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার ২য় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ২য় দফা জানাযা শেষে ওইদিন বিকেলে হেলিকাপ্টারযোগে এমপি লিটনের মরদেহ সুন্দরগঞ্জে আনা হবে এবং বাদ আছর সুন্দরগঞ্জের ৩য় দফা জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হবে বলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক জানিয়েছেন।
কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৫ জন : পুলিশের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানায়, কিলিং মিশনে ৫ জন খুনি অংশ গ্রহণ করেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে ধারণা করা হচ্ছে তারা বহিরাগত। কালো কোট-প্যান্ট পরিহিত সবার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এদের একজনের মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি ছিল। তারা দুটো মোটরসাইকেলে করে এসে বিকেল ৪টা থেকে এমপি লিটনের বাড়ি এবং আশেপাশের এলাকায় র‌্যাকি করে। পরে তারা এমপি লিটনের বাড়িতে প্রবেশ করে। এসময় এমপি লিটন বাড়ির সামনে গাবগাছের নিচে বসে ছেলেদের বল খেলা দেখছিল। তার সাথে ছিল স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি ও এমপির শ্যালক বেতার। দুটি মোটরসাইকেলে ৫ জন কিলার এলেও বাকি তিনজন মোটরসাইকেলের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে। দু’জন এগিয়ে এসে এমপি লিটনের কাছে জরুরি কথা বলতে চায়। এসময় এমপি তাদের অপেক্ষা করতে বলে একটু পরে সাক্ষাত দিবেন বলে জানায়। পরে সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই দু’জনার সাথে কথা বলার জন্য এমপি বাইরের বৈঠক খানায় প্রবেশ করলে তার স্ত্রী, শ্যালকও তার সাথে যায়। বৈঠকখানা ঘরে গিয়ে একজন কিলার এমপি’র স্ত্রীকে বলে যে, স্যারের সাথে আমরা একান্তই ব্যক্তিগত কিছু কথা বলতে চাই। এ কথা বলার পর স্ত্রী ও শ্যালক পাশের ঘরে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে আসে। এমপি লিটনও তাকে গুলি করে মেরে ফেললেও চিৎকার করে বৈঠকখানা ঘরের পশ্চিম দিকের দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে উঠোনে ছুটে বেরিয়ে আসে। এসময় বাড়ির দু’জন গৃহপরিচারিকা ও স্ত্রী তাকে জড়িয়ে ধরলে সে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে। পরে এমপির শ্যালক বেতার ও বাড়ির কেয়ারটেকার ইসমাইল এমপির বৈঠক খানা ঘর থেকে ৩ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেই সেখানে ছুটে আসে এবং পলায়নরত আততায়ী যুবকদের বেতারের সাথে গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করলে তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। বাড়ি থেকে বেরিয়েই কিলাররা একটি মোটরসাইকেলে যায় পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে বামনডাঙ্গার দিকে এবং অপরটি পশ্চিম দিকে নলডাঙ্গার রাস্তায় চলে যায়।
৬ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করা হয়েছিল : পুলিশের ওই সূত্র থেকে জানা গেছে, এমপি লিটনের বৈঠক খানা ঘর থেকে ৪ রাউন্ড গুলির খোসা ও ২টি ফায়ারর্ড বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে। সম্ভবত এই ফায়ারর্ড বুলেট দুটিই এমপির দেহ ভেদ করে বেরিয়ে আসে এবং সে কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্তে ৫টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে : জানা গেছে, এ হত্যার কারণ নির্ণয়ে ৫টি সম্ভাব্য বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। এ বিষয়গুলো হলো- জেএমবি ও জঙ্গিদের পরিকল্পিত হত্যাকা-, জামায়াত-শিবির চক্রের হামলা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, পারিবারিক শত্রুতা এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচন। পুলিশ আশাবাদি খুব সত্ত্বর তারা হত্যার মূল উদ্দেশ্য বের করে ফেলতে পারবেন। এই মোটিভ জানা সম্ভব হলেই প্রকৃত হত্যাকারিকে বের করার সহজ হবে।
প্রথমদিনে নতুন বই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা : মর্মান্তিক এই হত্যাকা-ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সর্বাত্মক হরতাল পালিত হওয়ায় গোটা উপজেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নববর্ষের প্রথমদিনে নতুন বই হাতে পায়নি। ঢাকা থেকে যথারীতি ট্রাকযোগে বই এলেও ট্রাক ভর্তি বই গাইবান্ধায় আটকা পড়েছে। তদুপরি আকস্মিক হরতালে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই পৌছায়নি।
প্রসঙ্গত উলেখ্য যে, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে আশংকাজনক অবস্থায় দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। রাত সাড়ে ৭টায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা জেলা যুবলীগের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব রাখেন পৌর মেয়র অ্যাড. শাহ্ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মিলন জেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদ হাসান লোটন, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব রাজিব, যুবলীগ নেতা রকিদেব সহ যুবলীগের জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দু ।
বক্তারা অবিলম্বে দোষিদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।
পরে এক বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ায় গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর, পলাশবাড়ী) আসনের এমপি ডা. ইউনুস আলী সরকার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার জন্য জামাত এই হত্যাকা-ের পথ বেছে নিয়েছে। তিনি এই হত্যাকা-ের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন সন্ত্রাসী ও হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।
গোবিন্দগঞ্জে আ’লীগের বিক্ষোভ
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধ) উপজেলা সংবাদদাতা : এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসমূহ। গতকাল বিকেলে গাইবান্ধা-৪ গোবিন্দগঞ্জ আসনের এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বেড় হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন ফকু, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রধান জাকারিয়া ইসলাম জুয়েল, মহিমাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তাহেদুল ইসলাম রকেট, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ঠান্ডু প্রমুখ।



 

Show all comments
  • নাজিম ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:১৩ পিএম says : 0
    প্রকৃত অপরাধীদের যেন গ্রেফতার করা হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এমপি লিটন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ