Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্পেন-মরক্কো সীমান্তে অভিবাসীদের ঢল, পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সীমান্ত বেষ্টনী অতিক্রমের চেষ্টাকালে পুলিশের সঙ্গে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। ২০১৭ সালের প্রথম দিনেই ইউরোপমুখী অভিবাসন-প্রত্যাশীদের ঢল নেমেছে স্পেন-মরক্কো সীমান্তে। স্পেনে প্রবেশের চেষ্টাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে হাজারখানেক অভিবাসন-প্রত্যাশী। আফ্রিকা মহাদেশের এসব বাসিন্দা গত রোববার লাফিয়ে মরক্কো এবং স্প্যানিশ ছিটমহল কিউটার মধ্যকার বেষ্টনী পার হওয়ার চেষ্টা করে। স্প্যানিশ ভূখ-ে প্রবেশের চেষ্টাকালে দুই দেশের পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ফলশ্রুতিতে শুরু হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। এতে একজন পুলিশ সদস্য তার এক চোখ হারিয়েছেন। গত রোববার ভোর ৪টার দিকে ওই এলাকায় জড়ো হন ইউরোপমুখী অভিবাসন-প্রত্যাশীরা। কোয়েটার স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি জানান, ‘তারা ছিল অত্যন্ত হিং¯্র এবং সংগঠিত।’ এ সংঘর্ষের ঘটনায় কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে অনেকে আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুই ব্যক্তিকে কিউটার স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ধরনের ঘটনা অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর একই ধরনের ঘটনা ঘটে। সে সময় চার শতাধিক অভিবাসন-প্রত্যাশী খুদে এই ছিটমহলটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। স্প্যানিশ ছিটমহলটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অভিবাসন-প্রত্যাশীরা লোহার দ-, তারকাঁটার যন্ত্র দিয়ে জোরপূর্বক সীমান্ত বেষ্টনীর কিছু প্রবেশদ্বার ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। মরক্কো ও স্প্যানিশ বাহিনীর দিকে ছোড়ার জন্য সঙ্গে নিয়ে আসে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো। এতে স্পেনের পাঁচ পুলিশ সদস্য এবং মরোক্কান বাহিনীর ৫০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন তার চোখ হারিয়েছেন। মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে এ ধরনের চেষ্টাকারীদের যথাযথ বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে হাজির করা হবে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, উত্তর আফ্রিকায় কিউটা, মিলিলা নামের দুটি স্প্যানিশ ভূখ- রয়েছে। এ ছাড়া আফ্রিকা মহাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর কোনও সমতল সীমান্ত নেই। জীবন-জীবিকার তাগিদে এ ভূখ- দিয়ে তাই স্বপ্নভূমি ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন অনেকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাহাজ বা নৌকায় চড়ে সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন বিপুলসংখ্যক শরণার্থী। আর উত্তাল সাগরের বুকে একের পর নৌকাডুবিতে প্রাণ যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০১৫ সালে অধিকতর ভালো জীবনের সন্ধানে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ হাজারের অধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। মানব পাচারকারীদের শিকারে পরিণত হয়েছেন ১০ সহ¯্রাধিক মানুষ। আর বিদেশি বিদ্বেষী নীতি এবং বিদ্যমান ভয়-আতঙ্কে বলির পাঁঠায় পরিণত হয়েছে ১০ লক্ষাধিক মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুনিয়াজুড়ে জীবন বাঁচাতে আর মাথা গোঁজার জন্য নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে এত বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর নানা দিকে ছোটাছুটির ঘটনা এর আগে আর ঘটেনি। ২০১৪ সালে যুদ্ধ-দাঙ্গাপীড়িত বা অভাবের তাড়নায় প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ নিজের জন্মভূমি আর ঘরবসত ছেড়ে নানা দেশে পাড়ি দিয়েছিল। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের একটা বড় অংশই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার নাগরিক। যুদ্ধাবস্থা থেকে বাঁচতে দলে দলে ভিনদেশের পথে ছুটছেন দেশটির বাসিন্দারা। ২০১৫ সালে ইউরোপের অভিবাসী এবং শরণার্থীবিষয়ক সংগঠনগুলো মূল সমস্যার পাঁচটি উপাদান চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছেÑ ১. সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়ে যাওয়া, ২. যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে শিগগিরই সমস্যা সমাধানের আশা না থাকা, ৩. প্রতিবেশী দেশগুলোর শরণার্থীদের সমস্যা ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে অনীহা, ৪. তুরস্কে বসবাসরত সিরিয়ার শরণার্থীদের যে কোনো সময় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা, ৫. সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিভক্ত বলকান রাষ্ট্র সার্বিয়া, কসোভো মন্টেনেগ্রো ও মেসিডোনিয়ার মতো দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়। ২০১৫ সালে সমুদ্রে তুরস্ক ও গ্রিসের মাঝামাঝি এলাকায় নিহত হয়েছেন ৭০০-এর বেশি শরণার্থী। এদের মধ্যে অন্তত ১৮৫ জন শিশু। এই শিশুদের অন্তত পাঁচ শতাংশের বয়স দুই বছরের কম। ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব শিশুর অধিকাংশই সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে পরিবারের সঙ্গে যাত্রা করেছিল। এদের অধিকাংশের বয়স ১২ বছরের নিচে। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে তুরস্কের উপকূলে সন্ধান মেলে আয়লান নামের এক সিরীয় শিশুর মৃতদেহ। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে নিথর পড়ে থাকা শিশু আয়লান কুর্দির নাম শুনলে এখনও স্তব্ধ হয়ে যান অনেকে। ছোট নৌকায় থাকা আয়লান ও তার ভাই ভেসে যায় তুরস্কের সৈকতে। তাদের মা ভেসে যান দূরের অন্য এক সৈকতে। এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সপরিবারে সাগরে ভাসছেন হাজার হাজার আয়লান কুর্দি। আর ইউরোপ সংলগ্ন সমতল সীমান্তে দৃষ্টি গরিব দেশগুলোর লাখো অভিবাসন-প্রত্যাশীর। এর বাইরে নয় কিউটার মতো খুদে স্প্যানিশ ছিটমহলও। ছিটমহল হোক; তাও তো ইউরোপের মাটি! সূত্র : আল জাজিরা, বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ