Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তাবলীগ জামাতকে বিতর্কিত করা যাবে না

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশ্বব্যাপী ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ প্রচার মুসলিম জাতির ধর্মীয় দায়িত্ব। এর নাম দাওয়াত ও তাবলীগ। দীর্ঘ দেড় হাজার বছর ধরেই এ কাজ মুসলমানরা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে নিজ নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী করে এসেছেন। বর্তমান সময়ে ইসলামী দাওয়াত প্রচারে পৃথিবীতে বহু পদ্ধতি কার্যকর রয়েছে। এর মধ্যে উপমহাদেশে দেওবন্দ ও সাহারানপুরের উলামা-মাশায়েখের সমর্থনে তাবলীগি জামাত দীনি ভাবধারা প্রচারের কাজ করছে। এ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা একজন দেওবন্দী আলেম ও বুজুর্গ। তিনি নিজে বড় আলেম এবং পীর ছিলেন। ইলম ও ইসলাহের পুরোধা ছিলেন। গণমুখী প্রচারণার পথ উদ্ভাবনের মাধ্যমে তিনি বিশেষ বৈশিষ্ট্য অর্জন করেন। তারপর আরো তিনজন হযরতজি এ জামাতকে শূরা পদ্ধতিতে পরিচালিত করে বিশ্বব্যাপী এর কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। অভিনব এ পদ্ধতি নিয়ে শুরু থেকে অনেক মতমতান্তর থাকলেও বৃহত্তর ধর্মীয় কল্যাণ চিন্তায় আলেম সমাজ একে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছেন। মাঝে-মধ্যে তাবলীগপন্থীদের কোনো কোনো চিন্তা কথা ও আচরণ ধর্মীয় ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে উলামায়ে কেরাম তাদের সংশোধন করে দিয়েছেন। বর্তমানেও বিশ্বব্যাপী তাবলীগ জামাত আলেম উলামার সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত ও পাকিস্তানে উলামায়ে দেওবন্দ ও তাবলীগ জামাতের পথচলা একই সুতায় বাঁধা।
সর্বশেষ তাবলীগ জামাত তার নিজ কর্মপন্থাকে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন একটি ধর্মীয় কাজ মনে করে, এর কোনো কোনো চিন্তাবিদ ও মুখপাত্র এক ধরনের বক্তব্য দিতে থাকেন যা এর প্রতিষ্ঠাতা এবং শুরুর দিককার মুরুব্বীদের মুখে কখনও শোনা যায়নি। যাতে উলামায়ে কেরামের মনে অনেক প্রশ্ন ও অস্বস্তির উদ্রেক হয়। যেমনÑ বলা হচ্ছে, মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও দীনি কাজ হতে পারে না। দীন শেখার জন্য দাওয়াত ছাড়া আর কোনো পদ্ধতি হতে পারে না। এমনকি মাদরাসা ও উচ্চতর দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও কোনো প্রয়োজন নেই। একজন আলেম-মুফতি-মুহাদ্দিস-মুহতামিম ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব তার গোটা জীবনটি দীনের কাজে ব্যয় করলেও তিনি আল্লাহর পথে নন, নবীওয়ালা কাজে নন, তাকে কেবল তাবলীগে সময় দিয়েই প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি জীবনের কিছু সময় আল্লাহর রাস্তায় দিয়েছেন। তাছাড়া বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এখন তাবলীগপন্থী কিছু লোক আলেম-উলামা ও ইমামগণকে তখনই গ্রহণযোগ্য মনে করেন যখন তারা সাতচিল্লা বা এক বছর তাবলীগে সময় লাগান। অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা উলামায়ে কেরামকে অবজ্ঞা তো করেনই এমনকি তাদের সম্পর্কে অন্যায় ও কঠোর মন্তব্য করেন। পীর-মাশায়েখ এমনকি দেশের বরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিবর্গকেও তারা তাদের শরীয়ত নির্ধারিত মান-মর্যাদা দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তাবলীগে গিয়ে একদল মানুষ এমনও বাড়াবাড়ি পর্যায়ে একঘরে হয়ে যান যে তারা কোনো মসজিদ-মাদরাসায় দান করেন না। যাকাতও তারা সাধারণ মুসলমানদের দেন না। মারা গেলে মহল্লার মসজিদে জানাযাও পড়ান না। তাদের দান, খয়রাত, জাকাত ইত্যাদি তাবলীগী মুরব্বীদের হাতেই তুলে দেন। তাদের নির্দেশেই ব্যয় করেন। জানাযার নামাজও মহল্লার পরিবর্তে তাবলীগী মারকাজে নিয়ে পড়াতে বলেন। মসজিদের কোনো কোনো ধর্মীয় জলসা, তাফসীর ও সীরাত মাহফিলে তাবলীগের লোকেরা যোগ দেন না। তারা তাদের নিজেদের কাজকর্ম, তালিম ও বয়ানকেই একমাত্র দীনি কার্যক্রম বলে গণ্য করেন। অথচ এমন আলাদা একটি গোষ্ঠী তৈরি করা তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাথমিক দিককার মুরব্বীরা চাননি। ইসলামের মৌলিক ভাবাদর্শও এমন বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা সমর্থন করে না। এসবই দিল্লির সাআদ সাহেব এবং বাংলাদেশে ব্যবসায়ী, দুনিয়াদার পেশাজীবী নেতৃত্বের প্রভাব। এসব সীমালংঘন ও অনিয়মের বিষয়ে উলামায়ে কেরাম বরাবরই তাবলীগী মুরুব্বীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এসেছেন। বর্তমান মুরব্বীদের অন্যতম দিল্লির সাআদ সাহেব ছাড়া আগে-পরের সব মুরুব্বীই উলামাদের সংশোধনী ও পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ঐতিহ্যবিরোধী বহু মতাদর্শ প্রচারকারী সাআদ সাহেব কোনো সংশোধনী না নিয়ে নিজ ইচ্ছানুসারে তাবলীগ জামাত পরিচালনা করতে উদ্যত হয়েছেন। তার বক্তব্য সালাফি ও মওদুদি মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত। যার বিষয়ে দেওবন্দ থেকে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। এমনকি তার বিভ্রান্তিকর মতাদর্শের দরুন  দিল্লির প্রখ্যাত সব মুরুব্বী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। আরব, আফ্রিকা, আমেরিকা, ইউরোপ, ভারত-পাকিস্তান তাকে আল্টিমেটাম দিয়ে সংশোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। লখনৌর নদওয়াতুল উলামা তাকে তার ব্যক্তিগত মতাদর্শ, নিজস্ব বইপত্র ও বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ রাখতে সুপারিশ করে তাবলীগ জামাতের সরল-সহজ ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে তা প্রচার না করার অনুরোধ করেছেন। এত সবের পরেও তিনি সমঝোতা বা সংশোধনের পথে না এসে নিজেকে আমির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার অন্যতম উদ্যোগ হচ্ছে, যে কোনো মূল্যে টঙ্গির ইজতেমায় এসে বয়ান করা এবং আমিরের ক্ষমতা প্রয়োগ। যা তিনি আরব, অফ্রিকা, পাকিস্তান ও ভারতের ইজতেমাগুলোয় করতে পারছেন না। টঙ্গিতে এটি করতে পারলে তার একঘরে হয়ে যাওয়া অবস্থাটা অনেকটাই কেটে যাবে এবং তিনি বিশ্ব তাবলীগের উপর তার নেতৃত্ব সংহত করতে পারবেন বলে মনে করছেন।
এ বিষয়টিকে সামনে রেখে দেশের সর্বজনমান্য আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে শীর্ষ আলেমগণ দীর্ঘদিন যাবত তার সংশোধনের চেষ্টা করছেন। পত্রযোগে বার্তা দিয়েছেন। বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার ইজতেমায় অংশ না নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এমতাবস্থায় কাকরাইলের দু’একজন ব্যক্তি তাকে আনা এবং প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছেন তা তাবলীগ জামাতের জন্য উদ্বেগজনক। এ ক্ষেত্রে সাআদ সাহেবের যেমন উলামায়ে কেরামের আহ্বানে সাড়া দিতে হবে। কাকরাইলের শূরা ও মুরব্বীদেরও বিশ্ব তাবলীগের মনোভাব সামনে রেখে অগ্রসর হতে হবে। দু’একজনের হঠকারিতা বা ব্যক্তিগত চিন্তার সামনে দীনি কাজের এতবড় একটি কার্যক্রমকে বিতর্কিত করা যাবে না। আলেম সমাজের দিকনির্দেশনার মতো সরকার ও প্রশাসনকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা, এরকম বিশাল একটি ইজতেমায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা আমাদের জাতীয় সুনাম ও মর্যাদার সাথে যুক্ত। সর্বোপরি তাবলীগ জামাত দলীয় রাজনীতিমুক্ত, নিছক ধর্মীয় সংগঠন হওয়ায় এতে সাধারণ মানুষ আবেগ-উৎসাহ নিয়ে যোগ দিয়ে থাকেন, এটি যেন কিছুতেই উগ্রবাদ, সালাফি, মওদুদি ও আলেম-উলামা পীর মাশায়েখ বিদ্বেষী ভ্রান্ত কোনো মতবাদ প্রচারে ব্যবহৃত না হয় এদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে। কিছু লোকের ভুলে তাবলীগ যেন তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা না হারায়, বিশেষত আলেমদের তত্ত্বাবধান থেকে বিচ্যুত হয়ে এটি যেন কোনো গোমরাহ ফিতনায় রূপ না নেয়- এ বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট সকলের নজর দিতে হবে।



 

Show all comments
  • শরফ ৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ২:২৬ পিএম says : 0
    alhamdulillah
    Total Reply(0) Reply
  • আলতাফ ৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ৫:০৩ পিএম says : 0
    এটি যে আদর্শের/উদ্দেশ্রের উপর প্রতিস্টিত তা যেন উকখুন্ন থাকে|এ ধরনের ব্যাকতিকে বাদ দেয়া হোক| এটি যেন কোন হক ইশলামি দলের বিকখে বা উগ্রপন্হির পকখে না থাকে সেদিকে দৃস্টি রাখবেন|
    Total Reply(0) Reply
  • ওবাইদুল ৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ৯:৩৯ পিএম says : 1
    তবলিক জামাত কি সঠিক পথে চলছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • MD ৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৫:০২ পিএম says : 0
    সুধরানো হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Omar Faruk ৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৬:৩৪ পিএম says : 0
    কিছুটা অতিরঞ্জন হয়ে গেছে
    Total Reply(0) Reply
  • ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ৬:৩৭ পিএম says : 0
    আলেমদেরকে দুরে রাকার কারনে আজ ইএ অবস্তা
    Total Reply(0) Reply
  • MD SHOHIDUL ISLAM SABUJ ১১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:৪৮ এএম says : 0
    যা করলে দ্বীনের জন্য তথা ইসলামের জন্য ভালো হয় তা যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে ফায়সালা আসে।
    Total Reply(0) Reply
  • মাসুম ২ মে, ২০১৮, ১১:১৫ পিএম says : 0
    ওলামাদের এইকাজে আরো এগিয়ে আসতে হব
    Total Reply(0) Reply
  • সালমান ৩ মে, ২০১৮, ১২:৫৮ পিএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন এগুলার জবাব অলেমরাই করতে হবে । আললাহ সবধরণের ফিতনা থেকে হেফাজত কর । আমীন ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তাবলীগ

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন