Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সন্দেহভাজন গ্রেফতার ২১ জন জামায়াত-শিবির সদস্য

এমপি লিটন হত্যা

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রাপ্ত ক্যাপের ডিএনএ টেস্ট তদন্তে বিভিন্ন বিষয়
গাইবান্ধা জেলা ও সুন্দরগঞ্জ সংবাদদাতা : সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলেই সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করছে পুলিশ। যদিও তারা দলীয় কোন্দল, পারিবারিক বিষয়, জেলা পরিষদ নির্বাচন, অন্যান্য শত্রুতার বিষয়গুলোকেও খতিয়ে দেখছে। তবে এ পর্যন্ত এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে যে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছিল তারা সকলেই ছিল জামায়াত-শিবির নয়তো আল্লাহর দলের ক্যাডার বা সমর্থক। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটককৃতদের মধ্যে থেকে ২১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে জামায়াত-শিবিরের যাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তারা হলো- মহসিন আলী (৬৫), সিরাজুল ইসলাম (৫৫), রাতুল ইসলাম (২২), লাল মিয়া (৪৫), আইয়ুব আলী (৫০), আলম মিয়া (৪৮), সানু মিয়া (২৮), ভুট্টু মিয়া (৪০), আমজাদ হোসেন (২৮), রুবেল মিয়া (১৮), আজিজুর রহমান (৫৫), গোলাম মোস্তফা (৩৮), মাহাতাব হোসেন (৩২), হাফিজ উদ্দিন (৩৬), মোজাম্মেল হক (৫০), নুরুন্নবী (৪৫), গোলাম বারী (৩৮), মমিন উদ্দিন (৩৭), আব্দুল মালেক (৩৮), মঈন উদ্দিন (৩৭) ও আব্দুল খালেক (৩০)।
খুনিদের প্রাপ্ত ক্যাপের ডিএনএ টেস্ট : এমপি লিটন হত্যার দিন তার বাড়ির সামনে গাব গাছের দক্ষিণ দিকে একটি কালো রংয়ের ক্যাপ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওইদিন বাড়ির সামনে মাঠে সে সময় যেসব ছেলে ভলিবল খেলছিল তারাই ক্যাপটি কুড়িয়ে পেয়ে পুলিশকে দেয়। এই ক্যাপটির বর্তমানে ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, যে ২ জন খুনি লিটনকে হত্যা করার জন্য ঘরের ভেতর ঢোকে তাদের গায়ে ছিল কালো রংয়ের জ্যাকেট এবং পরণে ছিল কালো প্যান্ট আর মাথায় কালো রংয়ের ক্যাপ। ধারণা করা হচ্ছে গুলি চালিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘাতকদের কারো মাথা থেকে ক্যাপটি পড়ে যায়। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশের পক্ষে প্রকৃত খুনিকে শনাক্ত করতে তা উল্লেখযোগ্য সূত্র হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
লিটনের সন্তানকে ঢাকায় পুলিশি নিরাপত্তা : লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি এবং তার একমাত্র সন্তান রাতিন লিটনের বোনদের সাথে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। রাতিন যেহেতু ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ লেভেলের ৯ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে সেজন্য স্কুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন লিটনের স্ত্রী। তিনি গাইবান্ধার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহিত করলে ঢাকা থেকে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় বলে জানা গেছে।
এমপি লিটনের সাথে যারা সবসময় থাকতো সেদিন তারা ছিল না : লিটন যখন বাইরে কোনো প্রোগ্রামে বা সভা, সমাবেশে যেত সে সময়গুলোতে দলীয় অঙ্গ সংগঠনের যে কয়েকজন নেতাকর্মী সার্বক্ষণিক থাকতো তাদের মধ্যে সামিউল ইসলাম সামু, খন্দকার মাইদুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম রানা ও আজম তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ঘটনার দিন তাদের কাউকেই এমপি লিটনের বাড়িতে দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, ওইদিন এমপি লিটনের বাড়ি ছিল নেতাকর্মী শূন্য। এব্যাপারে সামিউল ইসলাম সামু জানান, ওইদিন ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফাস্ট নাইট হওয়ার কারণে অনেকে বিভিন্ন কারণে ব্যস্ত ছিলেন। তদুপরি সন্ধ্যায় যেহেতু এমপি লিটনের বামনডাঙ্গা অফিসে প্রতিদিনের মতো আসার কথা থাকায় সেখানেই নেতাকর্মীরা এমপির অপেক্ষা করছিল। সামু আরও বলেন, লিটন এমপি বিরোধী একটি সক্রিয় চক্র এমপির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী এবং পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে পরিকল্পনা নিয়ে হয়রানি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে এমপি লিটনের ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল : ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে সৈয়দপুর হয়ে বিমানে এমপি লিটনের ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল। সে কারণেই নেতাকর্মীরা বাড়িতে আসেনি। এ ব্যাপারে এমপি লিটনের কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার আইয়ুব আলী জানান, ৩১ ডিসেম্বর শনিবার বিমানের টিকিট না পেয়ে ১ জানুয়ারি রোববারের টিকিট নিয়ে আসেন তিনি। আর এ কারণেই শুক্রবার রাতেই লিটন সিদ্ধান্ত নেন শনিবারের পরিবর্তে রোববার তিনি ঢাকায় যাবেন। তবে এক্ষেত্রে একটি রহস্যজনক ঘটনা হচ্ছে এমপি লিটনের নির্দিষ্ট দিনে বিমানের টিকিট না পাওয়ার কারণে এই আকস্মিক যাত্রা বিরতির সুযোগকে কিভাবে খুনিরা বেছে নিল। সেদিন ঢাকায় না যাওয়াকে কেন্দ্র করে এমপি লিটনের বাড়ি নেতাকর্মী শূন্য থাকবে খুনিরা এই তথ্য কিভাবে পেল। তদুপরি যারা সার্বক্ষণিক থাকতো সেদিন বা তারা থাকলেন না কেন? এই প্রশ্নগুলো নিয়েও পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
লিটনের খুনের বিষয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টির জন্যই কি পরিবারকে জড়ানো হচ্ছে : বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সমেস উদ্দিন বাবু জানান, লিটনের খুনের সাথে জামায়াত-শিবির চক্র জড়িত। ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর ভোরে শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভের পায়ে গুলি করাকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের মদদে যেভাবে একটি মহল এমপি লিটনের ভাবমূর্তি বিনষ্টে ব্যাপকভাবে তৎপর হয়ে উঠেছিল। তেমনি একই কায়দায় আবারও লিটনের হত্যাকে কেন্দ্র করে তার পরিবারকে জড়ানোর সুপরিকল্পিত তৎপরতা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্র লিটন বা তার পরিবারকে নিয়েই নয়, বরং এটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলাকে আবারও জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিবাদের আখড়ায় পরিণত করার পরিকল্পিত অপচেষ্টা।
পরিবার ও দলীয় সহচরদের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি
দীর্ঘ ছয়দিন থেকে এই নৃসংশ হত্যাকা-ের মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতারে মরিয়া হয়ে উঠা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও সদস্যরা বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০ জনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেককে জেল হাজতে প্রেরণ করলেও ঘটনার মূল রহস্য অন্ধকারেই থেকে যাওয়ায় তাদের তীক্ষè দৃষ্টি এখন পরিবার ও দলীয় সহোচরদের দিকে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত তারা নিহত এমপির বড় শ্যালোক সৈয়দ বেদারুল আহসান বেতার, কাজের লোক ইসমাইল হোসেন, ইউসুফ, সৌমিত্র, গাড়ি চালক ফোরকান আকন্দ, এমপির স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি, চাচী শামীম আরাসহ ১৩ জনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ  অব্যাহত রেখেছেন।
গতকাল দুপুরে এমপি লিটনের সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক সহচর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক শহিদুল ইসলামকে র‌্যাব আটক করে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। আটকের বিষয়টি র‌্যাবের এডি এএসপি হাবিবুর রহমান নিশ্চিত করে জানান, শহিদুল ইসলাম এমপি লিটনের সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক সহচর হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
মামলার বাদী ফাহমিদা বুলবুল কাকলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ভাইকে যারা খুন করেছে; তারা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় আমি বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছি।
এ নিয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আতিয়ার রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এমপি লিটনের হত্যাকা-ের মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অচিরেই প্রকৃত খুনিরা গ্রেফতার হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হায়দার মো: আশরাফুজ্জামান জানান, অনেক তথ্য-উপাত্ত আমরা পেয়েছি। অপেক্ষা করুন সবকিছু দেখতে ও জানতে পারবেন।
প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত : এমপি লিটনের নৃসংশ হত্যার প্রতিবাদে উপজেলার সর্বত্রই প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল উপজেলার ধুবনী কঞ্চিবাড়ি হাইস্কুল মাঠে ৮ ইউনিয়নের আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠন প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ