Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিষয়ক তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন ‘ত্রুটিপূর্ণ’ -এইচআরডব্লিউ

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনী কোনও ধরনের নিপীড়ন চালায়নি বলে দেশটির সরকার গঠিত তদন্ত কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাকে ‘পদ্ধতিগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। রোহিঙ্গাদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর চার পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন বুধবারই সরকারি তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একইদিনে ওই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।
মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য বিশ্বব্যাপী যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তার বিপরীতেই ওই তদন্ত কমিশন গঠিত হয়। মিয়ানমারের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “মংডুর ‘বাঙালি’ অধিবাসীদের সংখ্যা, মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনাই প্রমাণ করে সেখানে কোনও গণহত্যা বা নিপীড়নের ঘটনা ঘটেনি’।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের পৃথক জাতিসত্তা বা মিয়ানমারের নাগরিক বলে পরিচয় দিতে নারাজ। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ‘বাঙালি’ অবৈধ অভিবাসী বলে উল্লেখ করে আসছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।  
কমিশন দাবি করেছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অবৈধ আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ প্রমাণ পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে তারা প্রস্তুত রয়েছে। ধর্ষণের বিষয়ে তদন্তের সময় গ্রামবাসী ও স্থানীয় নারীদের সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ পায়নি বলেও প্রতিবেদনে দাবি করেছে তদন্ত কমিশন।
উল্লেখ্য, ওই কমিশনের প্রধান এমন একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, যাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ কালো তালিকাভুক্ত করেছে।
এ প্রতিবেদনের বিপরীতে এইচআরডব্লিউ একে ‘পদ্ধতিগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করে বলেছে, ‘এটি পূর্ব-নির্ধারিত উপসংহারে পৌঁছানোর এক ধ্রুপদী উদাহরণ। আন্তর্জাতিক চাপ নিরসনের জন্য যেখানে দেখানো হয়, অবস্থা অতোটা খারাপ নয়।’
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৮৫ জন বেসামরিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনও বিবরণ জানানো হয়নি।
আরো উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবরের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া।
জাতিসংঘের মতে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের জের ধরে সংঘর্ষে রাখাইন রাজ্যে নিহতের সংখ্যা অন্তত ৮৬ জন। এখন পর্যন্ত ঘরহারা হয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। পালাতে গিয়েও গুলি খেয়ে মরতে হচ্ছে তাদের। মিয়ানমারে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস করে। রাখাইন রাজ্যে এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির পরেও চলমান দমন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে দায় এড়াতে চাইছে দেশটির সরকার। রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘর পোড়াচ্ছে বলেও দাবি করছে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ‘জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়ার’ ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়েছে বলে একাধিকবার অভিযোগ করে এইচআরডব্লিউ। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে তারা এ দাবি জানায়। সূত্র : আল-জাজিরা।
জাতিসংঘের দল আসছে ঢাকায় : রোহিঙ্গাদের দেখতে যাবেন কক্সবাজারে
কূটনৈতিক সংবাদদাতা জানান, রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে এবার বাংলাদেশে আসছে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল। চলতি মাসের এ সফরে তারা সরকারী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্টদের সাথেও সাক্ষাৎ করতে পারেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  
সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর হামলার কারণে ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গারা মুসলিম এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী ধর্মীয় কারণেই হামলা চালিয়ে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে কেউ রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখার জন্য বাংলাদেশে আসতে চাইলে বাংলাদেশ তাদের স্বাগত জানাবে। জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল আসার পরে তারা তাদের মতো করে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেবে এবং প্রয়োজন হলে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথেও আলোচনা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তবে তিনি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। জাকার্তাকে এ বিষয়ে আরও সংবেদনশীল হওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের মানবেতর অবস্থায় সরব আসিয়ানের আরেক সদস্য দেশ মালয়েশিয়া। দেশটি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধসহ তাদের সাথে মানবিক আচরণের আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমার সরকারের প্রতি। এই ইস্যুতে আলোচনার জন্য মালয়েশিয়া ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) জরুরি বৈঠকও আহবান করেছে। আগামী ১৯ জানুয়ারী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশও এ বৈঠকে অংশ নেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমারের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ