Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইয়াবার সব পথ বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাদকের সর্বনাশা ছোবলে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে পুরো সমাজ। লাখ লাখ যুবক, তরুণ-তরুণী ইয়াবার মারণ নেশায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাকেই টালমাটাল করে তুলেছে। এমনিতেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশি-বিদেশি মদ, ভারতীয় ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইনসহ নানা ধরনের মাদকে আসক্ত বিভিন্ন বয়েসী মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। তবে বিশেষত: মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আসা ইয়াবা ট্যাবলেটের নেশা আমাদের যুব সমাজকে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে নাজুক পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মাদকের এই করাল গ্রাস থেকে নিজ পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করতে দেশের কোটি কোটি মানুষ চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছে। দেশে মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন ও ক্যাম্পেইন চললেও মাদকের বিস্তৃতি কমছে না। প্রতিদিনই বড় হচ্ছে মাদকের সিন্ডিকেট। বেড়ে চলেছে মাদক বিক্রেতা ও ব্যবহারকারির সংখ্যা। চাহিদাবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বিদেশ থেকে মাদক চোরাচালান বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশেই গড়ে উঠছে মাদকের কারখানা। গত কয়েক বছরে খোদ ঢাকা শহরেই অনেকগুলো ইয়াবা কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। ইয়াবা তৈরীর সাথে জড়িত ব্যক্তিরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তাদের কাছ থেকে মাদক সিন্ডিকেট সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ধারের কথাও শোনা গেছে। তবে মাদক সম্রাটরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। প্রভাবশালী মাদক সিন্ডিকেট শত শত কোটি টাকার মাদক ও ইয়াবা সম্রাজ্য তৈরী করে দেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে ঢাকা শহরে প্রায় একশ’ ইয়াবা কারখানা সক্রিয় রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহল জোরদার হওয়ার কারণে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান কমে আসার ফলে ভারতসহ ভিন্ন পথে ইয়াবা চোরাচালান বেড়ে গেছে। সেই সাথে বিদেশ থেকে ও স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ করে দেশেই ইয়াবা তৈরীর কারখানা স্থাপন অনেক বেশী লাভজনক ও নিরাপদ বলে মনে করছে ইয়াবা সিন্ডিকেট। গত এক বছর ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রস্তুতকৃত ইয়াবা, ইয়াবা তৈরীর কাঁচামাল ও সরঞ্জামসহ অন্তত: ৫টি কারখানায় হানা দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ইয়াবায় আসক্ত লাখ লাখ মানুষের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে মাদক সিন্ডিকেট। কাঁচা পয়সার এমন লাভজনক ব্যবসা’র সাথে জড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কেউ কেউ। এছাড়া ইয়াবার ব্যবহার, কেনাবেচা এবং সিন্ডিকেটেড ব্যবসায়’র সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্যেরও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
দেশে লাখ লাখ ইয়াবা আসক্তের মধ্যে অন্তত ৯০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায়। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেও বিভিন্ন সময় কঠোর মাদকবিরোধী অবস্থান এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এরপরও ঢাকাসহ সারাদেশে হাজার হাজার মাদক স্পটে ইয়াবাসহ মাদকের লেনদেন অনেকটা ওপেনসিক্রেট। মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য কারা, কোথা থেকে কিভাবে চালান আসছে এবং কোথায় কাদের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তা’ অজানা থাকার কথা নয়। মাদকের ক্রমবিস্তৃতি এবং মাদক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেও সাধারণ মানুষকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে। মাঝে মধ্যে ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ে, ইয়াবা তৈরীর কারখানাও ধ্বংস করা হয়, কিন্তু এসব অপকর্মের নেপথ্য হোঁতাদের তেমন কিছুই হয় না। যুবসমাজ ও নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনেক দেশেই দ্রুত বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের মত কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হলেই কেবল মাদকের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। সেই সাথে সীমান্তে মাদক চোরাচালানীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যে সব সদস্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মাদক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত তাদেরকেও খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। ইয়াবা ও মাদকের গ্রাস থেকে দেশের যুব সমাজকে রক্ষা করতে না পারলে, দেশের সব সম্ভাবনাই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইয়াবা


আরও
আরও পড়ুন