Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যানজটের প্রধান কারণ রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিং

| প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : রাজধানীর ভয়াবহ যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ সড়কের উপর গাড়ি পার্কিং। ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিল, কমলাপুর, আরামবাগ, ফকিরেরপুল, কারওয়ানবাজারসহ সংলগ্ন এলাকার কয়েকটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার স্থানে পরিণত হয়ে আসছে। এর সাথে যত্রতত্র বাস, কার, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যান পার্ক করার ফলে সড়কগুলোতে যানচলাচলের পথ কমে গেছে। অন্যদিকে, পথচারি হাঁটার স্থান দখলে রেখেছে হকাররা। এ কারণে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে বিঘœ ঘটে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের। বাড়ছে ভোগান্তি, নষ্ট হচ্ছে বিপুল কর্মঘণ্টা।
ছুটির দিন ব্যতীত সপ্তাহের ৫ দিনই  মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পর্যন্ত শত শত গাড়ি রাকা হয় সড়কের উপরেই। দিলকুশার বলাকা ভাস্কর্যের মোড় থেকে জনতা ব্যাংক ভবনের বিপরীতে এবং হোটেল পূর্বাণীর পেছন দিয়ে দিলকুশা পর্যন্ত সড়কেও রাখা হয় অসংখ্য গাড়ি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পাশের সড়ক, ডিবিবিএল ভবন ও গুলিস্তান ফ্লাইওভার সংলগ্ন রাস্তাসহ সচিবালয়ের সামনে ও প্রেসক্লাবের পূর্বপাশের রাস্তায় রাখা হয় ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক গাড়ি। এসব রাস্তার বেশিরভাগই দখলে থাকায় গাড়িগুলো নির্বিঘেœ চলতে পারে না।  
অন্যদিকে, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আরামবাগ মোড় ও পীর জঙ্গি মাজার সংলগ্ন এলাকায় সারি সারি বিআরটিসির গাড়ি রাখা থাকে। পুলিশের চোখের সামনেই এসব অবৈধ পার্কিং চলছে বছরের পর বছর।
শুধু মতিঝিল এলাকা নয় বরং ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব এলাকার চিত্র মোটামুটি একইরকম। ধারণক্ষমতার বাইরে মাত্রাতিরিক্ত গাড়ির ভারে রাজধানীর রাস্তাগুলোর অবস্থা যখন বেহাল তখন পার্কিং ছাড়াই শত শত ভবনের অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে রাজউক। এ প্রসঙ্গে রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাণিজ্যিক এলাকা তো বটেই এখন পার্কিং ছাড়া কোনো ভবনেরই অনুমোদন দেয়া হয় না। তবে একথা সঠিক যে অনেকেই রাজউকের নিয়ম মানছে না। বা মানানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে, রাস্তার ধারণ ক্ষমতা না থাকলেও বিআরটিএ পুরাতন লক্কর-ঝক্কর মার্কা গাড়িরও ফিটনেস সার্টিফিকেট দিয়ে চলেছে। এসব কারণে যানজট দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা মতিঝিলে গাড়ি পার্কিয়ের জন্য নির্ধারিত একটি স্থান আছে কিন্তু এখানে মাত্র চারশ গাড়ি পার্কিং করা যায়, যা চাহিদার তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল। এই সুযোগে এক শ্রেণির দালাল রাস্তা লিজ নেয়ার নাম করে অবৈধ পার্কিং করা গাড়ি থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে চলেছে পুলিশের চোখের সামনেই।
অন্যদিকে, গুলিস্তান এলাকায় গেলে বোঝার উপায় নেই কোনটা রাস্তা আর কোনটা মার্কেট। হকারদের দখলের চাপে এখানে সবকিছু মিলেমিশে একাকার। বরং গুলিস্তান ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে হকারদের দোকান বসানোর সুযোগ করে দেয়। গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের সংযোগ রাস্তায় পুলিশের একটি রেকার রেখে রাস্তা বন্ধ করে হকারদের বসতে দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। হকারদের সুবিধার্থে এখানে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। ভুক্তভোগীদের মতে, গুলিস্তানের অবৈধ পার্কিং ট্রাফিক পুলিশ যেমন তৎপর রাজধানীর অন্য এলাকাগুলোতে তার অর্ধেক তৎপরতা দেখালে যানজট অর্ধেক কমে যেতো। এদিকে,  রাজধনীর কারওয়ানবাজার, নিউমার্কেট গলিসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের বিনিময়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নাম ভাঙিয়ে স্লিপ দিয়ে টাকা তোলা হয়। যদিও সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করে থাকেন তারা কাউকে টাকা তোলার জন্য রাস্তা লীজ দেননি। জানা গেছে, কারওয়ানবাজারের আড়তের সামনে ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা তোলা হয়। স্থানীয় দোকানদারদের জন্য মাসিক চাঁদা কার ৫০০ টাকা, মোটর গাড়ি ১০০ টাকা, সাইকেল ৫০ টাকা আর অন্যদের জন্য কার (মাসিক) ১০০ টাকা, মোটর গাড়ি ২০০ টাকা, সাইকেল ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে জানান স্থানীয় দোকানদাররা। তারা জানান, মাসিক চুক্তি ছাড়া দৈনন্দিন ভিত্তিতে প্রতি ঘণ্টায় পিকআপ ১০ টাকা, মোটর সাইকেল ২ টাকা ও সাইকেল ১ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়। জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ হয়ে এই টাকা তোলা হলেও এর কিছু অংশ পায় উত্তর সিটি কর্পোরেশন। বাকী টাকা যায় স্থানীয় সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশের পকেটে।  
ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা শহরে অবৈধ পার্কিং থেকে মাসে প্রায় দুই কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য প্রতি মাসে ট্রাফিক পুলিশ ৬০ থেকে ৭০ হাজার মামলা করে। এসব মামলা থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ওই কর্মকর্তার মতে, ঢাকা শহরে যে হারে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে সে হারে রাস্তা বাড়ছে না। পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও অপ্রতুল। সিটি কর্পোরেশনের উচিত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা। তা না হলে আইন করে বা জরিমানা করে এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা না গেলে যানজটও নিরসন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।



 

Show all comments
  • Farid Mia ১০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:১৩ এএম says : 0
    Yes
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ময়লা

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ নভেম্বর, ২০২১
৯ নভেম্বর, ২০২১
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
১১ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ