Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কর্মদিবসে ফুটপাতে হকার বসতে দেয়া হবে না সাঈদ খোকন

আগে পুনর্বাসন, পরে উচ্ছেদ করুন হকার নেতৃবৃন্দ

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার রাস্তা ও ফুটপাতে আগামী রোববার থেকে কর্মদিবসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার আগে কোনো হকার বসতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, সাপ্তাহিক কর্মদিবসে রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিলসহ ঢাকার কোনো এলাকায় জনগণের চলাচলের পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। অফিস ছুটির দেড় ঘণ্টা পর অবস্থানভেদে হকাররা তাদের ব্যবসা করতে পারবে।
গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত হকার্স পুনর্বাসন ও হলিডে মার্কেট চালু প্রসঙ্গে হকারদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সাঈদ খোকন বলেন, লাইনম্যানধারীরা আসলেই চাঁদাবাজ। হকার নেতাদের তালিকা অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, হকারদের আইডি কার্ডের একটা প্রস্তাব এসেছে আমরা সেটা চালু করতে পারি।
মেয়র বলেন, হকারদেরও সংসার আছে। তাদের মানবিক বিষয়টি চিন্তা করে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অফিস টাইমের পর প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট থেকে হকাররা গুলিস্তান-মতিঝিল এলাকায় বসতে পারবেন।
তিনি বলেন, রাজধানীতে নতুন করে হলিডে মার্কেট চালু করা হয়েছে। হকাররা সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও শনিবার মার্কেটগুলো অস্থায়ীভাবে জনসাধারণের জন্য খোলা রাখবে। কাপড়, প্রসাধনী, জুতা, গৃহস্থালি ও নিত্যব্যবহার্য সকল প্রকারের জিনিস অস্থায়ী এসব বাজার থেকে সুলভ মূল্যে ক্রেতারা কিনতে পারবেন। আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে গুলিস্তানের রাস্তায় ও ফুটপাতে কোনো ধরনের হকার বসতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, হকারদের পুনর্বাসনের জন্য একটি করে টোকেন দেয়া হবে। টোকেন নেওয়ার আগে সিটি কপোরেশনকে তারা রাজস্ব পরিশোধ করবে। প্রথমে গুলিস্থান-মতিঝিল থেকে হকার উচ্ছেদ করা হবে। পরে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ফুটপাতকে হকার মুক্ত করা হবে।
মেয়র বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব জনগণের চলার জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত করা। আমরা যদি এই নির্দেশনা না মানি তাহলে আদালতের অবমাননা হবে।
তিনি বলেন, হকারদের পুনর্বাসনের জন্য আইন প্রণয়ন করা হবে। হকারদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে পরিচয়পত্র দেয়া হবে। সেই পরিচয়পত্র দেখে তারা হলিডে মার্কেটের মতিঝিল, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম ও মতিঝিল এলাকায় বসতে পারবেন। ভারতে ১৮টি প্রদেশে এই রকম আইন পাশ করা হয়েছে।
মেয়র বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে হকাররা ফুটপাতে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। কিন্তু সাপ্তাহিক কর্মদিবসে দিনের বেলায় ফুটপাত এবং রাস্তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। কর্মদিবসে দিনের বেলায় গুলিস্তান ও তার আশপাশের এলাকায় কোনো হকার বসতে দেয়া হবে না। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। এটা নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএসসিসিকে সহযোগিতা করবে।
খোকন বলেন, এ সিদ্ধান্ত আগামী রোববার থেকে কার্যকর হবে। যদি কোনো হকার এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাহলে সিটি কর্পোরেশনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করবে।
মেয়র বলেন, যারা তালিকাভুক্ত হকার তারা যদি ইচ্ছা করেন পেশা পরিবর্তন করে চাকরি বা বিদেশ যেতে চান তারা আমাদের কাছে আবেদন করতে পারেন। আমরা সরকার বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের বিদেশ যাওয়া বা চাকরির জন্য সুপারিশ করব। যদি স্থানীয়ভাবে তাদের চাকরির জন্য কোনো সুযোগ থাকে তাহলে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
মেয়র বলেন, আজকের এই সিদ্ধান্ত আগামী রোববার থেকে কার্যকর করা হবে। এ বিষয়ে ডিএমপি ডিএসসিসির প্রয়োজন অনুযায়ী সার্বিক সহযোগিতা করবে।
এদিকে মতবিমিনয় সভায় হকারদের আগে পুনর্বাসন করে পরে উচ্ছেদ বা অন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানিয়েছেন হকার নেতারা। তারা বলেন, সিটি কর্পোরেশন মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান করে হকার্সদের উচ্ছেদ করা হয়। তারা তো গরীব মানুষ। উচ্ছেদ করলে তারা কোথায় যাবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল ওয়াহাব ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ হকার ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম, বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন মজুমদার, জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরিফ চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম প্রমুখ।
হকার নেতারা বলেন, রাস্তা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করলে তারা কোথায় যাবেন? আগের তাদের পুনর্বাসন করুন, পরে উচ্ছেদ করুন।
বাংলাদেশ হকার্স ফেড়ারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, প্রতিটি ফুটপাতে একজন করে লাইনম্যান চাঁদাবাজ থাকেন। একটা ফুটপাতে ১০০ জন থাকলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন একজন লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজ। এ লাইনম্যানকে নিয়ন্ত্রণ করেন অসাধু প্রশাসনের লোক ও অসাধু রাজনীতিবিদরা। চাঁদাবাজরা দোকান প্রতি দুই লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন।
তিনি বলেন, হলিডে মার্কেট নয়, আমরা বিভিন্ন মার্কেট যেদিন বন্ধ থাকে, ওইদিন ওই এলাকায় বসতে চাই। আমাদের তালিকাভুক্ত হকারদের একটি পরিচয়পত্র দেয়া হোক। আমরা নগর ভবনেই বন্ধের দিনে বসতে চাই। চাঁদা দিলে নগর ভবনকেই দেবো। এভাবে যেসব মার্কেট যেদিন বন্ধ থাকবে, সেদিন ওখানে হকারদের বসার ব্যবস্থা করে দিন।
লাইনম্যানের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমরা লাইনম্যান উঠিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু যেখানে বিনা পয়সায় ব্যবসা করার সুযোগ থাকে, সেখানে এ ধরনের অসাধু লোক তৈরি হবেই। তাই হকারদের একটা নীতিমালায় আনা দরকার। তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মহানগরে ৮ থেকে ৯ লাখ হকার রয়েছেন। দক্ষিণে এ সংখ্যা ৫ থেকে ৬ লাখ। এখানে সবাই গরিব, নিরীহ। তাদের সামান্য আয়। আমরাও চাই, রাস্তা হকারমুক্ত থাকুক। তবে সরকারি যেসব জায়গা রয়েছে, সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা করা হোক। আগে হকারদের পরিচয়পত্র দেয়া হোক।
তিনি বলেন, আজ হকারদের একটি জায়গায় বসতে এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা দিতে হয়। তারা কারা? তাদের চিহ্নিত করুন। হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। তারা কোথায় যাবেন? তারা মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঢাকায় থাকেন।
জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। হলিডে মার্কেট নিয়ে হকারদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। হকাররা হলিডে মার্কেটে গেলে ফুটপাতে বসতে পারবেন কি-না?
তিনি বলেন, হকারদের পরিকল্পনামাফিক বসাতে হবে। এর জন্য একটি নীতিমালা থাকা দরকার। হকারদের কার্ড দিতে হবে। তারা সিটি কর্পোরেশন থেকে কার্ড নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বসবেন। এজন্য আইন করতে হবে। যদি আইন তৈরি করা না যায়, তাহলে দিন দিন হকার বাড়বে।
মতবিনিময় সভায় হকার নেতারা বলেন, সরকার বা সিটি কর্পোরেশন সপ্তাহে একদিন নির্দিষ্ট ৫টি স্থানে হলিডে মার্কেট চালু করেছে। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক। কিন্তু সপ্তাহের বাকি ৬টি দিন আমরা কি করবো? কি খাবো? হকারদের তো পরিবার রয়েছে। এজন্য তাদেরকে পুনর্বাসন করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ