Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিশু হাবিব ফিরে এলো মায়ের কোলে

‘বংশের প্রদীপ’ জ্বালানো হলো না !

| প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : আহসান হাবিব। বয়স মাত্র তিন বছর। এ বয়সে তার জীবনে ঝড় বয়ে গেছে। তাকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে লাখ টাকায়। নিজেদের পুত্র সন্তান না থাকায় ‘বংশের প্রদীপ জ্বালাতে’ তাকে কিনে নেয় একটি বিত্তশালী পরিবার।
শিশুটিকে তারা রাজসিক কায়দায় বরণ করে। শুরু করে আদর-যতœ। তবে কোন কিছুই তার শিশু মনকে গলাতে পারেনি। টানা বিশ দিন অসহনীয় যন্ত্রনায় ছটফট করেছে শিশু হাবিব। মায়ের কাছে ফিরে যেতে তার কান্না কেউ থামাতে পারেনি। অনেক খেলনা আর দামি দামি খাবারে মায়ের মুখ ভুলেনি সে। অবশেষে গতকাল শুক্রবার তাকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আর এই শিশুটিকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়েছে যারা তাদেরও পাকড়াও করা হয়েছে। মাকে দেখে তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাবিব। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন  মা। হালিমা আকতারের ওই আনন্দ অশ্রু দেখে পুলিশের চোখেও পানি আসে।
চাঞ্চল্যকর এই অপহরণ ও শিশু বিক্রির ঘটনাটি নগরীর চান্দগাঁও থানার। আহসানের মা হালিমা আকতার রেখা। হাবিব যখন তার গর্ভে তখনি স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি। স্বামী চলে যান বরিশালে। রেখা থেকে যান চট্টগ্রামে। কখনো ভিক্ষা করে আবার কখনো গৃহকর্মীর কাজ করে মা-ছেলের কেটেছে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময়। মাস দুয়েক আগে পরিচয় হয় নোয়াখালীর সুধারাম থানার দেবিপুর-নেওয়াজপুরের আকাশের রহমান খোকার সঙ্গে।
আকাশ অহসায় রেখার পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেয়। রাজি হয় রেখা, কারণ তার সহায় দরকার। এখন রেখা বুঝতে পেরেছে আকাশের পাশের দাঁড়ানো ছিল ফাঁদ। সে আসলে প্রেমের অভিনয় করেছে।
রেখা জানান, আকাশকে বিশ্বাস করে তিনি তাকে বিয়ে করতে রাজি হন। একপর্যায়ে বিয়ের পাকা কথা দেন। চান্দগাঁও ফরিদের পাড়ার খলিল মাস্টারের বাড়িতে ঘরভাড়া নেয় আকাশ। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর মতো সংসার শুরু করেন তারা। এদিকে রেখা চাপ দিতে থাকেন বিয়ের। আকাশ গড়িমসি করে।  একপর্যায়ে ২৭ ডিসেম্বর হঠাৎ হাওয়া হয়ে যান আকাশ। একই সময় থেকে রেখার ছেলে আহসান হাবিবও নিখোঁজ। অনেক খোঁজ করেও বিফল হয়ে রেখা দ্বারস্থ হন পুলিশের। ৬ জানুয়ারি সাধারণ ডায়েরি করেন চান্দগাঁও থানায়। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল কাদের।
এসআই আবদুল কাদের বলেন, রেখার কাছে ঘটনা শুনে আকাশকে আমরা সন্দেহ করি। আমরা প্রথমে আকাশের মোবাইল ফোনের অবস্থান শনাক্ত করি। এরপর আকাশের গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করি। আকাশ স্বীকারোক্তি দেন যে, আহসান হাবিব নামের শিশুটি এক লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে।
এরপর আমরা শিশুটির প্রথম ক্রেতা হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ বটতলী এলাকার সিরাজ ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার কথা মতো ফটিকছড়ির দোলন শীল-রেখা শীল দম্পতির কাছে যাই। তারা জানায় শিশুটি বর্তমানে রাউজানের সুলতানপুর মাহেন্দ্র কবিরাজ বাড়ির লিটন শীল-নীল শীল দম্পতির ঘরে পালিত হচ্ছে। কারণ তাদের একটি কন্যা সন্তান থাকলেও বংশের প্রদীপ হিসেবে ছেলেটিকে লালন-পালন করছেন। পরে সেখানে গিয়ে শিশুটি উদ্ধার করে গতকাল ম্যাজিস্ট্রেটের জিম্মায় দিয়ে দিই। শিশু অপহরণের ঘটনায় রেখা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান এসআই আবদুল কাদের।         
 গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা হলো নোয়াখালির মাইজদীর আশেকুর রহমান খোকা ওরফে আকাশ (৩৮), হাটহাজারীর সিএনজি চালক সিরাজ ড্রাইভার, ফটিকছড়ির দোলন শীল ও রেখা শীল রাউজানের নীলিমা শীল। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
অভিযানে অংশ নেওয়া একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দরিদ্র  মায়ের শিশুটিকে তারা অনেক আদর সোহাগ করেও তার কান্না থামাতে পারেনি। মায়ের কোলে এসে সে আবার হাসতে শুরু করেছে। ‘বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃকোরে’ এ কথাটির বাস্তব রূপ দেখলাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ