Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দর্শনা কেরু চিনিকলের আবাসিক কোয়ার্টারসহ শতাধিক স্থাপনা

ছাদ ও দেয়ালে ফাটল, খসে পড়ছে প্লাস্টার

| প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) উপজেলা সংবাদদাতা : দর্শনার কেরু চিনিকলের মিল ক্যাম্পাসের মিলহাউস, জেনারেল অফিস, ডিস্টিলারি বিল্ডিং, আবাসিক কোয়ার্টার, হাইস্কুল বিল্ডিংসহ শতাধিক স্থাপনা মারত্মকভাবে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। গত বছর মিল বাউন্ডারির ৩টি পুকুর থেকে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করে বিপুল পরিমাণ বালি উত্তোলনের ফলে এ আশঙ্কা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্পেও এসব স্থাপনা ধসে পড়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদহানিসহ মিলের কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারীসহ শত শত মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শত শত মানুষের জানমাল রক্ষার্থে চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভুক্তভোগিদের। ১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল ও ডিস্টিলারির সমন্বয়ে কেরু এন্ড কোম্পানি স্থাপিত হয়। ওই সময় কেরু এন্ড কোম্পানি ক্যাম্পাসে মিলহাউস, জেনারেল অফিস ও ডিস্টিলারি বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। সেই সাথে মিল কর্তৃপক্ষ মিলের শ্রমিকদের আবাসন সুবিধা দিতে মিল বাউন্ডারিতে আবাসিক কোয়ার্টার ও তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সমন্বয়ে একটি স্কুল নির্মাণ করে। একদিকে বয়সের ভার ও সেইসাথে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে পৌনে একশ বছর আগে নির্মিত এসব স্থাপনার বেশিরভাগই বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফাটল ধরেছে ছাদসহ দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে। সারা বছরই খসে পড়ে দেয়ালসহ ছাদের প্লাস্টার। চাকরির স্বার্থে অনেকটা বাধ্য হয়েই জ্বরাজীর্ণ এসব বিভিন্ন ভবনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শত শত শ্রমিক। অনেকের অভিমত, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের কোথাও স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হলেও এসব জ্বরাজীর্ণ ভবনের বেশিরভাগই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পর ভূ-তত্ত্ববিদরা বাংলাদেশেও যেকোন সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন যা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিলের আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাসকারীদের বেশ কয়েকজন জানান, প্রায় এক যুগ আগে গণপূর্ত বিভাগ এসমস্ত কোয়ার্টার পরিত্যক্ত হিসাবে চিহ্নিত করে কেরু কর্তৃপক্ষকে জানায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কেরু কর্তৃপক্ষ বিষয়টি চেপে রেখে নুতন করে আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ না করে এসব পরিত্যক্ত কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করছে। আর শ্রমিকরাও চাকরির স্বার্থে অনেকটা বাধ্য হয়েই মাসে মাসে মোটা অংকের ভাড়া পরিশোধ করে জীবনের ঝুঁকির মধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে এ সমস্ত পরিত্যক্ত ভবনেই বসবাস করছেন। বিগত আশির দশকে বাউন্ডারির রেলবাজার সংলগ্ন স্থানে দোতলা ভবন নির্মিত হয়। ভবনটি নির্মাণে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও ঠিকাদারের নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারের কারণে অল্প সময়েই এর আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ৪/৫টি পরিবার এ ভবন ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। ভবনে বসবাসকারীরা জানান, ভবনের অবস্থা এতই খারাপ যে, বর্ষাকালে এখানে বসবাস করার মতো কোন অবস্থা নেই। দীর্ঘদিন এভাবে চললেও এ ব্যাপারে মিল কর্তৃপক্ষের কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ অনেকের। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও শত শত মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এ ব্যাপারে কেরু এন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন বলেন, সমস্যা সমাধানে আমরা চারটি বড় বিল্ডিং নির্মাণের জন্য কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। যেগুলো বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ