Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিম্নবিত্তদের দুর্ভোগ চরমে গফরগাঁওয়ে শীতবস্ত্র ও লেপ বিক্রির ধূম

| প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গফরগাঁও থেকে মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ : গফরগাঁও উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে গত কয়েকদিন যাবত একটানা হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। প্রচÐ এই শীতে শিশু ও বয়ষ্করা কাবু হয়ে পড়েছেন সবচেয়ে বেশি। শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছেন গরিব শ্রেণির মানুষ। বিগত বছরগুলোতে সরকারিভাবে না মিললেও বিভিন্ন সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান কিছু কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করত। কিন্তু এবার তেমনটি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। অপর দিকে, উপজেলা প্রশাসন থেকে গত কয়েকদিন ধরে কিছু কিছু কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। যা অপ্রতুল এ অবস্থায় অসহায় লোকেরা আগুনের তাপ দিয়ে শীত নিবারণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এবার পৌষ মাসের শেষ দিক দিয়ে শীতের তীব্রতা বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। আর গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার শুরুতেই এই তীব্রতা অনেক বেশি বলে বিশেষ করে বয়ষ্ক লোকেরা মন্তব্য করেন। দরিদ্র লোকদের সমস্যা হয় বেশি। তাদের পক্ষে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করা আদৌ সম্ভব নয়। গফরগাঁও উপজেলার ৪ নম্বর সালটিয়া ইউনিয়নের ষোলহাসিয়া গ্রামের রিকশাচালক মো. আফাজ উদ্দিন (কডি) জানান, প্রতিবছর বিভিন্ন লোকজনের মারফত কিছু না কিছু কম্বল, চাঁদরসহ বিভিন্ন গরম কাপড় পাওয়া যেত, কিন্তু এবার তাদের ভাগ্যে এসব কাপড় জোটেনি। অনেকেই আবার আমন ধানের খড় তাদের শীতের হাত থেকে কিছুটা বাঁচিয়েছে। গোটা রাত অগ্নিকুÐের তাপ নেয়ার জন্য জেগে থাকা সম্ভব হয় না। তবে রাতের বেশির ভাগ সময় তারা অগ্নিকুÐে ঘিরে থাকে কেবল শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এভাবে রাত জেগে এবং শেষ রাতের ঠাÐায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে । গফরগাঁও শাখা হাম দর্দের প্রতিনিধি ওয়াদুদ জানান, প্রচÐ ঠাÐার কারণে অনেকেই সর্দি, জ্বরসহ বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। গত কয়েকদিন যাবত ঘন কুয়াশার আচ্ছ¡াদনে প্রকৃতি ঢাকা পড়ে। সূর্য হয়ে পড়ে অদৃশ্য। প্রায়ই সারাদিনেই এই অবস্থা চলতে থাকে। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচলে দেখা দিয়েছে মহাসমস্যা। গত কয়েকদিন ধরে লোকাল, মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেন কুয়াশার কারণে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। রাত ও সকালে সামনের কিছু দেখা যায় না বিধায় যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে কচ্ছপ গতিতে। ফলে যে কোনো সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ভয়াবহ শীতের কারণে সন্ধ্যার পরে ও সকালে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মানুষজন শীতের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য বাড়িঘরে আগে ভাগেই আশ্রয় নিচ্ছেন। ইদানিং পুরাতন গরম কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গফরগাঁও রেল স্টেশনে ফুটপাতের দোকানদার মো. তাইজু উদ্দিন জানান, তীব্র শীতের ফলে পুরাতন শীতের কাপড় পুরোদমে বিক্রি বেড়ে গেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবারের পুরাতন কাপড়রের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েকদিন যাবত গফরগাঁও উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ছোট-বড় হাটবাজারগুলোতে লেপ বানানো পুরোদমে ধুম পড়েছে। তুলা ও কাপড়ের দাম আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ (বাবেল) এমপি স¤প্রতি তীব্র শীতের মধ্যে হতদরিদ্রদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কম্বল বিতরণ করেন । এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দিন (বাদল) , গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র ইকবাল হোসেন (সুমন) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধার্থ শংকর কুÐু। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. রেজাউল করিম বলেন, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে গফরগাঁও পৌরসভা ও উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ছয় হাজার ৭০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে অসহায় ও হতদরিদ্রদের মধ্যে। তবে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে আরো কম্বল সরকারিভাবে বৃদ্ধি করা দরকার। তাহলেই কিছুটা চাহিদা পূরণ হতে পারে। চলতি নতুন বছরের জানুয়ায়ির-১৭ থেকে পুরোপুরি পৌরসভাসহ গোটা ১৫টি ইউনিয়নের আবহমান গ্রামবাংলার আমন ধান রোপণের জন্য পুরোদমে ব্যস্ত হন কৃষকরা। দিন-রাত পরিশ্রম করে এ ফসলের দিকে তাদের মনোযোগ থাকে। তবে তীব্র শীতের জন্য দিনমজুর পাওয়া যাচ্ছে না। যা-ও পাওয়ার যায়, তাদেরকে তিন বেলা খাওয়ানোর পর ৪০০ টাকা দৈনিক দিতে হয়। জামালপুর জেলার ইসলামপুরের শ্রমিক মো. নিজামুল হক জানান, কাজ করার জন্য গফরগাঁও এসেছিলাম বড় আশা নিয়ে, শীতের কাপড় আমার নেই। কিন্তু ভয়াবহ শীতের জন্য কাজ করার সাহস পাচ্ছি না। তবে ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে গফরগাঁও উপজেলা হলো কৃষিপ্রধান বৃহত্তর উপজেলা। প্রতি বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। বোরো ফসলের জন্য গোটা উপজেলার প্রত্যন্ত আবহমান গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে আন্ডারগ্রাউন্ডের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হলে পানির অপচয় রোধ হতে পারত। চলতি বোরো ফসল করার জন্য কৃষকদেরকে সব সরকারি ব্যাংকগুলোতে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া সার্কুলার জারি হয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে। গফরগাঁও শাখা রূপালী ব্যাংকের ম্যানেজার (প্রিন্সিপাল অফিসার) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, প্রকৃত জমির কৃষকদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্য রূপালী ব্যাংক থেকে আমরা সহযোগিতা করছি। উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম ফারহানা হোসেন জানান, বছরের প্রধান লাভজনক ফসল হচ্ছে বোরে। তাই এ ফসলকে আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তবে আমাদের মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের(বিএস) কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। বোরো ফসল উঠা পর্যন্ত সরেজমিন মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে। কৃষি অফিসার এস এম ফারহানা হোসেন আরো জানান, আশা করি বিগত বছরের তুলনা এবারও বোরোর ফসল বাম্পার ফলন হতে পারে। যদি আল্লাহ রহমতে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকে। তবে ভয়াবহ শীতের ফলে শীতকালীন শাকসবজি ফলন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। গফরগাঁও পাট মহলের চাল মহলের চাল ব্যবসায়ী মো. মুজিবুর রহমান খান বলেন, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। গত বছর বোরো চালের দাম অনেক কম ছিল। ময়মনসিংহ-২ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (আরইবি) গফরগাঁও উপজেলার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আলহাজ আসাদুজ্জামান জানান , এবারের শীতের মধ্যে বোরো ফসলের জন্য আশা করি তেমন একটা লোডশেডিং থাকবে না। অনেক সময় বিশেষ কোনো কারণে সীমিত সময়ের জন্য লোডশেডিং হতে পারে। উত্তর হারিনা গ্রামের তাহমিনা আনোয়ার জানান, এবারে কিছু বোরো ফসল করেছি। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে ভালো ধান পেতে পারি। উল্লেখ্য, শীতের ফলে উপজেলা সদরসহ আবহমান গ্রামবাংলার চায়ের দোকান ও বাজারে শীতে প্রিয় উৎসবের ‘ভাপা পিটা’ সহ হরেক রকমের পিঠা বিক্রির ধূম পড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধূম

৪ নভেম্বর, ২০২২
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ