Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সমুদ্রের গর্জনে সাতদিন

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থীরা ক্লাইমেটিক হ্যাজারড ও ট্যুরিজমের এর উপর একটি গবেষণাকাজে ঘুরে এসেছে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন। তবে ল্যাব ট্যুর হলেও সেটি শুধুমাত্র পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। আনন্দ উৎসব, হৈ-হুল্লোড়ে কেটে যাওয়া সাতদিনের গল্প জানাচ্ছেন আনিসুর রহমান বায়েজিদ ও তন্বী তনয়া সরকার। পুনঃলিখেছেন মেহেদী কবীর।
ব্যাচের ২১ জন শিক্ষার্থী ও ২ জন শিক্ষক নিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করে ক্যাম্পাস থেকে যাত্রা শুরু। ট্রেনে করে প্রথমে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে বাসে কক্সবাজার। গিয়েই স্যার আমাদের ছোট একটা কাজ ধরিয়ে দিলেন। এদিকে পাশ থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে বিশে^র সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত। কোনরকমে কাজটা শেষ করেই সাগরের ডাকে সাড়া দিতে সৈকতের দিকে ছুট দিলাম সবাই। সামনে বিশাল সমুদ্র আর সূর্যাস্তের সেই পূর্ব মুহূর্ত। অভিভূত হয়ে তাকিয়ে রইলাম দিগন্তের দিকে। সন্ধ্যার সময়েই নেমে পড়লাম সাগরের জলে, নিজেদের ভাসিয়ে দিয়ে পথের সব ক্লান্তি দূর করে দেওয়ার জন্য। এরপর হোটেলে ফিরে পুনরায় আবার বের হলাম। এবারের গন্তব্য সুগন্ধা বিচ। যাওয়ার পথে রাস্তার দুই দিকে বেশ কিছু খাবারের দোকান আছে, যেখানে টাটকা মাছ পছন্দ করে দিলে চোখের সামনে ভেজে পরিবেশন করে দেয়। সেখানে বিভিন্ন রকমের রূপচাঁদা, ইলিশ, চিংড়ি, কাঁকড়া থেকে শুরু করে লবস্টার, সুন্দরি, টুনা, ফ্লাইংফিস, কোরালসহ আরো নানা রকমের মাছ পাওয়া যায়। দাম ও খুব একটা বেশি নয়। সবাই সেখানেই টাটকা সামুদ্রিক মাছ দিয়ে নাস্তাটা সেরে নিলাম।
পরদিন সকালের বাসে টেকনাফ ও সেখান থেকে জাহাজে চেপে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌছঁতে দুপুর পার। পথিমধ্যে জাহাজের ডেক থেকে দেখা নাফ নদী, সিগাল পাখির ডাক ও তাদের আমাদের পিছু পিছু চলা, ট্রলারের শব্দ ও হঠাৎ করে দেখা নদীর মোহনায় প্রিয় দারুচিনি দ্বীপটি যেন অদ্ভুতভাবে ডাকছিল আমাদের। জাহাজ থেকে নামার পর কটেজে যাওয়ার রাস্তায় দুপাশের খাবারের দোকান, সামুদ্রিক মাছ ভাজার গন্ধ আমাদের ক্ষুধা বাড়িয়ে দিতে থাকে। বিচের সাথে লাগোয়া কটেজ থেকে মনে হয় নামলেই সমুদ্র। সেই সাথে হ্যামকে শুয়ে সমুদ্র দেখার মজা। সামনে পাথর, কোরাল যেমন আছে, তেমনি সহজে নামার জন্য ফাকা জায়গাও আছে। এখানকার টাটকা সামুদ্রিক মাছ, কাকড়া ও লবস্টার ভাজা অত্যন্ত সুস্বাদু। এছাড়া কচি ডাবের পানি ও কচি নারিকেলের নাম তো বিশ^জুড়ে। এ দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ হলো সৈকতে সাইকেল চালানো। সৈকত দিয়ে পুরো দ্বীপটা সাইকেলে ঘুরতে তিন ঘণ্টার মত সময় লাগলো।
পর দিন সকালে আমরা বোটে করে বাংলাদেশের শেষ প্রান্ত ছেড়া দ্বীপে যাই। সেখানের কেয়া বন, স্বচ্ছ পানি, পানিতে মাছের ঝাঁক ও কিছু স্থানে সাগরের ¯্রােত মনোমুগ্ধকর। এত ঘুরাঘুরির সাথে সাথে আমাদের কাজও চলছিল সমান তালে। সেন্ট মার্টিন্সে আমরা দুই রাত থাকার পর পুনরায় জাহাজে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা।
আগে পরে মিলিয়ে কক্সবাজারে আমরা সর্ব মোট চার দিন ছিলাম। সেখান থেকে চলে আসতে স্বাভাবিকই সবার খারাপ লাগছিল। অনেক স্মৃতি তৈরি হয়েছে সেখানে। এত দিন সবাই এক সাথে মজা করা, ঘুরাঘুরি আর আড্ডা দেওয়া সবারই খুব মনে পড়বে। এত কিছুর ভিড়ে সমানতালে ল্যাবের কাজ চলছিল আমাদের। ফেরার দিন সকালে আবার সৈকতে গিয়েছিলাম আমরা, উদ্দেশ্য সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলা। সাত দিনের ট্যুর শেষ করে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। তবে মন যেন পড়ে রইল কলাতলি, সুগন্ধা, লাবণী, হিমছড়ি, ইনানি বিচে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ