Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল

মোহাম্মদপুর ও বাড্ডা থানায় পৃথক মামলা

প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : মোহাম্মদপুর এবং বাড্ডা থানায় বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে এ দুটি মামলা দায়ের করে ডিবি পুলিশ। মামলার আসামি করা হয়েছে কামাল ওরফে শাহীন ও শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন নামে দুই জঙ্গিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ডিবি ডিসি (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বড় ধরনের নাশকতা ও হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। জঙ্গিদের আস্তানায় ডিবি পুলিশের অভিযানে বোমা, গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার এবং তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। তবে বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, বড় ধরনের নাশকতার পাঁয়তারা করছিল জঙ্গিরা। এরা রাজধানী ও আশপাশ এলাকায় আস্তানা গড়ার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। মোহাম্মদপুর ও বাড্ডা থানা এলাকা থেকে বোমা, গ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের পর দেশে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি সকলের নজরে আসে। আবারো আলোচনায় ওঠে এসেছে জঙ্গি ইসু। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, উত্তরাসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছিল। বিশেষ করে মোহাম্মদপুরেই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান কার্যালয়ের সন্ধান পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা একটু নড়েচড়ে বসেছেন।
মোহাম্মদপুরের ওই বাড়িতে অভিযান পর কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, বিগত সময়ের অভিযানগুলোতে যে ধরনের বোমা পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলোর চেয়ে এবারের অভিযানে উদ্ধার হওয়া গ্রেনেডগুলো অনেক শক্তিশালী। এখানে পাঁচ ধরনের বোমা পাওয়া গেছে। আর এগুলো আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ফর্মুলায় তৈরি। ছয়তলা ভবনটির পাঁচতলায় একটি ফ্ল্যাটে বোমা তৈরি করা হতো। বাড্ডার জঙ্গি আস্তানাটি মূলত আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের হেডকোয়ার্টার্স হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর মোহাম্মদপুরের বাসাটি তাদের বোমা তৈরির কারখানা। তিনি বলেন, পুলিশ অভিযানে গিয়ে দেখতে পায়, দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ‘বিপজ্জনক’ লেখা কাগজের একাধিক টুকরা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিছানাসহ ফ্ল্যাটের বিভিন্ন স্থানে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় বোমার নানা সরঞ্জাম ছিল।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ গতকাল বলেছেন, পলাতক জঙ্গিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বাড্ডাসহ কয়েকটি জায়গায় জঙ্গিদের অবস্থানের তথ্য পেয়েছি। তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরে উদ্ধার হওয়া গ্রেনেড ও বোমাগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। জঙ্গিদের এ ধরনের আর কোন আস্তানা আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রথমে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড্ডার সাতারকুল এলাকায় অভিযানকালে জঙ্গিদের হামলায় আহত হন ডিবির ইন্সপেক্টর বাহাউদ্দিন ফারুকী। সেখান থেকে দুই জঙ্গিকে আটক করা হয়। তারা হল কামাল ওরফে শাহীন (২৬) ও শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন (৩০)। তারা দু’জনই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে কামাল জানায়, বাড্ডা তাদের হেড অফিস এবং শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন মোহাম্মদপুরের বাড়িটিতে থাকেন, যেখানে তাদের বোমা তৈরির কারখানা। এরপর শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের প্রধান সড়কের বি ব্লকের ২৮ নম্বর বাড়ির ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এই অভিযানে অংশ নেয়া একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ আসার খবর পেয়ে দ্রুত সটকে পড়ে জঙ্গি সদস্যরা। শুক্রবার রাত ১১টা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত প্রথম দফার অভিযান চালায়। গতকাল শনিবার সকাল থেকে ফের দ্বিতীয় দফার অভিযানে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সঙ্গে ডিবির একটি টিম যোগ দেয়। এ সময় সেখান থেকে ৮টি হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। এছাড়া বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নবোদয় হাউজিংয়ের বাসাটি দেড় মাস আগে ভাড়া নেয় সালাউদ্দিন। বাড়ির মালিকের নাম মাওলানা আব্দুল মালেক। বাড়ির ৫ম তলার বোমা কারখানার ফ্ল্যাটটির উল্টোদিকের ফ্ল্যাটটিতে একটি আউটসোর্সিংয়ের ব্যবসা। পুলিশের দাবি, ওই ফ্ল্যাট এবং চারতলার অপর একটি ফ্ল্যাটে আউটসোর্সিংয়ের নামে ভিওআইপি ব্যবসা চলত। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। তবে পুলিশের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেন, নিরীহ কিছু আইটি কর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে নির্দোষ কেউ থাকলে যাচাই-বাছাই শেষে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা বাড়িটির সামনে ডানপাশের ফ্ল্যাটে কারখানা বানিয়েছিল জঙ্গিরা। সকাল থেকে ডিবি ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যদের বিস্ফোরক জব্দ করে তা ধ্বংস করতে দেখা যায়। বেশ কিছু নতুন বালতি, বালির বস্তা ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ যন্ত্র নিয়ে বাসার ভেতরে ঢোকেন পুলিশ সদস্যরা। পরে বিস্ফোরক দ্রব্য নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। এ সময় নিরাপত্তার স্বার্থে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের লাইন বন্ধ করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় ওই বাড়ির সামনের সড়ক ও দোকানপাট। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি দেখে জড়ো হয় উৎসুক জনতা।
অভিযানে অংশ নেয়া কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাড্ডায় আটককৃত জঙ্গিদের তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর, উত্তরার আশকোনা ও গাজীপুরে অভিযান চালানো হয়। প্রতিটি অভিযানেই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হলেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় এ ধরনের আরও আস্তানা গেড়েছে জঙ্গিরা। পুলিশ বলছে, উদ্ধার হওয়া গ্রেনেড, বোমা ও বিস্ফোরক দিয়ে বহুতল ভবন পর্যন্ত উড়িয়ে দেয়া সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দেশে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ