Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তেলের দাম কমছে না, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হবেই

ডিআরইউ’তে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে নসরুল হামিদ

| প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ডে রামপাল নিয়ে আল গোরের দেয়া বক্তব্যর জবাবে তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য দেখে বক্তব্য না দিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে দেখে যানÑ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র আদৌ পরিবেশের ক্ষতি করবে কীনা।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে গতকাল (শনিবার) ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।
গ্রাহকদের এখন বিভিন্ন দামে এলপিজি কিনতে হচ্ছে। এলপিজি সিলিন্ডার রি-টেস্টিং হচ্ছে নাÑ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এলপিজির ব্যাপারে একটি পলিসি তৈরি করে ফেলেছি। এটা সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছে। আগামী মাসে এর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং সব জায়গায় এলপিজির দাম যাতে সমান থাকে- সেটার জন্য আমরা একটা পলিসি নির্ধারণ করছি। সেটাও হয়তো আগামী মাস থেকে শুরু হবে।
প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার নয়, এলপিজি ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার টেস্ট করার জন্য ইতোমধ্যে বিস্ফোরক বিভাগকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কাজ চলছে, হয়তো এ বছরের মধ্যে কাজ শুরু করবে।
আগামী মাসেই রামপালের অর্থনৈতিক চুক্তি
আগামী ১ মাসের মধ্যে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থনৈতিক চুক্তি  সম্পন্ন হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।  কেননা পরিবেশ আইন মেনেই তা করা হচ্ছে। যে সকল দেশ আজকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের বিরোধিতা করছে। তারা এক সময় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আজকের অবস্থানে এসেছে।
নসরুল হামিদ বলেন, যমুনা সেতু নির্মাণের সময় পরিবেশবাদীরা সমালোচনা করে বলেছিল পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। আর পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বলা হয়েছে এর ফলে ইলিশের চলাচল ব্যাহত হবে। এখন তারাই আবার রামপালের বিরোধিতা করছে।
তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। আর এই বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন করতে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
তেলের দাম কমছে না
জ্বালানি তেলের দাম কমছে না বলে গত ১৮ জানুয়ারি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে একই দিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানান, তেলের দাম না কমানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তেলের দাম নিয়ে এমন পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, ‘ওনার (অর্থমন্ত্রী) সাথে তেলের বিষয়ে আমার কোনো বৈঠক হয়নি। আমি প্রপোজাল করেছি আমার মন্ত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে; তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমরা মানে আমাদের মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই মুহূর্তে তেলের দাম অ্যাডজাস্টমেন্টে (কমানোর মাধ্যমে মূল্য সমন্বয়) করা হচ্ছে না
যে দিন আবেদন সে দিনই বিদ্যুৎ
নসরুল হামিদ বলেন, গ্রাহককে আমরা আরও অল্প সময়ে কীভাবে বিদ্যুৎ দিতে পারি সেই বিষয়ে পরিকল্পনা চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা সেই পরিকল্পনা দিতে পারব। ইতোমধ্যে বহু উপজেলায় আমরা চালু করেছি, যে দিন আবেদন করবেন সে দিনই বিদ্যুৎ দেয়ার ব্যাপারে। বিদ্যুৎ কানেকশন নিতে জমির পর্চা, বাড়ির মালিকানা আমি মনে করি এগুলো প্রয়োজন নেই। প্রিপেইড মিটার, ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকবে। সারাদেশে অনলাইকে আবেদন ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ চাইলে কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ দেয়া যায় সেটার পরিকল্পনা চলছে।
কার্বন বাণিজ্য
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এখনও কার্বন ট্রেডিং শুরু করিনি। আমরা ৭০ শতাংশ গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ থেকে আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে রক্ষা করছি, সেটা নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য করতে পারি।
বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ এটা নিয়ে চিন্তা করেনি। পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কার্বন ট্রেডিংয়ের দিকে যাব। এতে আমাদের গ্যাসবেইজড পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
বিদ্যুৎ আনতে ভূমি ব্যবহারে ভারতের সায়
২০১০ সাথে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে যে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল তা কিছু রিভিউ করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য থেকে আসবে। প্রতিবেশী দেশ থেকে বেশি বিদ্যুৎ নিতে তার পরিধি বৃদ্ধি করেছি। ২০১০ সালে ছিল ৩ হাজার মেগাওয়াট, বর্তমানে তা ৬ হাজার মেগাওয়াট, ভবিষ্যতে আরও বেশি হবে।
আগামীতে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারি কিনা, তা দেখছি। আমরা আশা করছি বিদ্যুৎ আনতে আগামী এক মাসের মধ্যে নেপালে গিয়ে চুক্তি হবে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনলে ট্যারিফ খুব অল্প পড়বে, কারণ সেটা হাইড্রো পাওয়ার (পানি বিদ্যুৎ) হবে।
সেই একটি উপায়ে ভুটানের কাছেও বিদ্যুৎ আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ভূমি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনতে ভারতের সম্মতি পাওয়া গেছে। ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনতে কতদিন লাগবেÑ প্রশ্ন করা হলে বিপু বলেন, হাইড্রো পাওয়ার আনতে আরও পাঁচ-সাত বছর লাগবে।
ভারত থেকে ৩০ হাজার টন তেল আনতে চুক্তি হচ্ছে
সারা দেশে জ্বালানি তেলের সরবরাহ চট্টগ্রামের উপর নির্ভর করছে জানিয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা খুলনাতে জেটি করছি। এটার কাজ চলছে। উত্তরাঞ্চলে ৩০ হাজার টন তেলের একটা পরিকল্পনা আমরা নেব। যাতে করে চট্টগ্রামে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে খুলনা থেকে সারা দেশে তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের নোমালী গড় রিফাইনারির সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যখন ভারত সফরে যাবেন তখন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিদেশ থেকে তেল আনতে যে খরচ হয় এর প্রায় অর্ধেক খরচে ভারত থেকে তেল নিয়ে মজুদ করতে পারব। উত্তরাঞ্চলে যে তেলের সংকট হয় তা পূরণ করতে পারব।
নাইকোর মামলার তথ্য-প্রমাণ দাখিল
নাইকো দুর্নীতি মামলার তথ্য-প্রমাণ আন্তর্জাতিক আদালতে দাখিল করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এই নাইকো যে অবৈধভাবে চুক্তি করেছিল, সেই চুক্তিপত্রের সব কাগজপত্র এবং ভিডিও জবানবন্দি, গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের এফবিআইয়ের রিপোর্টসহ আমি গতকাল (শুক্রবার) আমাদের এটর্নি জেনারেলের অফিসেও সাবমিশন করেছি।
যেহেতু এখানে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, তাই আমরা চাচ্ছি এ চুক্তিপত্রকে বাতিল করে তাদের পাওনা থেকে মুক্তি নেয়া এবং তাদের উপর যে ক্লেইম আছে তা বাস্তবায়ন করা।
তেল-গ্যাস অনুসন্ধান দরপত্রের মূল্যায়ন যাচাই প্রতিবেদন
গত বছরের ২২ আগস্ট বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকার ভূ-গঠন এবং তেল গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা লাভে জরিপ (নন এক্সক্লুসিভ সার্ভে বা মাল্টি-ক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভে) পরিচালনায় পেট্রোবাংলার আন্তর্জাতিক দরপত্র মূল্যায়নের যথার্থতা যাচাইয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে কিনাÑ একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, আগামী সোমবার আইনমন্ত্রী প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপরের ক্রয় কমিটিতে এটি উঠতে পারে।
৩ বছরের মধ্যে পুরোপুরি ই-ফাইল
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ই-ফাইল ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এজন্য কর্মকর্তাদের প্রস্তুত ও গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করতে আমাদের ২ বছর লেগে গেছে। এখন আর সেই সমস্যা নেই। পরামর্শক অ্যাকশন প্ল্যান দিয়ে দিয়েছে। আমাদের মাস্টার প্ল্যান হয়ে গেছে। বাস্তবায়ন করতে তিন বছর লাগবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তেল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ