Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গণপরিবহনে অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আর কে চৌধুরী : রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় চলছে উল্টো নিয়ম। বর্ধিত জনসংখ্যা তথা যাত্রীর চাহিদা মেটাতে যখন বৃদ্ধি পাওয়া উচিত গণপরিবহন তখন হুহু করে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির ভিড়ে প্রতিটি সড়কে যানজট অনিবার্য হয়ে উঠছে। এর পাশাপাশি বাস-মিনিবাসের সংখ্যা কমছে। গণপরিবহনে দেখা দিচ্ছে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা।
প্রাইভেট কারের আধিক্য রাজপথে যানজট সৃষ্টির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ালেও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ১৫০টি। এ সময়ে মাত্র ১৬টি মিনিবাসের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালজুড়ে রাজধানীতে প্রাইভেট কার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছিল ১২ হাজার ৯৭২টি- প্রতিদিন গড়ে ৩৬টি করে। এ সময় মিনিবাস রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৩৫টি।
রাজধানীতে বর্তমানে ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি রয়েছে ২ লাখ ৮ হাজারের বেশি। এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু বাড়তি যাত্রী চাহিদার বিপরীতে গণপরিবহন না বেড়ে বরং হ্রাস পাচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির বাস রুটের তালিকা অনুযায়ী ১৬৬টি রুটে ৭ হাজার ৩৬২টি গাড়ির সিলিং থাকলেও বর্তমানে অর্ধেকের বেশি রুটে যানবাহন নেই।
চাঁদাবাজি-হয়রানির কারণেও পরিবহন ব্যবসা নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে। রাজধানীর সড়কগুলোতে অনুমোদিত ৯৮টি পরিবহন কোম্পানির মধ্যে পর্যায়ক্রমে ২৪টি কোম্পানিই তাদের সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় গত কয়েক বছরে নগরীর বিভিন্ন রুটে প্রায় তিন হাজার বাস-মিনিবাস বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীতে চাহিদার তুলনায় গণপরিবহন বিশেষত বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ অবস্থার অবসানে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বাস-মিনিবাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যানজট নিরসনেও নিতে হবে উদ্যোগ।
রাজধানীর গণপরিবহনে অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছরে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি নতুন রুট এবং কিছু নতুন বাস চালু হলেও রাস্তা থেকে উঠে গেছে অনেক গাড়ি। প্রায় দেড় কোটি মানুষের এই নগরীতে এখন অনেক রুটেই পর্যাপ্ত পাবলিক বাস নেই। রাজধানীর জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার বাস-মিনিবাসের প্রয়োজন। রাস্তায় চলাচল করছে প্রায় সোয়া চার হাজার বাস-মিনিবাস। গত আট বছরে রাজধানীতে প্রায় ছয় হাজার বাসের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হলেও সেগুলোর প্রায় অর্ধেকই এখন ঢাকার রাস্তায় নেই।
রাজধানীর গণপরিবহন কম থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। নিম্নবিত্ত এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্তদের পক্ষে রাজধানীতে স্বল্প খরচে চলাচলের কোনো উপায় নেই বললেই চলে। স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের আশা তো দূরাশার শামিল। পরিবহন অব্যবস্থাপনা রাজধানীবাসীর ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ালেও তা দেখার কোনো কর্তৃপক্ষ দেশে নেই বললেও অত্যুক্তি হবে না। রাজধানীর দেড় কোটি মানুষের স্বার্থে এই অব্যবস্থার অবসান হওয়া উচিত।
রাজধানীতে গণপরিবহন হ্রাস পাওয়ার একটি কারণ পুরনো যানবাহন অকেজো হওয়ার পর নতুন যানবাহন রাস্তায় না নামানো। তাছাড়া হরতালে ও রাজনৈতিক সহিংসতায় নির্বিচারে বাস ভাঙচুর ও পোড়ানোর ফলেও রাজধানী থেকে অনেক যানবাহন উধাও হয়ে গেছে। অন্যদিকে গণপরিবহনের বেহাল দশার কারণে রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। রাজধানীতে যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণও এটি।
একসময় ঢাকার রাজপথে বিভিন্ন রুটে সুদৃশ্য বাস চলাচল করলেও এখন তা একটি বিরল দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। অনেক রুটে তখন এসি বাসও চলাচল করত। কাউন্টারভিত্তিক সেসব বাস সার্ভিসে লোকজন নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিট সংগ্রহ করে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। যাত্রীরা, বিশেষ করে অফিসগামী মানুষ মোটামুটি নিরাপদ ও নিরুপদ্রবে চলাফেরা করতে পারত সে সময়। বর্তমানে এ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এর বদলে ঢাকার রাজপথ দখল করে নিয়েছে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাস। এর মধ্যে কিছু বাস কাউন্টার পদ্ধতিতে চলাচল করলেও বেশিরভাগই লোকালে পরিণত হয়েছে। ফলে রাজধানীর অধিকাংশ যাত্রীর ভোগান্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই জনগণ প্রত্যাশা করে সরকার তাদের দুর্ভোগ লাঘবে রাজধানীর গণপরিবহন সংকট নিরসনে সচেষ্ট হবে।
ষ লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন