Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ট্রাম্প যুগের শুরু : অনিশ্চয়তার পথে যাত্রা

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ : ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প। শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুগ। যেমনটি ধারণা করা হচ্ছিল, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তেমনটিই করতে শুরু করেছেন তিনি। আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণের আগে তার মতো এত আলোচিত-সমালোচিত হননি। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নিজের  পূর্বরূপেই আবির্ভূত হয়েছেন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণার সময় নানা বিষয়ে নানা কথা বলে তিনি আলোড়ন তুলেছিলেন। তার মধ্যে প্রধান বিষয় ছিল ওবামাকেয়ার বাতিল, নারীদের সম্পর্কে অবমাননাকর কথা, অভিবাসী বিতাড়ণ, মুসলমানদের আর আমেরিকায় প্রবেশ করতে না দেয়া ও মেক্সিকোর সাথে সীমান্ত জুড়ে উঁচু দেয়াল নির্মাণ। নির্বাচনে বিজয়ের পর এক ধরনের আশাবাদ তৈরি হয়েছিল যে নির্বাচনী প্রচারণায় অনেক কথা বললেও তার বাস্তবায়ন হয়তো তিনি করবেন না। ইতোমধ্যে সে আশাবাদ উবে যেতে শুরু করেছে।  মোটামুটি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে  যে তিনি সেই ট্রাম্পই, অন্য কিছু নন। তিনি নির্বাচনের আগে যে সব কথা বলেছিলেন, সেগুলোকে বাস্তব রূপ দেয়ার এখন সময় এসেছে। সে কাজ শুরুও করে দিয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমের ভাষায় তীব্র বিতর্ক, প্রতিবাদ আর সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের মধ্যে শপথ গ্রহণ করেন ৭০ বছর বয়সী ট্রাম্প। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় বাইবেলে হাত রেখে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় ট্রাম্প যুগের। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৫ জুন ট্রাম্প যখন যখন প্রেসিডেন্ট পদে নিজের প্রার্থিতার কথা ঘোষণা করেন তখন খুব কম মানুষই কল্পনা করতে পেরেছিল যে সত্যিই তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ব্যাপারে খুব কম সংখ্যক মানুষের মধ্যেই অনিশ্চয়তা ছিল। অল্পকালের মধ্যেই যে হিলারি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিশেষ বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানের যাত্রী হচ্ছেন, বেশিরভাগ আমেরিকানই সে ছবিটি মানসনেত্রে বোধ হয় দেখতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনা, ভবিষ্যদ্বাণী, জনমত জরিপ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যায় নতুন ও একেবারে প্রায় অপরিচিত প্রার্থী ট্রাম্পের বিজয় অভিযাত্রার কাছে। নিরংকুশ বিজয় লাভ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ক্যাসিনো, রিয়েল স্টেট ও হোটেল ব্যবসায়ী ট্রাম্প। একটি পত্রিকা বলে, গত ৮৩ বছরে  ট্রাম্পই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি কোনো রাজনীতিক ছিলেন না, যিনি কোনো মন্ত্রী, আইন প্রণেতা, গভর্নর, মেয়র এমনকি কর্মকর্তাও কখনো ছিলেন না। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোনো প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই পৃথিবীর সবচেয়ে বিত্তশালী ও শক্তিশালী দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।  যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সকল দিক দিয়েই তিনি এক ব্যতিক্রম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা বলেছে, তিনি এক বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টারস বলেছে, দেশ ও বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র এক নতুন ও অনিশ্চয়তার পথে যাত্রা করল।
শপথ নেয়ার পর প্রথম ভাষণে ট্রাম্প আমেরিকানদের সামনে স্বপ্নের ফুলঝুরি ছড়িয়ে দেয়ার মতো করে অনেক সুন্দর কথা বলেেেছন। সবাই জানেন যে ট্রাম্পের বিজয়ের মূলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে শে^তাঙ্গদের আধিপত্য তৈরির জয়গান। তারই আরো সম্প্রসারিত রূপ হিসেবে তিনি ভাষণে আবারো সেই ঘোষণাটিকে নিয়ে আসেনÑ আমেরিকা ফার্স্ট অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থই প্রথম। তিনি বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রকে আরো শক্তিশালী ও নিরাপদ করব। আমেরিকাকে মহান করব। তিনি বলেন, আমরা বিশ^ গতিধারা ঠিক করব। আজ থেকে জনগণই যুক্তরাষ্ট্রের শাসক। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতা ওয়াশিংটন ডিসি থেকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেব। তিনি দুনিয়া থেকে ইসলামী সন্ত্রাস নির্মূলেরও অঙ্গীকার করেন।   
ট্রাম্প যখন শপথ নিচ্ছিলেন তখন হোয়াইট হাউসের বাইরে তার বিরুদ্ধে চলছিল বিক্ষোভ। বলা হয়েছে তার শপথ অনুষ্ঠানে প্রায় ১১ লাখ লোক উপস্থিত ছিল। তার মধ্যে প্রায় ২ লাখ ছিল বিক্ষোভকারী। এক পর্যায়ে ট্রাম্প সমর্থক ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় গাড়ি ভাংচুর, দোকানপাটে হামলা, অগ্নি সংযোগ ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ঘটে। বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশ পিপার স্প্রে করে ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। বেশ কয়েকজন আহত হয়। পুলিশ দু’শতাধিক লোককে আটক করে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের সময় তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং প্রেসিডেন্টের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা এই প্রথম। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশে^র আরো কয়েকটি দেশে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। শনিবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিশে^র বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন শহরে লাখ লাখ নারীর বিক্ষোভ প্রদর্শনের কথা জানা যায়। উইমেন মার্চ গ্লোবাল নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের উদ্যোগে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পরদিন এ বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। যে সব দেশের শহরগুলোতে এ বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয় তার মধ্যে আছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। বলা হয়েছে, বিশে^র অন্যান্য মহাদেশের ১৬১টি শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে যাতে প্রায় ২০ লাখ নারী অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক থেকে সিয়াটল পর্যন্ত প্রায় ৩শ’ শহরে নারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। নিউইয়র্ক বিক্ষোভে ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে অভিনেত্রী আমেরিকা ফেরেরার কথায় সকলের মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে: বিদ্বেষ ছড়িয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু প্রেসিডেন্টই আমেরিকা নয়। তার মন্ত্রিসভাও আমেরিকা নয়। আমেরিকা নয় কংগ্রেসও। আমরাই আমেরিকা। আমরাই এখানে থাকব। আমরা আপনাকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা আপনাকে আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের শয়তান বানাতে দেব না। আমরা আমাদের কৃষ্ণাঙ্গ ভাইবোনদের হত্যা বন্ধের আহবান জানাচ্ছি।  
বিশে^র সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দেশের নেতা হিসেবে ট্রাম্পের আবির্ভাব বিশে^ মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তাকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সতর্ক মন্তব্য করেছেন কোনো কোনো নেতা। সে যাহোক, খোদ যুক্তরাষ্ট্রে যা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেননি। ট্রাম্প সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার অভিযোগ এনেছেন। সাংবাদিকদের আখ্যায়িত করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসৎ লোক বলে। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প তার ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের এক দুর্দশাগ্রস্ত চিত্র তুলে ধরেছেন। তবে বাস্তবের সাথে তার মিল নেই। কেউ কেউ তার ভাষণে ও প্রস্তাবিত নীতিতে বিভক্তির সুর দেখতে পেয়েছেন ও তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, ট্রাম্পের আগে আর কোনো প্রেসিডেন্ট অভিষেক ভাষণে নিজের দেশকে এভাবে পরাজিত, ধ্বংসপ্রাপ্ত, বিপর্যস্ত ও আশাহীন বলে বর্ণনা করেননি। একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক লিখেছেন, ট্রাম্প এখনো ঘৃণা ও বিভক্তির পথ  অনুসরণ করে চলেছেন। আরেকজন বলেছেন, ট্রাম্পের ভাষণে জাতীয় ঐক্যের বদলে ট্রাম্পবাদের কথা শোনা গেছে।    
খবরে জানা যায়, অভিষেকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি অফিসের কাজ শুরু করেন। প্রথমেই তিনি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ওবামাকেয়ার আংশিক বাতিলের আদেশে স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া ওবামা প্রশাসনের শেষদিকের বিভিন্ন রেগুলেশন তিনি স্থগিত করেন। ২৩ জানুয়ারি তিনি তার নির্বাচনী অঙ্গীকার মোতাবেক ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ২১ জানুয়ারি  তিনি সিআইএ দফতর পরিদর্শনে যান। ধারণা করা হয়েছিল যে এর মাধ্যমে তিনি গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের সাথে তার বিরোধ মিটিয়ে ফেলবেন। কিন্তু তা হয়নি। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তার নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেয়া রিপোর্ট নিয়ে  ট্রাম্পের সাথে তাদের দূরত্বের সৃষ্টি হয়। ট্রাম্প একাধিকবার গোয়েন্দা সংস্থা বিরোধী মন্তব্য করেন।  মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায়কে নাৎসি বাহিনীর সাথেও তুলনা করেন তিনি। কিন্তু শনিবার সিআইএ সদর দফতরে গিয়ে নিজেকে অন্য রকমভাবে তুলে ধরেন তিনি। তিনি সিআইএ সদস্যদের বলেন যে তিনি তাদের সাথে আছেন। কিন্তু তার বক্তব্য আচরণ গোয়েন্দা সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
ট্রাম্প এমন এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আসীন হলেন যখন যুক্তরাষ্ট্র বহুমুখী সমস্যা মোকাবেলা করছে। এ এমন এক সময় যুক্তরাষ্ট্র আর কখনো যার সম্মুখীন হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, ২০১৬’র নির্বাচন নিয়ে মার্কিন জনগণ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।  ট্রাম্প সে বিষয়টি মনে রেখেই জাতীয় ঐক্য সাধনের তান ধরেছেন। তাতে কতটুকু সাফল্য আসবে তা এখনি পরিষ্কার নয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধোত্তর কালে সূচিত শীতল যুদ্ধ বা ¯œায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে ’৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের পর। তারপর থেকে মোটামুটি দু’দশক যুক্তরাষ্ট্র বিশে^ একক পরাশক্তির মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু ২০১১-তে সিরিয়ার আরব বসন্তের হাওয়া ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে পরিণত হলে এবং আরো পরে রাশিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। এর মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ায় প্রবল সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় ইসলামিক স্টেট বা আইএস। সউদি আরবের প্রভাবাধীন আরব বিশ^ ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিপরীতে রাশিয়া বাশারের সমর্থনে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সামরিকভাবে জড়িত হয়। তার ফল হয় দ্বিমুখী। আইএস কিছুটা কোণঠাসা হয়, অন্যদিকে ব্যাপক বিপর্যয়ের শিকার হয় আরব জোট সমর্থিত বাশার বিরোধী সিরিয়ার বিরোধী জোট।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা বাশারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্য থেকে সম্পূর্ণ সরে এসেছে। এখন তাদের হামলার লক্ষ্য শুধু আইএস, বাশার বাহিনী নয়। এ নিয়ে সউদি আরবের সাথে সুদীর্ঘকালের মার্কিন মৈত্রী সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য রকম টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। এখনো তা জোড়া লাগেনি। এখানে দেখা যায়, পাশ্চাত্য ও আরব জোটের লক্ষ্যবস্তু হওয়া বাশার রাশিয়া এবং ইরান তথা শিয়া মিত্রদের সমর্থনে শুধু পতন এড়াতেই সক্ষম হননি, বরং আগের চেয়ে তার শক্তি জোরদার ও অবস্থান সংহত হয়েছে। এক কথায় বলা যায়, সিরিয়ায় মার্কিন-পাশ্চাত্য-আরব মিত্রজোটের লক্ষ্য দিক ও গতি দুই-ই হারিয়েছে। এমনকি তুরস্ক শুরু থেকে বাশারের পতনে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করলেও তারাও সে লক্ষ্য থেকে সরে এসেছে। অন্যদিকে পাশ্চাত্যকে ছাড়াই সিরিয়ার সংঘাত অবসানে তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়া একযোগে কাজ করার চেষ্টা করছে।  
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন।  দীর্ঘ ও নীরব প্রচেষ্টায় বিশে^র দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করার পর চীন তার সামরিক পেশীর বিস্তার ঘটাতে শুরু করে হাল আমলে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাৎভূমি দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করে চলেছে। তবে তা যতটা উদ্বেগের কারণ হয়েছে তার চেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ হয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিক উপস্থিতি। সেখানে কয়েকটি দ্বীপে চীন সামরিক স্থাপনা গড়ে তুলেছে। চীনকে ঠেকাতে তার প্রতিদ¦ন্দ্বী ভারতের সাথে দ্রুত ব্যাপক ভিত্তিক সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ভারতকে পাশে পাওয়ার জন্য সে সহজেই পরিত্যাগ করেছে দীর্ঘদিনের অথচ বর্তমানে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র পাকিস্তানকে। এখন ভারতের সহযোগিতায় যতটা সম্ভব চীনকে ঘিরে ফেলার লক্ষ্যে পা ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার সাথে বরাবরই একটি সখ্যের সম্পর্ক রয়েছে ট্রাম্পের। ক্ষমতায় আসার পর সে সম্পর্ক আরো উন্নত হবে বলে বলে আশা করা যেতে পারে। তবে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হতে চলেছে তা এখনো পরিষ্কার নয়।  বেইজিং ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্কের অবনতি চাইছে না। তবে ট্রাম্প যদি এক চীন নীতি অনুসরণ না করার দিকে ঝোঁকেন, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নিতে পারে। অন্যদিকে ট্রাম্পের ব্যাপারে ভারতে প্রথম দিকে স্বস্তি বিরাজ করলেও এখন সেখানে কিছুটা অস্বস্তি উঁকি দিতে চাইছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প তার ঘোষিত ‘সবার আগে আমেরিকা’ নীতি কঠিনভাবে অনুসরণ করলে ভারতের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আরো কথা হচ্ছে, আফগানিস্তান-পাকিস্তান প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসন কী রকম আচরণ করবে তা স্পষ্ট নয়। এক্ষেত্রে ট্রাম্পের পদক্ষেপ ভারতের উপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা। অন্যদিকে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইসরাইলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে আবার উষ্ণতা ফিরে এসেছে। শপথ নেয়ার দু’দিন পর ২২ জানুযারি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সাথে ফোনে কথা বলার সময় ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতি শক্ত সমর্থন জানান ট্রাম্প।
ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নাতীত হবে বলে ইতোমধ্যেই আভাস দেয়া হয়েছে।  ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে দেয়া ট্রাম্পের রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিৃতিতে এ কথা বলা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, আমাদের সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব অবশ্যই প্রশ্নাতীত হবে। ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনে পরিকল্পনা মাফিক সামরিক নেতা নিয়োগ করা হবে। সাইবার হামলা প্রতিরোধে নতুন সামরিক কমান্ড গঠনেরও পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।         
এদিকে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক ও ট্রাম্পের পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশ অস্বস্তিতে আছে বলে একটি সংবাদ মাধ্যমে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। একজন সাবেক কূটনীতিক বলেছেন, ট্রাম্পের ভাষণের পর সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও অস্বস্তি লক্ষ্যণীয়। বাণিজ্য ও জলবায়ু তহবিল নিয়ে তার বক্তব্য আশার সঞ্চার করে না। কেউ কেউ বলেছেন, ট্রাম্পের আমলে জিএসপি ফিরে পাওয়া সম্ভাবনা ক্ষীণ। এছাড়া ট্রাম্প তার ঘোষিত অভিবাসন নীতি কার্যকর করলে অভিবাসী বাংলাদেশীরা কী পরিস্থিতিতে পড়েন তা নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে।  
ট্রাম্প সবে ক্ষমতা হাতে নিয়েছেন। তার সামনে গোটা চার বছরের মেয়াদকাল পড়ে আছে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ও জয়ী হলে (যার সমূহ সম্ভাবনা আছে) আরো চার বছর যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। দায়িত্ব পালন শুরু করে পরবর্তী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনদিকে নিয়ে যাবেন এবং বিশে^ যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী দাঁড়ায়, তাই এখন দেখার অপেক্ষা।
য় লেখক : সাংবাদিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ