Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুলনাঞ্চলে চিকিৎসার নামে চলছে কসাইবৃত্তি সরকারি কেন্দ্রগুলোতে সঙ্কট, অনিয়ম, দুর্নীতি প্রাইভেট চেম্বারগুলোয় সীমাহীন বাণিজ্য

| প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি : স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। সেই স্বাস্থ্য-সুখ এখন সোনার হরিণ। চিকিৎসার অনিয়মের অক্টোপাসে জড়িয়ে ক্ষত-বিক্ষত দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তসহ সর্বসাধারণ। আর ধনীরা যাচ্ছেন প্রাইভেট ক্লিনিক, রাজধানী, ভারত কিংবা সিঙ্গাপুর। ফলে ভেঙে পড়েছে বিভাগীয় শহর খুলনা ও খুলনাঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। অধিকাংশ চিকিৎসকদের এখন মানবিক মূল্যবোধ শূন্যের কোঠায়। সেবার পরিবর্তে ডাক্তাররা এখন ভাসছে কমার্শিয়াল মনোভাবের স্রোতে। এ স্রোত যেন অপ্রতিরোধ্য। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক ভবন নির্মাণ এবং ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি পড়ে থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ৭ বছরেও চালু হয়নি ক্যান্সার ইনস্টিটিউট। খুলনার কোনো সরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) নেই। যা চালু হয়েছে তা শুভংকরের ফাঁকি। আবার ওষুধ ও বেড স্বল্পতায় চলছে খুলনা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট। আর চলছে মেঝেতে চিকিৎসা। ২০ বেডের বিপরীতে খাবার বরাদ্দ ১০ বেডের।
সূত্রমতে, সরকারি স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রগুলোতে নানামুখী সংকট, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈরাজ্য চলছে। আবার বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারগুলোয় চলছে সীমাহীন বাণিজ্য। স¤প্রতি জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে গাজী মেডিকেল কলেজসহ বেশ কয়েকটি নামিদামি হাসপাতালে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। তাতেও থেমে নেই সরকারি ও বেসরকারি খাতে চিকিৎসার নামে কসাই বৃত্তি। আবার অনিয়ম ও অব্যস্থাপনার স্বর্গরাজ্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে না। ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যেন দেখার কেউ নেই। আর বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তাররা দু’হাতে কামাচ্ছেন সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে কমিশনের টাকা। মার্কেটিং ম্যানেজারের নেতৃত্বে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে এজেন্টরা রোগীদের কালেকশন করে চিকিৎসা কেন্দ্র নামে কথিত কসাইখানাগুলোতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সর্বোচ্চ শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত সমাজের সম্মানিত চিকিৎসকরা অনেকেই আলিসান চেম্বারে বসে নানা কৌশলে রোগীদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ জানান, সাধারণত প্রস্রাব পায়খানা, রক্ত, কফের মত পরীক্ষার জন্য রোগীর কাছ থেকে আদায় করা ফি ২০-৩০ শতাংশ কমিশন নেন চিকিৎসকরা। অন্যান্য পরীক্ষা ও প্রযুক্তিভেদে ৩০-৫০ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। হাসপাতালে রোগী পাঠানোর ক্ষেত্রে সাধারণত ১০-২০ শতাংশ, থেরাপির ক্ষেত্রে সাধারণত ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দেয়া হয়।
কমিশনের টাকা কেউ নেন মাসে, কেউ সপ্তাহে আর কেউ দিনে। এছাড়া কেউ নেন নগদ আবার কেউ নেন চেকে বা নিজের ব্যাংক একাউন্টে। এ ছাড়া ওষুধ লেখার জন্য আগে থেকেই ওষুধ কোম্পানীর কাছ থেকে কমিশনের নামে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা নেয়ার পাশাপাশি সা¤প্রতিক সময় বিদেশী বা চোরাইপথে আসা দামীয় ওষুধ থেকেও কমিশন পেয়ে থাকেন প্যাকেজের আওতায় চিকিৎসা করা বেশিরভাগ চিকিৎসক। একজন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ বলেন, খুব কমসংখ্যক ডাক্তার পাওয়া যায় যাদের আমরা প্রভাবিত করতে পারি না বা কমিশন নেন না।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা আর রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা ভয়ঙ্করভাবে ভারসাম্যহীন। জনবল, উপকরণ ও আর্থিক সংকট এবং চিকিৎসকদের পুঁজিমুখী মনোভাব প্রকট। সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিলেই হবে না, রাষ্ট্রকে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের পরিবার থেকেই অর্থ রোজগারের মানসিকতা শেখানো হয়। চিকিৎসা অবকাঠামো, উপকরণ, সেবা এমনকি রোগীদের খাবার নিয়েও চরম বাণিজ্য চলছে। সেবাব্রত থেকে চিকিৎসকরা আজ দূরে সরে যাচ্ছেন। তাদেরও উচিত অর্থমুখী মনোভাব দূর করে সেবার মনোবল পোষণ করা।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, পদ্মার এপারের মানুষ আমরা নানা বৈষম্যের শিকার। সম্ভাবনাময় অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও দক্ষিণাঞ্চলবাসী স্বাস্থ্য সেবা থেকে আজও বঞ্চিত।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ