Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মেধা পাচার রোধে চাই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা

| প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আদ্রিয়ান অরিত্র : বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের পড়াশুনা, বিশ্বসাহিত্য এবং বিশ্বসংস্কৃতির সংযোগস্থল কিংবা সূতিকাগার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোন পথে যাচ্ছে? জন্মের দিন থেকেই আমাদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ সূচনা হয়, সেটি  ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক। নিজের সম্পর্কে অনুভূতিগুলো তৈরি হয় এবং সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্পর্শে এসে দৃঢ় হয়।
দেশের প্রতিটা জেলায় একের পর এক নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সরকার। আমাদের জন্য এটা বেশ গুরুত্ব বহন করে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান কেমন হচ্ছে সে বিষয়টাও গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখা দরকার। বিশ্বদ্যিালয় যেন সস্তা শ্রমে পরিণত না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে সোনার হরিণ যেখানে স্থান করে নেয়ার জন্য নিজের যোগ্যতাকে বিশ্বমানের করে তুলতে হবে। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠা আর ঘরের সাথে কলেজ থাকা সমান কথা। আমাদের মনে রাখা উচিত বিশ্ববিদ্যালয় আর কলেজ এক নয়। দুঃখের বিষয় এই যে, বিশ্বের দুই হাজার বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম  নেই। সেখানে পার্শবর্তী দেশ ভারত এবং ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী বর্তমানে সারা বিশ্বে ঐ বিষয়ে যে জ্ঞান আছে তা সম্পর্কে ধারণা রাখে। কিন্তু  বাস্তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী সে সব বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতে পারে না। এর অন্যতম কারণ আমাদের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই শিক্ষার জন্য উপযোগী ব্যবস্থা। বাংলাদেশের সুনামধন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কোনটিই সব দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ না। হয় সেটি আর্থিক নয়তো অবকাঠামোগত সমস্যা। দেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিলে দেখা যাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পায় না। যারা পায় তারাও সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পায় না। যারা আবাসিক সুবিধা পায় না তাদের উচ্চমূল্যে মেস কিংবা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। এ কারণে অনেকেই নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। এছাড়াও রয়েছে শিক্ষক সংকট, রুম সংকট, গ্রন্থগারে পর্যাপ্ত বইয়ের সংকট এবং সর্বপরি নষ্ট ছাত্র - শিক্ষক রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয় হলো গবেষণার স্থান। হোক তা চারুকলা হোক তা প্রকৌশল। প্রতিটা বিষয়ে বিভিন্ন রকমের গবেষণার প্রয়োজন হয়। কেননা দেশের উন্নতি নির্ভর করে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক উন্নতির ওপর। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো আমাদের দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই গবেষণার জন্য আধুনিক ল্যাব এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কারণ সরকারের পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব। তাহলে  কিভাবে গবেষণা সম্পাদন করা হবে। কিভাবে মেধা দিয়ে নতুন সৃষ্টিশীলতায় মেতে উঠবো। সকলের প্রশ্ন এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আমরা কিভাবে আবিষ্কারের নেশায় ছুটবো।
আজকাল মেডিকেল এবং বুয়েটের শিক্ষার্থীগুলো পর্যন্ত পড়তে শুরু করে অমুক দেশের রাজধানী তমুক কিংবা  কোন রেখা কোন দুটি দেশকে পৃথক করেছে কিংবা সম্রাট বাবরের বংশধরের নাম জপে জপে মুখস্থ করে। দিনশেষে স্বপ্ন বি সি এস ক্যাডার। শিক্ষার্থীরা বলেন,  এটাই যদি করতে হয় তাহলে ইতিহাস কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়লেই তো হতো। দেশের শ্রেষ্ঠ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজে পড়ে ওসব পড়ার কি দরকার ছিল। ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষা অবশ্যই প্রয়োজনীয় কিন্তু একজন ইঞ্জিনিয়ারের যখন গবেষণা করার সময় তখন কেন সে তোতাপাখির মতো এসব পড়ায় ব্যস্ত থাকবে। তাহলে কিভাবে নতুন নতুন উদ্ভাবন সম্ভব হবে? এটা অবশ্য তাদের দোষ নয় শিক্ষা পদ্ধতির দোষ। আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো বিদেশী প্রকৌশলীরা করে থাকে। এক্ষেত্রে দেশীয় প্রকৌশলীরা যদি করতে পারত, তাহলে কোটি কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে এইরকম একটা প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের এত বেশি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাস করা শিক্ষার্থী থাকলেও কেন আমরা উদ্ভাবনে এত পিছিয়ে এর মূল কারণ আমাদের অর্জিত শিক্ষা পরিপূর্ণ না। আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি এবং উপকরণ যথার্থ না। শুধুমাত্র একটা সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে এবং কয়েকটি বিল্ডিং বানিয়ে স্টুডেন্ট ভর্তি করে দিনশেষে একটা সার্টিফিকেট হাতে দিয়ে দিলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষা হয় না।
এরজন্য আমাদের উচিত আগে দেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবারহ করা এবং শিক্ষায় যথেষ্ট বিনিয়োগ দেয়া। আধুনিক ও বিশ্বমানের গবেষণাগার  তৈরি করা হোক। পরিপূর্ণ জ্ঞানভা-ারসমৃদ্ধ লাইব্রেরি স্থাপন করা হোক। জ্ঞানী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক, ছাত্রছাত্রীদের সবরকম সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হোক। দেখা যাবে যে, বাঙালি জাতি বিশ্বে পিছিয়ে নেই। আর বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে মেধা কিনে আনারও দরকার পড়বে না। আমরা গর্বিত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারব। আর যদি আমরা সেটা না করে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়াই তাহলে আমরা শুধুমাত্র কিছু মেরুদ-হীন প্রজন্ম ছাড়া আর কিছুই পাব না। আমাদের দেশের মেধাবীরা বৃত্তি নিয়ে বাইরের দেশে চলে যাবে। ঐসব দেশের হয়ে কাজ করে ঐসব দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দিনশেষে আমরা তলাবিহীন ঝুড়িতেই পড়ে থাকবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ