Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খাদ্য উৎপাদনে বিরল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ

বাকৃবির সমাবর্তনে প্রেসিডেন্ট

প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টাঙ্গাইল জেলা ও সংবাদদাতা : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী শিক্ষা বিস্তার ও মানোন্নয়নের নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি মঙ্গলবার বিকেলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি নবাব ইনস্টিটিউশনের একশ’ বছর পূর্তি ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পুর্ণমিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষা প্রসারে অবকাঠামো নির্মাণ ও সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার উপ-বৃত্তি প্রদান করছে। বছরের প্রথম দিনেই প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে এসএসসি ও সমমানের ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের ও আমাদের পূর্বসূরীদের অনেক ত্যাগ ও রক্ত ঝড়াতে হয়েছে। তাই স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের স্বপ্ন এবং স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক খাদ্য মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সভামঞ্চে পৌঁছলে হাজার হাজার জনতা তাকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। অনুষ্ঠান শুরুতে টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও আদিবাসীদের নৃত্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে বরণ করে নেয়া হয়। ৩টা ৫৩ মিনিট থেকে ৪টা ১২ মিনিট পর্যন্ত ১৯ মিনিট রাষ্ট্রপতি বক্তব্য রাখেন। তিনি তার লিখিত বক্তব্যের বাইরে আরো বলেন, আমার অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমি ইচ্ছা করলেই কিছু করতে পারি না। আমি সরকারের প্রেসিডেন্ট নই, আমি দেশের প্রেসিডেন্ট।
ধনবাড়ি নবাব ইনস্টিটিউশন পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. ছাইফুল ইসলাম। প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মীর ফারুক আহমেদ ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন।
উল্লেখ্য, ১৯১০ সনে ধনবাড়ির জমিদার সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী অনুন্নত দরিদ্র এই জনপদের মানুষের শিক্ষা বিস্তারের জন্য এই ধনবাড়ি নবাব ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন।
মো: শামসুল আলম খান/আশরাফুল আলম ময়মনসিংহ থেকে জানান, দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন যুদ্ধে জয়লাভের জন্যই কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণে কৃষির ভূমিকাই মুখ্য। বর্তমান সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরীতা মোকাবেলা করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আলী আকবর। এ সময় বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান।
সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
প্রেসিডেন্ট বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগে নামিয়ে এনে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে বর্তমান সরকার ‘রূপকল্প-২০২১’ ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণায় অন্যান্য খাতের পাশাপাশি যথাযথভাবে কৃষিখাতের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে।
টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের বিকল্প নেই মন্তব্য করে আব্দুল হামিদ একটি চীনা প্রবাদ উল্লেখ করেন। ‘জাতীয় উন্নতি ও সম্পদ একটি গাছের ন্যায়-কৃষি তার মূল, শিল্প তার শাখা আর বাণিজ্য তার পাতা। মূলে ক্ষত দেখা দিলে পাতা ঝরে যায়, শাখা ভেঙ্গে পড়ে এবং গাছ মরে যায়।’
কৃষির উপর বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা দেশের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, নীচু এলাকা প্লাবিতসহ এ অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের কৃষি খাতে অভাবণীয় সাফল্যের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটসহ অন্যান্য কৃষিবিদগণ, যারা নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ সব পর্যায়ে তা দ্রুত হস্তান্তর ও বিস্তারের কাজে নিজেদের সারাক্ষণ নিয়োজিত রেখেছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, অতিসম্প্রতি এখানে বেশ কিছু শিক্ষা ও গবেষণার উদ্যোগ নেয়া হয়। নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত ইন্টার ডিসিপ্লিনারি সেন্টার ফর ফুড সিকিউরিটি (আইসিএফ) সেন্টার থেকে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। একটি অত্যাধুনিক ফুড সেফটি ল্যাব গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া হাওর ও চর উন্নয়নে ইন্সটিটিউট স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে এবং কক্সবাজারে ‘সামুদ্রিক মাৎস্য বিজ্ঞান, মাঠ গবেষণা ও শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। এগুলো নিঃসন্দেহে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতার পরিচয় বহন করে।’
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে একটি নতুন ছাত্রী হল, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণসহ শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ে ডিগ্রি প্রাপ্তদের মোট সংখ্যা ৪ হাজার ৯শ’ ৯ জন।
এদের মধ্যে ১৭ জন পিএইচডি ২শ’ ৫৫জন স্নাতকোত্তর এবং ৬শ’ ১৪জন স্নাতকসহ সর্বমোট ৮৮৬ জন ডিগ্রি প্রাপ্ত কৃষিবিদ সমাবর্তনে অংশ নেন। পরে স্নাতকোত্তর ২৫৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ কৃতি শিক্ষার্থীর গলায় গোল্ড মেডেল পড়িয়ে দেন প্রেসিডেন্ট।
এর আগে সকাল ১১টায় প্রেসিডেন্ট অনুষ্ঠান মঞ্চে এসে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি ময়মনসিংহের সার্কিট হাউজে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। পরে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ির উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টারযোগে তিনি যাত্রা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাদ্য উৎপাদনে বিরল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ