Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মামলার আসামিরাই চাঁদাবাজি করছে

গুলিস্তান পল্টন মতিঝিলের ফুটপাতে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি : পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : মামলার পরেও থেমে নেই চাঁদাবাজি। থেমে নেই চিহ্নিত সেই চাঁদাবাজরা। মামলার আসামি হয়েও চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টন এলাকার ফুটপাতের চাঁদাবাজরা। তবে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে দেলোয়ার হোসেন ভোলা নামে এক চাঁদাবাজ গ্রেফতার হয়েছে। তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। হকারদের অভিযোগ, গতকাল শনিবার গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টনসহ আশপাশের এলাকার সবগুলো ফুটপাতে আগের মতোই চাঁদা তুলেছে চাঁদাবাজি মামলার আসামিরা। সন্ধ্যার পর প্রতিদিনের মতো চাঁদাবাজির মামলার আসামিরা ফুটপাতের হকারদের কাছে চাঁদা চাইতে এলে হকারদের অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। আইডিয়াল স্কুলের সামনের এক হকার জানান, মতিঝিল থানার চাঁদাবাজি মামলার প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম মোল্লা নিজে থানা থেকে ঘুরে এসে হকারদের জানিয়েছেন তাকে পুলিশ গ্রেফতার করবে না। পুলিশ নাকি তাকে থানায় ডেকে নিয়ে মামলার কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। বিকালে সাইফুল মোল্লার ছেলে শিবলু (চাঁদাবাজি মামলার আসামি) ও সহযোগী মেহের আলী হকারদের কাছে থেকে চাঁদা তুলেছে। এসময় আরেক ছেলেসহ সাইফুল মোল্লা নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে মতিঝিল থানার ডিউটি অফিসার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মামলার আসামি থানা থেকে ফিরে যাবে এমনটা হতেই পারে না। অন্যদিকে, গুলিস্তানের রমনা ভবনের সামনে আগের মতোই মনির ও শফিক হকারদের কাছে থেকে চাঁদা তুলেছে। হকাররা জানান, শফিক নিজেও একজন হকার। চাঁদা তোলার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তার নিজের কোনো চাঁদা দিতে হয় না। মেয়রের বিরুদ্ধে মিটিং মিছিলে বাহির থেকে লোকজন ভাড়া করে আনার দায়িত্ব পালন করে এই শফিক।    
রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৭২ জনকে আসামি করে তিন থানায় তিনটি মামলা দায়ের করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। করপোরেশনের সহকারী সম্পত্তি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সামসুল আলম বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় ১৬ জন, পল্টন থানায় ৪৯ জন ও ও শাহবাগ থানায় ৭ জনকে আসামি করে এ তিনটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী সিটি করপোরেশনের সহকারী সম্পত্তি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সামসুল আলম তার এজাহারে বলেন, রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে দোকান বসিয়ে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত জনচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আসামিরা প্রতিদিন ১০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে আসছিল। ডিএসসিসির পক্ষ থেকে এসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এখনও এই চাঁদাবাজ চক্র ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে।
মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামিরা হলো মো. সাইফুল ইসলাম মোল্লা (৫১), তার ছেলে শিবলু (৩৬), শাহজাহান মৃধা (৪০),  মকবুল (৫০), নূরুল ইসলাম (৫৫), মোঃ. বাবলু (৩৬), তাজুল ইসলাম (৫৭), সাদেক (৩৮), আবদুর রহিম (৫৫),  শ্রী পবন (৪৫), সাইজুদ্দিন (৫৭), আবুল কালাম জুয়েল (৪৬), আজাদ (৪৩), কালা কাশেম (৪৫), ফারুক (৪০) ও সহিদ রেজা বাচ্চু (৫০)। শাহবাগ থানার মামলার আসামিরা হলো লম্বু শাহজাহান (৫৫),  বাবুল (৫০), মানিক (৪৫), ইমরান (৪২), দুলন (৩৮), শাহিন (৪২) ও আইয়ুব (৪২)।
পল্টন থানা মামলার আসামিরা হলো  লম্বা হারুন (৫৩), দেলু (৩৩), নাসির (৪৭),  মিন্টু (৫০), মোঃ আলী মিয়া (৫৭), আবদুল গফুর (৪৭),  কাদের (৪৯), খলিল (৪৭), কোটন মিয়া (৪৫), জাহাঙ্গীর (৫০), নসু (৪৭),  সাজু (৪৫), রহিম (৫০), নুরু (৪৯),  জাহাঙ্গীর (৪৮), আবুল হাসেম কবির (৪৫), আবদুল ওয়াদুদ (৫৮),  সরদার বাবুল (৫৫), বুড়া সালাম (৫৮), জুয়াড়ি সালাম (৫৫), আক্তার (৪৫), জাহাঙ্গীর (৫০) ও কালা নবী (৩৮),  আবদুর রব (৪০), কামাল (৫৭), নজরুল (৫৬),  মনির (৪২), শফিক (৩৮), মোঃ  হাসান (৪০), সোর্স শহীদ (৫২),  বড় মিয়া (৪৫), কালাম (৫০),  বিমল বাবু (৫৫), শওকত (৪৭), হাবিব (৪৮),  ভোলা (৫৭), কানা সিরাজ (৫৮), আবদুল হান্নান (৫৫), আলমগীর (৪৫), সেকান্দার হায়াত (৪৫), মুরসিকুল ইসলাম শিমুল (৫৩), শফিকুর রহমান বাবুল (৩৯), মঞ্জুর মঈন (৪৪), আবুল হোসাইন (৫৫), আরিফ চৌধুরী (৪৫), শ্রী খোকন মজুমদার (৫৫), খায়রুল বাশার (৪৭), রফিকুল ইসলাম (৪২), আব্দুস সাত্তার মোল্লা (৫৭) ও আবুল হাসেম (৫৬)।
হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার এ মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ মামলার আসামিদের গ্রেফতারে কোনো তৎপরতা দেখায় নি। মামলা হওয়ার পরও আসামিরা আগের মতোই ঘোরাফেরা করছে। এমনকি তারা আগের মতোই চাঁদা তুলছে। হকাররা জানায়, গতকাল শনিবার হলিডে মার্কেট থেকে চাঁদা তুলেছে পল্টন থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামি আবুল হোসাইন ও তার সহযোগী কবির। হকাররা জানায়, মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে চাঁদা তুলেছে শাহবাগ থানার মামলার আসামি বাবুল ও লম্বু শাজাহান। এ ছাড়া অন্যান্য আসামিরা তাদের সহযোগিদেরকে দিয়ে চাঁদা তুলেছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তখন মামলার আসামিরা নিজেই এসে হকারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। গুলিস্তানের এক হকার বলেন, শুনেছি তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। কিন্তু তারা তো দিব্যি ঘোরাফেরা করছে। চাঁদা না দিলে তারা নিজে হাজির হয়ে বলছে, মামলা হয়েছে তো কি হয়েছে। টাকা না দিলে দোকান থাকবে না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হকার্স লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে চিহ্নিত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছি। এখন ডিএসসিসি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এখন তাদের গ্রেফতার করতে বাধা কোথায়। মামলার আসামিরা এখনও চাঁদা তুলছে এমন অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, পুলিশ তৎপর হলে এটা তারা করার সাহস পেতো না। তিনি বলেন, চাঁদাবাজরা তাদের সহযোগিদের দিয়েও চাঁদা তুলেছে। আমরা চাই এই চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ হোক। একই সাথে চাঁদাবাজি মামলার আসামিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান হকার্স পুনর্বাসন কমিটির এই নেতা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ