Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যুক্তরাষ্ট্র-জাপান অর্থনৈতিক সংলাপ শুরুর সিদ্ধান্ত

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনার পথ উন্মোচনে অর্থনৈতিক সংলাপ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মধ্যে বৈঠকে দুদেশ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহারের পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনকে মুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন। জাপানি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের উচিত, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য নিয়মতান্ত্রিক, ন্যায্য ও মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গড়ে তোলা। টিপিপি চুক্তির এটাই উদ্দেশ্য ছিল। বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। হোয়াইট হাউজে বৈঠকের পর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে টিপিপি বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। একইভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পও টিপিপির কথা এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, মুক্ত, অবাধ ও পারস্পরিক বাণিজ্যের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। গত শুক্রবার সকালে ওয়াশিংটনে পৌঁছে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় দুই নেতা পরস্পরের প্রতি বেশ হৃদ্যতা ও খোলামেলা মনোভাব প্রদর্শন করেন। জাপানের প্রতি কূটনৈতিক সৌহার্দ্যরে প্রকাশ ঘটাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প শিনজো আবের সম্মানে হোয়াইট হাউজে সামরিক গার্ড অব অনারের আয়োজন করেন। ওভাল অফিসে বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছে শিনজো আবের শক্ত বাহুর প্রশংসা করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার রসায়নেরও প্রশংসা করেন। সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আজ যখন তাকে স্বাগত জানাতে গাড়ির কাছে যাই, আমি তখন শুধু করমর্দন করিনি, বরং তার সঙ্গে আমি কোলাকুলি করেছি। আমরা এমন আন্তরিকতা পোষণ করি। জবাবে শিনজো আবে নাটকীয় রাজনৈতিক উত্থান ও গলফ ম্যাচে দক্ষতার মতো অনেক বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি বলেন, আপনি দারুণ ব্যবসায়ী। সাংবাদিকদের মুখোমুখি স্বগতোক্তির মতো করে জাপানি নেতা বলেন, গলফে আমার স্কোর কোনোভাবেই ডোনাল্ডের স্তরের নয়। খবরে বলা হয়, হোয়াইট হাউজে সংক্ষিপ্ত বৈঠকের পর দুই নেতা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ফ্লোরিডা যান। সেখানে ট্রাম্পের মালিকানাধীন মার-আ-লাগো এস্টেটে তারা অবস্থান করেন। দুই নেতা গতকাল শনিবার সেখানে কয়েক দফা আলোচনার পাশাপাশি গলফ খেলেন। ফ্লোরিডায় দুই নেতার গলফ ম্যাচ জাপানি প্রধানমন্ত্রীর পিতামহের যুক্তরাষ্ট্র সফরকে মনে করিয়ে দিতে পারে। শিনজো আবের পিতামহ নবুসুকি কিশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। যুদ্ধকালীন বৈরী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের উদ্দেশ্যে তিনি ওই সফর করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুয়িট আইজেনহাওয়ার ছিলেন গলফ খেলার ভক্ত। নবুসুকি কিশি তার সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক গড়তে পোলো শার্ট পরে গলফ কোর্টে নেমেছিলেন। এবারে শিনজো আবে ও ডোনাল্ড ট্রাম্প পরস্পরের যতই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করুন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন অত সাবলীল নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প টিপিপি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করায় জাপান হতাশ হয়েছে। পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতা ও অন্যান্য বিষয়ে জাপানকে দোষারোপ করে ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্য টোকিওর নীতিপ্রণেতাদের অস্বস্তি ও অশান্তির কারণ হয়েছে। মেক্সিকোতে বিনিয়োগের জন্য ট্রাম্প যেভাবে জাপানি কোম্পানিগুলোর নামোল্লেখ করে টুইটারে হুমকি দিয়েছেন, সেটাও টোকিওর নেতাদের ভালো লাগার কথা নয়। বিভিন্ন আমদানি পণ্যে চড়া শুল্ক আরোপের যে পরিকল্পনা হোয়াইট হাউজ করছে, জাপানের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের জন্য তা হানিকর হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় কূটনীতিকে লেনদেনের বিষয় হিসেবে ভাবার প্রবণতা দেখা গেছে। জাপানি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে টার্গেট করে ট্রাম্পের জন্য নতুন টোপ দিয়েছেন। ট্রাম্পকে ১ ঘণ্টার মধ্যে হোয়াইট হাউজ থেকে নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে নিয়ে যেতে তিনি জাপানি নকশায় উচ্চগতির রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন। দুদেশের মধ্যকার সম্পর্ক গভীরতর করতে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনার পথ উন্মোচনে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান অর্থনৈতিক সংলাপ শুরু করবে। জাপানি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রস্তাব দিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্মতি প্রদান করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জানিয়েছেন, উপ-প্রধানমন্ত্রী তারো আসো ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এ সংলাপের জন্য পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করেন। জাপান সরকারের আমন্ত্রণে মাইক পেন্স শিগগিরই দেশটি সফর করবেন। শিনজো আবে সাংবাদিকদের বলেন, এ সংলাপ থেকে ভালো ফল আসবে বলে আমি যথেষ্ট আশাবাদী। এর আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তার দেশের কোম্পানিগুলোর অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বাণিজ্য দুপক্ষের জন্যই জয়সূচক ফল এনেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, টয়োটা ও হোন্ডার বিক্রীত স্বল্পমূল্যের গাড়িগুলোর বেশির ভাগই মার্কিন কারখানায় মার্কিন শ্রমিকদের হাতে প্রস্তুত হয়েছে। জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ৪১ হাজার ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ইউএস চেম্বার অব কমার্সে দেয়া এক বক্তৃতায় জাপানি প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে শিনজো আবে বলেন, মার্কিন বাজারে আসা জাপানি গাড়ির ৭০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুত হয়েছে। জাপানে কেউ এজন্য অভিযোগ তোলেনি যে তাদের কর্মসংস্থান অন্যত্র স্থানান্তর হয়েছে। কেননা, জাপানও এ ব্যবসা থেকে লাভবান হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ