Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্যাম্পাসে ঢেঁকির বৈঠকখানা

| প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ক্যাম্পাসে আসতেই পিঠা উৎসবের স্টল বুকিং-এর ব্যানার চোখে পড়লো আমানের। বাকি আর ৫ দিন। শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হওয়ায় আর হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পিঠা উৎসব সে পাবে না। গত বছরের পিঠা উৎসব সে দেখেছে। সেই চোখ ধাঁধানো পিঠা উৎসবের কথা ভুলতে পারেনি আজও। তাই এবার আর মিস না করে একটি স্টল নেওয়ার কথা ভাবতে ভাবতেই ক্লাসের দিকে এগুলো আমান। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আমান। বন্ধুদের যেভাবেই হোক স্টল নেওয়ার জন্যে রাজি করাতে হবে তার।
আয়োজন, পিঠা বানানোর ঝামেলা আর লাভ-ক্ষতির অংক কষতে কষতে কেউ রাজি হলো আর কেউ মীনরাজি। এইসব দেখে এতক্ষণ চুপচাপ থাকা ঊর্মিলা বলে উঠলো, “তোরা এতো চিন্তা করিস ক্যান! আমরা স্টলও দিব, পিঠাও বানাবো, বিক্রিও করব। যদি বিক্রি না হয়, আমরাই সব খাবো। সামান্য লসের চিন্তা করে ক্যাম্পাস জীবনের এতো বড় উৎসব তো মিস করা যায় না।” সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। আমান, হীরা, লাবণ্য, উম্মে কুলসুম, উর্মিলা, রুবি, ফয়সাল, নিয়ামুল, নিশি, সুমন, এমদাদ ও অনিক। ব্যাচের সাপোর্টে এই বারোজন এইবারের পিঠা উৎসবে হাজির হচ্ছে ইংরেজি বিভাগের ১৬তম ব্যাচের প্রতিনিধিত্ব করতে। সবাই মিলে দায়িত্ব ভাগ করে নিলো। কেউ করবে কেনাকাটা, কেউ বানাবে পিঠা আর কেউ সাজাবে স্টল। ক্লাসের ফাঁকেই চললো পিঠার লিস্ট বানানোর কাজ। বাকি সব গল্প ও প্ল্যানিং-এর জন্য ভরসা ম্যাসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ। একেকজনের একেক নামের প্রস্তাব চলতে থাকলো মাঝ রাত পর্যন্ত। রাত বাড়ছে, বাড়ছে শীতও। কিন্তু ৩০ জানুয়ারির পিঠা উৎসবের চিন্তা ঘুম কেড়ে নিয়েছে সবার।
পরেরদিন আবার বসলো গোলমিটিং। এইবারের প্রতিপাদ্য ‘স্টলের নাম’। মাথায় সব সময় আইডিয়া খেলতে থাকা লাবণ্য বললো, “আচ্ছা, পিঠা বানাতে আগে তো ঢেঁকির সাহায্যই বেশি লাগতো। সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমরা ‘ঢেঁকির বৈঠকখানা’ নামটা ব্যবহার করতে পারি। সেটা যেন কেউ না ভুলে যায় তা মনে করিয়ে দিতেই এই নাম রাখা।” করতালি মাধ্যমে পাস হলো নামের প্রস্তাবনা। স্টলের সামনে বানানো হলো দর্শনার্থী আর ক্রেতাদের জন্য নকল ঢেঁকি। প্রায় ২৫ ধরনের পিঠা বানিয়ে বিক্রির সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পুরোপুরি বাঙালিয়ানা সাজে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হলো ইংরেজি বিভাগের পিঠা ব্যবসায়ীদের দল।
প্রথম পিঠা কিনে উদ্বোধন করলো ফয়সাল মোলা নামে এক শিক্ষার্থী। তারপর নিজ বিভাগের শিক্ষক, সিনিয়র, জুনিয়রদের কাছে চাওয়া হলো মন মতো দাম। সবার আশা, এমন আয়োজন শানিত করবে বাঙালির ঐতিহ্যকে, উৎসাহ দিবে ঐতিহ্য চর্চাকে, জীবিত রাখবে চিরচেনা বাঙালির পিঠা-পার্বণ উৎসবকে।
ষ মো. রিফাত মেহেদী
ছবি : শাহাদাত রাফি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ