Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৩৭তম বিসিএস লিখিত

| প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পরীক্ষার জন্য
বিষয় : বাংলা (বিরচন অংশ)
শামসুল আলম
চেয়ারম্যান
ক্যারিয়ার গাইডলাইন

(২১)
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র
নানাভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়
পাঠ্য যে সব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌত‚হলে সন্দেহ নাই মাত্র।
সারমর্ম : মানুষের জীবনে বিশ্ব এক বিরাট শিক্ষাঙ্গন। যুগ যুগ ধরে বিশ্বের এই মহাপাঠশালা থেকেই মানুষ অর্জন করেছে অন্বেষা ও অভিজ্ঞতালব্ধ বিপুল জ্ঞান। তার উপর ভিত্তি করেই বিকশিত হচ্ছে মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতি।
(২২)
বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি, সে আমার নয়Ñ
অসংখ্য বন্ধন-মাঝে মহানন্দময়
লভিব মুক্তির স্বাধ। এই বসুধার
মৃত্তিকার পাত্রখানি ভরি বারংবার
তোমর অমৃত ঢালি দিবে অবিরত
নানা বর্ণগন্ধময়। প্রদীপের মতো
সমস্ত সংসার মোর লক্ষ বর্তিকায়
জ্বালায়ে তুলিবে আলো তোমরি শিখায়
তোমারি মন্দির মাঝেÑ
সারমর্ম : জগৎ ও জীবনকে যাঁরা ঈশ্বর-সাধনার অন্তরায় মনে করেন তাঁরা খেয়াল করেন না যে, বিশ্বপ্রকৃতি ও মানব জীবনের মধ্যেই রয়েছে সমস্ত মহিমার প্রকাশ। তাই সংসারের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার মধ্যে থেকেই স্রষ্টার প্রেমে লীন হয়ে মানুষ মুক্তির সন্ধান পেতে পারে।
(২৩)
ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো, পোষ-মানা এই প্রাণ
বোতাম-আঁটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান।
দেখা হলেই মিষ্ট অতি, মুখের ভাব শিষ্ট অতি,
অলস দেহ ক্লিষ্টগতি-গৃহের প্রতি টান।
তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু নিদ্রারসে ভরা,
মাথায় ছোটো বহরে বড়ো বাঙালি সন্তান।
ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন!
চরণতলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন।
ছুটেছে ঘোড়া, উড়েছে বালি, জীবনস্রোত আকাশে ঢালি,
হৃদয়তলে বহ্নি জ্বালি চলেছি নিশিদিন।
বরশা হাতে, ভরসা প্রাণে, সদাই নিরুদ্দেশ,
মরুর ঝড় যেমন বহে সকল-বাধাহীন।
সারমর্ম : বাঙালি বরাবরই শান্ত ও নিস্তরঙ্গ জীবনে অভ্যস্ত। তাই গৃহ বন্ধনের মধ্যে আলস্যভরা জীবনের গÐিতে সে বাঁধা পড়ে আছে। এই ঘরকুনো জীবনের গÐি ভেঙে বাঙালিকে বৃহত্তর জীবনের সঙ্গে যোগসূত্র রচনা করতে হবে। কর্মচঞ্চল বৃহত্তর জীবনের সঙ্গে যুক্ত হলেই ঘাত প্রতিঘাতের সঙ্গে লড়াই করার উপযুক্ত হয়ে উঠবে।
(২৪)
মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই,
এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই।
ধরায় প্রাণের খেলা চিরতরঙ্গিত,
বিরহ মিলন কত হাসি-অশ্রæ-ময়,
মানবের সুখে দুঃখে গাঁথিয়া সংগীত
যদি গো রচিতে পারি অমর-আলয়।
তা যদি না পারি তবে বাঁচি যত কাল
তোমাদেরি মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই,
তোমরা তুলিবে বলে সকাল বিকাল
নব নব সংগীতের কুসুম ফুটাই।
হাসিমুখে নিয়ো ফুল, তার পরে হায়,
ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায়।
সারমর্ম : এই সুন্দর পৃথিবীতে মানব-হৃদয়ের সান্নিধ্যে প্রতিটি মানুষই বাঁচতে চায়। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনাও মিলন-বিরহে স্পন্দিত এই জগৎ-সংসারে নিত্য প্রবাহিত মানুষের জীবনলীলা। সেই লীলাবৈচিত্র্যকেই কবি দেন সংগীতের রূপ। সে সংগীত যদি চিরকালীন মহিমা নাও পায় তাতে কবির দুঃখ নেই। তা মানব মনে ক্ষণিক আনন্দ সঞ্চার করতে পারলেই তিনি সুখী।
(২৫)
শৈশবে সদুপদেশ যাহার না রোচে,
জীবনে তাহার কভু মূর্খতা না ঘোচে।
চৈত্র মাসে চাষ দিয়া না বোনে বৈশাখে,
কবে সেই হৈমন্তিক ধান্য পেয়ে থাকে?
সময় ছাড়িয়া দিয়া করে পÐশ্রম,
উল কহে সেও অতি নির্বোধ অধম।
খেয়াতরী চলে গেলে বসে থাকে তীরে,
কিসে পার হবে তারা না আসিলে ফিরেÑ
সারমর্ম : জীবনে সার্থকতা অর্জনের জন্যে ছেলেবেলা থেকেই নৈতিক সততার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। শৈশবে সৎ কাজ করতে না শিখলে পরে আর সে অভ্যাস গড়ে ওঠে না। সময়ের কাজ সময়ে না করলে তার জন্যেও জীবনে মূল্য দিতে হয় প্রচুর। কারণ, সুযোগ চলে গেলে তা হয়ত আর ফিরে আসে না।
(২৬)
শ্যামল সুন্দর সৌম্য, হে অরণ্যভ‚মি,
মানবের পুরাতন বাসগৃহ তুমি।
নিশ্চল নির্জীব নহ সৌধের মতনÑ
তোমার মুখশ্রীখানি নিত্যই নূতন
প্রাণে প্রেমে ভাবে অর্থে সজীব সচল।
তুমি দাও ছায়াখানি, দাও ফুল ফল,
দাও বস্ত্র, দাও শয্যা, দাও স্বাধীনতা;
নিশিদিন মর্মরিয়া কহ কত কথা
অজানা ভাষার মন্ত্র : বিচিত্র সংগীতে
গাও জাগরণগাথা, গভীর নিশীতে
পাতি দাও নিস্তব্ধতা অঞ্চলের মতো
জননীবক্ষের; বিচিত্র হিল্লোলে কত
খেলা কর শিমুসনে; বৃদ্ধের সহিত
কহ সনাতন বাণী বচন-অতীত।
সারমর্ম : শ্যামল অরণ্য ছিল মানুষের আদিমতম বাসগৃহ। একালের দালান-কোঠার মতো তা নিষ্প্রাণ ছিল না। অরণ্যের জীবন ছিল প্রাণচাঞ্চল্যে সজীব, হৃদয়াবেগে ভরপুর। অরণ্য মানুষকে দিয়েছে শ্যামল ছায়া, বাঁচার উপকরণ, আর মুক্তজীবনের আস্বাদ। মানব হৃদয়কে মন্দ্রিত করেছে মর্মর ধ্বনিতে। সহজ, সরল, প্রশান্তিময় সেই জীবনে উচ্চারিত হয়েছে কত অমর বাণী। আজ অরণ্যকে হারিয়ে মানুষ সেই জীবন-সুষমা থেকে নির্বাসিত।
(২৭)
সবারে বাসরে ভাল
নইলে মনের কাল মুছবে নারে!
আজ তোর যাহা ভাল
ফুলের মত দে সবারে।
করি তুই আপন আপন,
হারালি যা ছিল আপন,
এবার তোর ভরা আপন
বিলিয়ে দে তুই যারে তারে।
যারে তুই ভাবিস ফণী
তারো মাথায় আছে মণি
বাজা তোর প্রেমের বাঁশি
ভবের বনে ভয় বা কারে?
সবাই যে তোর মায়ের ছেলে
রাখবি কারে, কারে ফেলে?
একই নায়ে সকল ভায়ে
যেতে হবে রে ওপারে।
সারমর্ম : প্রীতি ও প্রেমের সম্পর্কের বন্ধনেই মানুষ মহীয়ান হয়ে ওঠে। কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবতে গেলে আর সবাইকে হারাতে হয়। মানব জীবনকে সফল ও সার্থক করতে হলে চাই মানুষে মানুষে মমত্ব ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন