Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মারাত্মক সাংবিধানিক সংকটে বাংলাদেশ -এএইচআরসি

প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৯ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার ওপর অব্যাহত আক্রমণের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক দুটি মানবাধিকার সংগঠন। এক যৌথ বিবৃতিতে সংস্থা গ্লোবাল সিভিল সোসাইটি জোট (সিভিকাস) ও এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের (এএইচআরসি) সহযোগী সংস্থা এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার (এএলআরসি) তাদের এ উদ্বেগ জানায়।
সিভিকাসের পলিসি ও রিসার্চ প্রধান মানদ্বিপ তিওয়ানা বলেন, বিরোধীদের মতপ্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ চালানোর মাধ্যমে বাংলাদেশে মারাত্মক সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক দমনপীড়ন ও সুশীল সমাজের ওপর আঘাত পূর্বে অর্জিত ইতিবাচক অবস্থান ও স্থিতাবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে গত বছরের ৫ জানুয়ারি দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলো ব্যাপক প্রতিবাদ কর্মসূচি ও সাধারণ ধর্মঘট পালন করেছিল। বরাবরের মতো পুলিশ এই প্রতিবাদ কর্মসূচি প্রতিহত করার লক্ষ্যে ব্যাপক ধরপাকড়, গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং বলপ্রয়োগসহ নানাবিধ কর্মকা- চালায়। পুলিশের এহেন নির্যাতনের হাত থেকে দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও মিডিয়াগুলোও রক্ষা পায়নি।
৫ জানুয়ারির আন্দোলন ঠেকাতে সরকার ঔপনিবেশিক আমলের আইনি ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে রাজধানীতে সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় রাজধানী ঢাকাতে কমপক্ষে ১৪ হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন বিনাবিচারে জেলে আটকিয়ে রাখে সরকার। গ্রেপ্তারকৃত অনেকেই এখনো কারাগারে বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে বলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জানিয়েছে।
এছাড়াও দেশজুড়ে পুলিশ ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০০ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। গত বছরের ১৭ মার্চ জেলা শহর কুড়িগ্রামে হরতাল আহ্বানকারীদের ঠেকাতে পুলিশ বেসামরিক লোকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের খবর প্রচার করায় সরকারের নির্যাতনের হাত থেকে গণমাধ্যমও রক্ষা পায়নি। বিরোধী দল সমর্থক বলে পরিচিত বেশকিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া যেমন- চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি এবং দৈনিক আমার দেশ কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
বিরোধী দলের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক খ্যাতনামা সাংবাদিকও মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে দীর্ঘদিন কারাবাস করছেন। বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতার বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান ও সিইও আব্দুস সালামকে গত বছরের ৬ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও যৌন উত্তেজনামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি দৈনিক ইনকিলাবের ৩ সাংবাদিক রবিউল্লাহ রবি, রফিক মোহাম্মদ ও আহমদ আতিককে বিতর্কিত তথ্য-প্রযুক্তি আইনে পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ খবর প্রকাশের অভিযোগে অভিযুক্ত সাংবাদিকবৃন্দ জামিনে মুক্তি পেলেও মামলাটি এখনো চলমান।
এএলআরসির নির্বাহী পরিচালক বিজো ফ্রান্সিস বলেন, ক্রমবর্ধমান স্বৈরতান্ত্রিকতা বাংলাদেশের মৌলিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রায়নের পথে প্রধান হুমকি হয়ে উঠেছে। মতপ্রকাশ, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতার ওপর অব্যাহত হস্তক্ষেপ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ওপর চালানো নির্যাতন বাংলাদেশকে ক্রমেই অরক্ষিত ও অস্থিতিশীল করে তুলছে যা চরমপন্থাকে উৎসাহিত করে এ অঞ্চলের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
সিভিকাস ও এএলআরসি বাংলাদেশের সরকারকে দেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে জনগণের উদ্বেগ নিরসন করে দেশে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে সভা-সমাবেশ থেকে গ্রেপ্তারকৃত সকল নাগরিকের মুক্তি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার বন্ধকরণ এবং সাংবাদিকদের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মারাত্মক সাংবিধানিক সংকটে বাংলাদেশ -এএইচআরসি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ