Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

২৪ কেজি ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে না ১ কেজি গোশত

| প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : কৃষক শরাফত মিয়ার ছেলেমেয়েরা বায়না ধরেছে গোশত খাবে। মিঠাছরা বাজারে লাইয়ে করে মাথায় বয়ে এনে ২ আড়ি (২৪ কেজি) ধান বিক্রি করে গোশত কিনতে গেল জাব্বার মিয়া। কেজি ৫০০ টাকা দাম চাইল। ২০ কেজি (৫ আড়ি) ধান বিক্রি করে পেয়েছে ৪৫০ টাকা। কিন্তু ৮ জনের সংসারে ১ কেজির কম গোশত কিনে কি করে চলবে? কি আর করা আরো ৫০ টাকা ধার করেই গোশত কিনল। কিন্তু সাথে আর কিছু কেনার সাধ্য থাকল না। মহামায়া লেকের নৌকা চালক ও মাংস কিনতে এলো দাম ৫০০ টাকা শুনে আর কিনল না। আবার ছাগলের মাংস তো ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে সাধারণ ক্রেতারা ওই গোশতের দিকে যাচ্ছেও না। কিন্তু এরপরও বাড়লো গোশতের দাম। আবার কমেছে গরুর দামও। তবে গরিবের জন্য কি শখ করেও গরুর গোশতের আমিষ আর জুটবে না পাতে? মিঠাছরা বাজারে গরু বিক্রি করতে এসেছে কাটাছরার গ্রামের মাহফুজুল হক। ৫৫ হাজার টাকার একটি গরু বিক্রির জন্য বাজারে তুলেও বড় কোনো ক্রেতা পাননি। স্থানীয় দু-একজন মাংস ব্যবসায়ী গরুটি কেনার আগ্রহ দেখালেও ৪৫ হাজার টাকার বেশি দাম দিতে চাননি। কিন্তু ঋণ পরিশোধের তাড়া থাকায় ওই দামেই গরুটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন রমজান আলী। একই অবস্থা আবুতোরাব ও বড়দারোগারহাট বাজারেও। এসব বাজারে বড় কোনো ক্রেতা না থাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৮ হাজার টাকা কমে গরু বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। পাশাপাশি ছাগলের দামও দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কম পেয়েছেন। মিঠাছরা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন বলেন মিঠাছরা বাজারে ও মাসে ৭০টি গরু প্রয়োজন হয়। আজকের জবাইকৃত গরুর দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ইন্ডিয়ান গরু বলে বিক্রি শেষে আমাদের জন্য কিছু থাকতে পারে। তবে দেশি গরু হলে তা সম্ভব হতো না। দামেও পোষায় না আবার মাংসেও কম হয়। তিনি আরো বলেন, ইন্ডিয়ান গরুগুলোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে প্রতি গরুতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিজিবি, বিএসফকে ঘুষ ও চালানিদের দালালিতে বেশি ব্যয় হয়। নাইলে আরো কম দামে গরু পাওয়া যেত। কমে গরু পেলে মাংস ও কম দামে বিক্রি সম্ভব হতো। তবে দেশি গরুর ক্ষেত্রে মূল্য আরো কমে কেন যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশি গরুতে মাংস কম হয়। বাহির থেকে দেখা যায় এক রকম, জবাই করলে অন্যরকম। অপর গরু বেপারী জানান, অর্ধশতাধিক বেপারী গড়ে প্রতি সপ্তাহে হাজার খানেক গরু ঢাকা-চট্টগ্রাম সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি গরু বিক্রি করতে না পারায় তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাংস ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের প্রভাব পড়ে মীরসরাই উপজেলার স্থানীয় বাজারগুলোয় গরু ও ছাগল বিক্রিতে। এসব বাজারের গরুর দাম আকারভেদে ৫-১০ হাজার এবং ছাগলের দাম ২-৪ হাজার টাকা কমেছে। কিন্তু কমেনি মাংসের দাম। গরুর দাম কমলে ও মাংসের দাম কেন বেড়েছে এই রহস্য বুঝে উঠতে পারছেন না ক্রেতা ও সাধারণ কেউ। অভিযোগ উঠেছে, দেশের কোন কোন স্থানে মাংস বিক্রেতাগণ বিক্রয় বন্ধ থাকার পর এবার ভোক্তাদের কাছে বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করছেন। মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন হাটেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে গরু ও ছাগলের মাংসের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। এতে লাভবান হচ্ছেন মাংস বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। পক্ষান্তরে সাধারণ দরিদ্র মানুষের আরো নাগালের বাহিরে গেল গরু ও ছাগলের মাংস। মাংসের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মাংস ব্যবসায়ীরা জানান আমাদের চারদফা দাবি ছিল। সেসব দাবি সরকার মেনে নিলে মাংসের দাম ৩০০ টাকায় নেমে আসবে। তিনি বলেন, আগে ভারত থেকে চাহিদার ৬৫ শতাংশ গরু আসত। বর্তমানে তা কমে ৩৫ শতাংশে নেমেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী গরু সরবরাহ না হওয়ায় দাম কমানো যাচ্ছে না। পশু ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান জানান, বর্তমানে গরুর দাম অনেক বেশি। ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকায় সংকট চলছে। চট্টগ্রাম শহরেও দৈনিক গরুর চাহিদা রয়েছে ২০ গাড়ি। আর আমদানি হচ্ছে মাত্র পাঁচ গাড়ি। মীরসরাই উপজেলায় গরুর চাহিদা দৈনিক ১০টি তাও পাওয়া যাচ্ছে ৫টি। এ বিষয়ে মীরসরাইয়ের প্রাণী সম্পদ অফিসার শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার জানান, মাংস হিসেবে দেশীয় গরুর চাহিদা বাড়ছে। খামারিরাও তাই গরু পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে শীঘ্রই আমরা ভোক্তাদের ন্যায্যতা ও সক্ষমতার বিষয়ে এবং বাজার মূল্যের উপর বিষদ পদক্ষেপ নিব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ