Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সীমা মামলামুক্ত : সাক্কুর নামে দুদক ও আয়কর মামলা

দুই মেয়র প্রার্থীর হালচাল

| প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা গ্র্যাজুয়েট। বিএ-বিএডধারী এ নারী প্রার্থীর পেশা শিক্ষক বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু এসএসসি পাস। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় সাক্কু সম্পদ ও মামলার বিষয়ের পাশাপাশি নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করেছেন। সম্পদের দিক থেকে তিনি প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী সীমার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
সাক্কুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন ও আয়কর আইনে দুইটি মামলা চলমান থাকলেও সীমার নামে নেই কোনো মামলা। এদিকে গতকাল (রোববার) যাচাই-বাছাই পর্বে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে একজনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচন অফিসে যাচাই-বাছাই শেষে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর সাক্কু ও সীমা নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।   
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের নজরে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু। কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা অ্যাডভোকেট আফজল খানের একমাত্র কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমা রাজনীতি ও পেশাগত জীবনে বরাবরই ক্লিন ইমেজের অধিকারী। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর তিনি কখনো কারো সঙ্গে বিরোধে জড়াননি। আফজল খান পরিবারের অন্য সদস্যরা বিভিন্ন ঘটনায় নানাভাবে আলোচনা-সমালোচনার জায়গায় উঠে এলেও ওই পরিবারের সীমা ছিলেন সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার রয়েছে ঝঞ্জাটমুক্ত রাজনৈতিক পথচলা। তিনি বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভার সাধারণ ওয়ার্ডে প্রথম নারী কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে পৌরসভার চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও কুমিল্লা সদর উপজেলা নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন। সিটি কর্পোরেশন গঠন হওয়ার পর কুসিকের প্রথম নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্যও ছিলেন। সর্বশেষ কুমিল্লা মডার্ন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। আফজল খান পরিবারের এই প্রথম কোনো সদস্য আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অবতীর্ণ হলেন। প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে তিনি পাবেন নৌকা।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় সীমা উল্লেখ করেছেন তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। শিক্ষকতা এবং অন্যান্য খাত থেকে বছরে সর্বমোট ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আয় করে থাকেন। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে স্বামী নিসার উদ্দিন আহমেদের নামে। এছাড়াও সীমার নগদ টাকা রয়েছে ৫০ হাজার, ব্যাংকে জমা ৪৬ লাখ টাকা এবং সঞ্চয়পত্র বাবদ রয়েছে ২০ লাখ টাকা।          
অন্যদিকে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অপর হেভিওয়েট প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকবিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে সাক্কু একজন প্রভাবশালী নেতা। ১৯৯৩ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা যুবদলের সভাপতি হন। ২০০৩ সালে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০১০ সালে দলের জেলা সম্মেলনে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর ২০০৫ সালের উপনির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। ২০০৫ সালের ২১ মে তিনি পৌর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ২০০৬ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একটি মামলার আসামি হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন পৌর পরিষদে অনুপস্থিত থাকেন। এতে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরপর মামলা ও আইনি জটিলতা শেষ করে ২০০৯ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি পৌরসভায় পদে ফিরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠন পর্যন্ত তিনি মেয়র ছিলেন। মেয়র থাকাকালীন মনিরুল হক সাক্কু পৌর এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যাপক ভূমিকার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে ড্রেন পরিষ্কার ও সংস্কার কাজের জন্য পৌরবাসীর কাছে প্রশংসিত হন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি নবগঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে সাক্কু বিপুল ভোটের ব্যবধানে সিটি মেয়র নির্বাচিত হন।
দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো আগামী ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় মনিরুল হক সাক্কু উল্লেখ করেছেন তিনি তার বিরুদ্ধে বর্তমানে রাজধানীর রমনা থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে একটি এবং আয়কর অধ্যাদেশ আইনে কুমিল্লায় একটি মামলা রয়েছে। হলফ বিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে অর্থ, স্থাবর- অস্থাবর সম্পদ, বাড়ি, গাড়ি, সঞ্চয়পত্রে তিনি কোটিপতি। এক্ষেত্রে সাক্কুর চেয়ে বেশি অর্থসম্পদের মালিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলীকে। সাক্কু তার আয়ের মধ্যে বাড়িভাড়া পান ৭২ হাজার টাকা। ব্যাংক সুদ ও প্রাপ্ত সম্মানী ভাতা মিলে পেয়েছেন ১৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ রয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র বাবদ রয়েছে দুই লাখ টাকা। অন্যদিকে স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলীর নামে নগদ রয়েছে ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আর ব্যাংকে জমা রয়েছে ৮৭ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র বাবদ সাক্কুর স্ত্রীর রয়েছে ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তার স্ত্রী ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েছেন দুই কোটি ১২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।       
এদিকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মোট পাঁচ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। গতকাল রোববার নির্বাচন অফিসে যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিনে মেয়র পদের একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তিনি হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব:) মামুনুর রশীদ। জেলা নির্বাচন আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, ত্রæটিপূর্ণ হওয়ায় মেজর (অব:) মামুনুর রশীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়ন বৈধ হওয়া আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুসহ অন্য দুইজন হলেন জাসদ মনোনীত প্রার্থী শিরিন আক্তার ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) অ্যাডভোকেট সোয়েবুর রহমান। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ