Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তিস্তায় পানি নেই

| প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


চুক্তি নিয়ে ভারত এখনও কিছু জানায়নি
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : তিস্তায় পানি নেই। মরতে বসেছে তিস্তা সেচ প্রকল্প। চলতি খরিপ মৌসুমে সেচ সুবিধা না পাওয়ায় তিস্তা পাড়ের লাখ লাখ কৃষকের মাঝে এখন হতাশা। চুক্তির ব্যাপারে ভারত এখনও বাংলাদেশকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি আদৌ হবে কীনা তা নিয়ে সরকার এখনও নিশ্চিত নয়।
এদিকে, তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা রেল সেতু, তিস্তা সড়ক সেতু ও নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু যেন প্রহসনমূলকভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধূ-ধূ বালু চরে তিস্তার উপর। ব্রিজ থাকলেও পায়ে হেঁটেই পাড় হচ্ছেন অনেকেই। তিস্তা পাড়ের হাজারো মানুষের দাবি, যে করেই হোক তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা তাদের চাই।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারী জেলার দোয়ানীতে নির্মিত তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলে কৃষি জমিতে যে সেচ দেয়ার কথা, তা এখন অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে কৃষি, মাছ, পরিবেশ ও নৌ-যোগাযোগ ক্ষেত্রে। প্রকৃতি ক্রমাগত হারিয়ে ফেলছে ভারসাম্য। পানিশূন্য তিস্তায় মাছ ধরতে না পেরে জেলেরা পড়েছেন নিদারুণ কষ্টে। তিস্তার এ বৈরী আচরণে অনেক জেলে পরিবার তাদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। এমনকি তিস্তা চরে নানা ধরনের সবজির আবাদ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হতে উৎপন্ন ঐতিহাসিক এ খর¯্রােতা নদী তিস্তা। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশে যায়।
এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত সরকার একতরফাভাবে তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বর্ষা শেষ হতে না হতেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরা খালে পরিণত হয়েছে।
তিস্তার এই দুরবস্থা নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে চুক্তি হওয়াটা এখন দেশের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে তিস্তা নিয়ে আদৌ আলোচনা হবে কীনাÑ তা এখনও নিশ্চিত করে বলে যাচ্ছে না।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানির প্রবাহ ভাল ছিল বলে ৬০ হাজার হেক্টর জমি ওই সময় সেচ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছিল। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ৬০ হাজার হেক্টর জমিকে লক্ষ্যমাত্রা ধরে সেখানকার দরিদ্র কৃষক বীজতলা (ধানের চারা রোপণ) করলেও; তিস্তায় পানি না থাকায় দরিদ্র কৃষকের বীজতলা মার খায়। কমে যায় সেচযোগ্য আবাদি জমির পরিমাণ।
আর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পানির অভাবে গোটা তিস্তা প্রকল্পই পড়েছিল হুমকির মুখে। এতে করে তিস্তা প্রকল্পে সেচযোগ্য আবাদি জমির পরিমাণ নেমে দাঁড়িয়েছিল ১০ হাজার হেক্টরে। চলতি শুষ্ক মৌসুমেও সেচযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়েনি। বরং কমেছে।
তিস্তা নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমে ভারত উজানে নির্মিত গজলডোবা ব্যারেজের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় এই ব্যারেজ নির্মাণ শুরুর আগে ১৯৭৩-৮৫ সময়কালে (১২ বছর) বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানি প্রবাহ অনেক ভালো ছিল। যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা যায়, উল্লেখিত ১২ বছরে ফেব্রæয়ারির প্রথম ১০ দিনে পানি প্রবাহ ছিল ৫ হাজার ৯৮৬ কিউসেক।
গত বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারিতে তা নেমে আসে ৯৬৩ কিউসেকে। ২০১৫ সালে মধ্য মার্চে তিস্তায় নাব্যতা নেমে এসেছিল ২৭৮ কিউসেকে। ২০১৬ সালে সর্বমিন্ন পানি ছিল ৩৫৪ কিউসেক। স্থানীয় পাউবো জানায়, এ বছর মার্চের শুরুতে তিস্তায় পানি রয়েছে ৫শ’ কিউসেকের নিচে।
তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে ভারতের সাথে অন্তর্বর্তীকালীন খসড়া চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব রয়েছে-তিস্তার ৪০ ভাগ পানি ভারত পাবে এবং ৪০ ভাগ পানি পাবে বাংলাদেশ। আর তিস্তার নাব্যতা রক্ষার জন্য থাকবে বাকি ২০ ভাগ পানি।
ভারতের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সম্মতিও জানানো হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ওই সময় তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করায় তা আটকে যায়। এই জট খুলতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ অব্যাহত রাখা হলেও ভারতের সাড়া এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরেও তিস্তা চুক্তি হচ্ছে কীনা-তা সরকারের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, তিস্তা চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশকে প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। আশা করি, সেটা থেকে তারা বিচ্যুত হবেন না। তিনি বলেন, তিস্তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কথা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা বলা যাচ্ছে না। এটি নিয়ে তাদের (ভারত) অভ্যন্তরীণ সমস্যাও রয়েছে।



 

Show all comments
  • জাহিদ ৮ মার্চ, ২০১৭, ১:৩৮ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর সফরে এই সমস্যার সমাধান করতেই হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Selina ৮ মার্চ, ২০১৭, ৫:৪৪ এএম says : 0
    out of 54 river already 30. river totally water flow blockrd and 24 river natural water flow totally block within short time .app.20 thousands rupe emergency allocation given .no say only app. 30 core eye let water drop into the 54 river .
    Total Reply(0) Reply
  • ৮ মার্চ, ২০১৭, ১১:০৬ এএম says : 0
    যে দেশ আমাদের নেজ্জ হিসসা দেয় না তাদের সাথে আর কোন চুক্তি না করার জন্ন অনুরদ রইল, সাম রিক চুক্তি তো ন ই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তিস্তায় পানি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ