Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুকুর নিয়ে ঝগড়া থেকে পতন

| প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দুর্নীতির অভিযোগে পার্লামেন্টে অভিশংসিত হবার পর আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হেই। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতির হাঁড়ির খবর যারা রাখেন- তারা বলছেন এক বিচিত্র ঘটনার কথা। তাদের মতে এই পতনের সূচনা হয়েছিল ‘একটি কুকুরছানা নিয়ে’ এক ঝগড়া থেকে। ঝগড়াটি বেধেছিল প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হেই’র বান্ধবী চোই সুন-সিল এবং তার কথিত প্রেমিক সাবেক ফেন্সিং-তারকা কো ইয়ং তাই-এর মধ্যে।
সুদর্শন এবং সুঠাম দেহের অধিকারী ৪০ বছর বয়স্ক মি. কো-র সাথে ৬০ বছর বয়স্ক মিজ চোইয়ের সম্পর্ক নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গুজবের শেষ ছিল না। তবে তারা নিজেরা বলেন, তারা ছিলেন শুধুই বন্ধু, কখনোই প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি। তবে সেই ‘বিখ্যাত’ ঝগড়ার কারণ কী - তা মি. কো পরে নিজেই বর্ণনা করেছেন সাংবাদিকদের কাছে।
মিজ চোই-এর মেয়ের একটি পোষা কুকুরছানা ছিল এবং একদিন মিজ চোই সেই কুকুরটি দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন মি. কো-কে। মি. কো কুকুরটি বাড়িতে নিয়ে এলেন এবং সেটাকে বাড়িতে রেখে তিনি আবার বেরিয়ে গেলেন গলফ খেলতে। কিন্তু খেলা শেষে বাড়ি ফিরে মি কো দেখলেন, সেখানে বসে আছেন মিজ চোই এবং তিনি চরম ক্ষিপ্ত- কারণ মি. কো কুকুরটিকে বাড়িতে একা ফেলে রেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
তাদের মধ্যে ভীষণ ঝগড়া হলো। মিজ চোইয়ের আচরণ আর গালাগালিতে মি. কো এতটাই ক্ষুব্ধ হলেন যে, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন- দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে মি. চোইয়ের সম্পর্কের কথা তিনি ফাঁস করে দেবেন।
এর পর তিনি প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হেই’র প্রশাসনে মিজ চোই-এর প্রভাব খাটানোর প্রমাণ সংগ্রহ করলেন। তিনি এমন সব সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করলেন- যেখানে মিজ চোই প্রেসিডেন্টের সহকারীদের তার ব্যক্তিগত চাকরবাকরের মত ব্যবহার করছেন। এরপর তিনি সেসব প্রমাণ একটি স্থানীয় মিডিয়ার কাছে তুলে দিলেন।
মি. কো-র সাথে চোই সুন-সিলের পরিচয় হয়েছিল যখন ফেন্সিং-এ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জেতার পর মি. কো অবসর নিয়ে ‘ভিলোমিলো’ নামে মেয়েদের পোশাক ও হ্যান্ডব্যাগ তৈরির একটি কোম্পানি চালাতেন।
এরই সূত্রে চোই সুন-সিলের সাথে পরিচয় হয় তার এবং তাকে তিনি পোশাক সরবরাহ শুরু করেন- যার আসল গ্রাহক ছিলেন প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হেই। তাকে তিনি উটপাখী ও কুমিরের চামড়ার তৈরি হাজার হাজার ডলার দামের হ্যান্ডব্যাগ এবং অন্যন্য বিলাসবহুল পোশাক সরবরাহ করেন।
মি. কো বলেছেন, এসব পোশাকের দাম পরিশোধ করতেন মিজ চোই। প্রেসিডেন্ট পার্কের হাতে ভিলোমিলোর হ্যান্ডব্যাগ দেখা যাবার পর মি. কো-র সুনামও বাড়তে থাকে। আর একই সাথে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে মিজ চোইয়ের সাথে তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক।
অক্টোবর মাসে মি. কো নিই টিভিতে একটি সাক্ষাতকার দিলেন এবং তাতে তিনি বললেন, মিজ চোইয়ের সবচেয়ে প্রিয় ছিল মিজ পার্কের প্রেসিডেন্সিয়াল ভাষণগুলো সম্পাদনা করা।
এরপর রিপোর্টাররা খুঁজে বের করলেন একটি ট্যাবলেট, তাতে মিজ চোইয়ের সেলফি- যার পাশে রয়েছে প্রেসিডেন্ট-এর ভাষণের কাগজপত্র।
এরপর আরো অভিযোগ উঠলো, মিজ চোইয়ের বিভিন্ন সন্দেহজনক ব্যবসায়িক তৎপরতা নিয়ে। জনমনে তৈরি হলো ব্যাপক ক্ষোভ। শুরু হলো ব্যাপক তদন্ত। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পার্ক স্বীকার করলেন যে, তিনি তার বান্ধবীকে সরকারের কাজকর্মে নাক গলানোর অন্যায় সুযোগ দিয়েছিলেন, তবে দুর্নীতির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব অভিযোগই তার অভিশংসন এবং ক্ষমতাচ্যুতি ডেকে আনলো। সূত্র : বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ