Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুখের আলসারের চিকিৎসায় সতর্কতা

| প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুখের অভ্যন্তরে আলসার বা ঘায়ের চিকিৎসায় মাঝে মাঝে জিংক প্রয়োগ করা হয়। তবে মুখে আলসারের একজন রোগীর রেনাল ফেইলিউর বা কিডনির অচলাবস্থা থাকতে পারে। সহজ কথায় কিডনির অচলাবস্থা বা রেনাল ফেইলিউর রোগীদের ক্ষেত্রে মুখের আলসারের চিকিৎসায় জিংক প্রয়োগ করলে জিংকের জমাটবদ্ধতা হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সাবধানতার সাথে জিংক সেবন করতে হবে। আয়রনের অভাবজনিত সমস্যায় মুখের আলসার হতে পারে। তাই মুখের আলসারের চিকিৎসায় আয়রন সেবন প্রয়োজন হতে পারে। আয়রন টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকের শোষণ কমিয়ে দেয়। এছাড়া লিভোডোপা এবং মিথাইলডোপা জাতীয় ওষুধের শোষণও কমিয়ে দেয়। রোগীদের মধ্যে অনেকেই মুখের ও জিহŸার আলসারের চিকিৎসায় নিজেরাই অহেতুক ভিটামিন ‘সি’ সেবন করে থাকেন যদিও তা খুব কম ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়। মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ‘সি’ সেবন করলে মুখে আলসার না থাকলেও আলসার দেখা দিতে পারে। অনেকেই বুঝতে চান না যে, দৈনিক আমাদের শরীরে ভিটামিন ‘সি’-এর চাহিদা মাত্র ৪০ মিলিগ্রাম। অতিরিক্ত ভিটামিন ‘সি’ বা এসকরবিক এসিড আমাদের মুখ গহŸরের লাইনিং-এর জন্য কোনো কাজে আসে না। অনেকে আবার ঠাÐাজনিত সমস্যার কারণে বা জ্বর থাকলে অতিরিক্ত ভিটামিন ‘সি’ সেবন বা গ্রহণ করে থাকেন যা মোটেই ঠিক নয়। মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ‘সি’ সেবন করলে কিডনিতে পাথর পর্যন্ত সৃষ্টি হতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
মুখের আলসারের চিকিৎসা সফল হবে না যদি আমরা ক্রমাগত ভেজাল খাবার গ্রহণ করতে থাকি। রোগীদের এবং সবার ফরমালিনমুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। ফল কেনার সময় যদি মনে হয় কার্বাইড দ্বারা ফল পাকানো হয়েছে তবে এ জাতীয় ফল খাওয়া যাবে না। বর্তমানে আনারস খাওয়াও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। আনারসে ফরমালিন মেশানো হয় না একথা সত্য। কিন্তু ফরমালিনের পরিবর্তে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আনারসে স্প্রে করা হয় যেন কাঁচা আনারস তাড়াতাড়ি পেকে যায় এবং আনারসের রং সুন্দর দেখা যায়। পাঠকদের জন্য শুধু এটুকু তথ্য দেয়া যায় যে, আনারস পাকে আনারসের গোড়ার অংশ থেকে উপরের দিকে। যদি এর ব্যতিক্রম দেখেন তাহলে বুঝতে হবে এই আনারসে রাসায়নিকদ্রব্য মিশানো হলেও হতে পারে। এছাড়া বাজারে দেখবেন আনারসের কোনো অংশ পাকা আবার কোনো অংশ কাঁচা। এতে বোঝা যায় আনারসের যে অংশে স্প্রে করা হয়েছে তা পেকে গেছে আর যে অংশে স্প্রে পড়েনি সেই অংশ সবুজ রয়ে গেছে। অতএব আনারস কেনার সময় দেখেশুনে কিনতে হবে। গুড়ে যেহেতু হাইড্রোজ মেশানো হয় তাই গুড় না খাওয়াই ভালো। খেতে চাইলে নিশ্চিত হয়ে নিন গুড় ভেজালমুক্ত কিনা? রঙিন সেমাই না খাওয়াই ভালো। কারণ রঙিন সেমাইতে কাপড়ের রং মেশানো হয়ে থাকে। ঢাকা শহরের অধিকাংশ ঘিই ভেজাল। অতএব ঘি খাওয়ার সময় সাবধান হতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় না খেয়ে থাকতে পারলে। ঢাকা শহরে সর্বোপরি সারাদেশে গরমে প্রশান্তির জন্য বিভিন্ন নামে মাঠা পাওয়া যায়। কিন্তু সবচেয়ে লোমহর্ষক বিষয় হলো কিছুদিন আগে এক অনুসন্ধানে দেখা যায় মাঠার মধ্যে কম দামের টিস্যু পেপার মেশানো হচ্ছে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তা বোতলজাত করা হচ্ছে। একবার ভাবুনতো এসব মাঠা খেয়ে গরমে আপনার সাময়িক প্রশান্তি হলেও দীর্ঘমেয়াদে মুখের আলসার থেকে শুরু করে ভাইরাল হেপাটাইটিসসহ জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয় যে কোনো বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আপনাকে পড়তে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। মেয়েদের পছন্দের খাবার ফুচকা ও চটপটি। আবার এর মাঝে যোগ হয়েছে দই ফুচকা। এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায়, যেখানে ফুচকার আবরনী অংশ বানানো হয় সেটি অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে করা হচ্ছে। ফুচকার অংশ বানানোর একপাশে শিশু মল ত্যাগ করছে আর অন্য পাশে সবাই খালি পায়ে ঘরের ভেতরে বাইরে আসা-যাওয়া করছে। এখান থেকে ফুচকা কম দামের তেলে ভেজে ঢাকা শহরের সর্বত্র সরবরাহ করা হয়। এখন আপনি এবং আপনার পরিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন ফুচকা বা চটপটি খাবেন কিনা। খেলে কি হতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মুখে বা জিহŸায় আলসার হলে সব ধরনের মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যায় না। কোনো কোনো মাউথওয়াশ ব্যবহারের কারণে মুখ ও জিহŸার আলসার ভালো হওয়ার পরিবর্তে আরো খারাপ অবস্থার দিকে যায়। তাই মাউথওয়াশ ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। আপনি যদি অনবরত মানসিক চাপে থাকেন তাহলেও আপনার মুখে ও জিহŸায় আলসার দেখা দেবে। কিছুদিন ভালো থাকার পর বার বারও দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রমাগত মানসিক চাপে থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই মুখের আলসার সহজে ভালো হতে চায় না।
ডা. মো. ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
শাহ আলী হাসপাতাল মিরপুর-১, ঢাকা।
মোবাইল : ০১৮১৭৫২২১৮৯৭



 

Show all comments
  • মোঃ দেলোয়ার হোসেন ১৫ মার্চ, ২০১৭, ১১:৩০ এএম says : 0
    আমার আম্মার মুখের ভিতরে ঘা হয়ে আছে, মাজে মধে দাতও ব্যথা করে। মুখে ঝাল জাতীয় কিছু খেতে পারে না। এই রোগটি প্রায় ৫বছর যাবৎ, অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে কিন্তু কাজ হইনাই, মুখটি নিয়ে বড়ই চিন্তীত আছি, আমাকে এই রোগের প্রতিকারটি যানালে খুবেই উপকৃত হব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন