Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামপুরে শিক্ষক না আসায় স্কুল থাকে তালাবদ্ধ, ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইসলামপুর (জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : বেহালদশার মধ্যে দিয়ে চলছে যমুনা নদ-নদী ভাঙন ও বন্যাকবলিত জামালপুরের ইসলামপুরে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। এলাকাবাসী এজন্য কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য ও কর্ম ফাঁকিসহ স্বেচ্ছাচারীতাকে দায়ী করেছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, ২২নং চর শিশুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন দিয়ে চলছে পাঠদান। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তারিন মুক্তি, রওশন আরা, ছাইমা বেগম ও জাফরিন আক্তার চারজন শিক্ষিকার স্কুলে থাকার কথা থাকলেও গিয়ে শিক্ষিকা জাফরিন আক্তার ও দপ্তরি আমিরুল ইসলামকে পাওয়া যায়। অপরদিকে ওইদিন দীঘাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে স্কুলটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। একই চিত্র উত্তর দীঘাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফজিলা গাফফার এবং সাপধরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এলাকাবাসী জানায়, শিক্ষকরা না আসায় ছাত্রছাত্রীরা এসে তালাবদ্ধ দেখে চলে যায়। এ যেন দেখার কেউ নেই। দীঘাইর স. প্রা. বিদ্যালয় বন্ধ পাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আ. সামাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি অফিসে আছি। তবে সহকারীরা যাওয়ার কথা। উত্তর দীঘাইর বিদ্যালয়, কাশারীডোবা, এবং দীঘাইর দাখিল মাদরাসাটি বন্ধ পাওয়া ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যাননি বলে স্বীকার করেন। এলাকাবাসী জানায়, শিক্ষকরা মাঝে মাঝে আসে আবার তাড়াহুড়া করে চলে যায়। এতে যমুনার পশ্চিমাঞ্চল এলাকার ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মান নি¤œদিকে ধাবিত হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী। চর শিশুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুর মোহাম্মদ আলীর কাছে শিক্ষক অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিগত দিন হতে তাগিদ দেয়ার শর্তেও কোনো ব্যবস্থা হয়নি বা শিক্ষা অফিস কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্লাস্টার শাহনাজ আক্তারসহ কোনো কর্মকর্তার পায়ের ধুলো পড়েনি আজো। আরো জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ¯িøপের টাকা ও প্রাক প্রাথমিকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। সরকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু যমুনা- নদ-নদী চরাঞ্চলে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিন্নচিত্র। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শিক্ষক থাকেন উপজেলা ও জেলা সদরে। তারা মাসের পর মাস কর্ম ফাঁকি দিয়ে কোচিং বাণিজ্য করছেন। শুধু মাস শেষে একদিন স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে বেতন নিয়ে যান। এমন শিক্ষকও রয়েছে মাসে একদিনও কর্মস্থলে যান না। এলাকাবাসী শিক্ষকদের এ কর্মফাঁকির জন্য কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতাকে দায়ী করেছেন। তাদের অভিযোগ বছরে দু’একবারও স্কুলগুলোতে কর্মকর্তাদের পায়ের ধুলি পড়ে না। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কর্মফাঁকি ও কোচিং বাণিজ্যের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষকরা উপবৃত্তি, স্কুল মেরামত ও ¯িøপের টাকা আত্মসাৎসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকার কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে। ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই বিতরণে বিলম্ব ও অনিয়মসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতায় ওই অঞ্চলের শিক্ষাকার্যক্রম চলায় শিক্ষার মান নি¤œদিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে উপজেলার ওই অঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে। বিগত দিনে, সিন্দুরতলী, শিলদহ, বরুল, মন্নিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রক্সির দায়ে কয়েক শিক্ষককে ইতোমধ্যে শোকজ করা হলেও রহস্যজনক কারণে পরবর্তীতে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে দিন দিন শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহতসহ শিক্ষকরা এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়েই দিয়েছেন। এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, দ্রæত অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ