Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কারাগার এখন বন্দিদের সংশোধনাগার

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


কাশিমপুরে শিশুদের জন্য আধুনিক ডে কেয়ার সেন্টার ও আনন্দভবন পার্ক উদ্বোধন আজ : ২৮ ট্রেডে বন্দিদের  আত্ম কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান
হাসান-উজ-জামান : উন্নত বিশ্বের আদলে না হলেও সময়ের ব্যবধানে বন্দিদের জন্য দেশের কারাগারগুলোতে অনেক সংস্কার হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, এক সময় কারাগার শুধু সাজা কার্যকরের স্থান হিসেবেই পরিণত হতো। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ জেল তার পূর্বতন ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে নতুন পথে ধাবিত হচ্ছে। দেশ স্বাধীনের পর ৪টি কেন্দ্রীয় কারাগার, ১৩টি জেলা কারাগার এবং ৪৩টি উপ-কারাগার নিয়ে যাত্রা শুরু বাংলাদেশ জেল (বি ডি জে)র।
পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে বন্দি সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উপ-কারাগারগুলোকে জেলা কারাগারে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ৫৫টি জেলা কারাগার নিয়ে বাংলাদেশ জেল কাজ করে চলেছে। রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ। বাংলাদেশ কারা বিভাগ এই ভিশনকে সামনে রেখে কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগ নেয়। বন্দিদের মাঝে শৃংখলা বজায়, মানবিক আচরণ করা, তাদের বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা এবং স্বজন, ও আইনজীবীর সাথে সাক্ষাত নিশ্চিত করা এবং একজন সুনাগরিক হিসাবে সমাজে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণের মিশন গ্রহণ করে কারা বিভাগ।
এখন কারাগারে থেকেও ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন বন্দিরা।
খুব শিগগিরই তা চালু হতে যাচ্ছে। একাধিক মামলার আসামি ও দুর্ধর্ষ বন্দিদের বার বার আদালতে আনা-নেয়া অনেক সময় নিরাপদ নয়। এজন্য কনফারেন্সের মাধ্যমে বন্দিদের হাজিরা নিশ্চিতের প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে চলেছে। অনেক মহিলা বন্দির সাথে ৬ বছরের নিচে তাদের শিশু সন্তান রয়েছে। এসব শিশু যাতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় এ জন্য কাশিমপুর মহিলা কারাগারে চালু হচ্ছে আধুনিক ডে কেয়ার সেন্টার। সাথে শিশুদের জন্য আনন্দভবন পার্ক। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ডে কেয়ার সেন্টার ও পার্কটির উদ্বোধন হবে। কাশিমপুর কারাগারে আজ দুপুরে ৪৯তম কারারক্ষী প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজও অনুষ্ঠিত হবে।  
এক সময় দুর্বিষহ ছিলো কারা জীবন। সাক্ষাৎপ্রার্থীরা যাতে বন্দির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র পাঠাতে পারেন এ জন্য প্রত্যেক কারাগারে একটি করে কেন্টিন চালু করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কেন্টিনে অতিরিক্ত দাম রাখার অভিযোগ ওঠায় অতি সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য তালিকা কেন্টিনের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে। মোট ৯০টি দ্রব্যের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। কারাভ্যন্তরেও রয়েছে কেন্টিন ও দোকান। পিসির মাধ্যমে স্বজনদের পাঠানো টাকা দিয়ে বন্দি ওই কেন্টিন থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যদি নিতে পারেন। প্রত্যেক কারাগারে প্রধান ফটকের সামনে ওকালতনামা দাখিলের জন্য বাক্স রাখা হয়েছে।
কারা বিধি অনুসারে বন্দির খাবার ও আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি কারা হাসপাতালে  চিকিৎসার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ বন্দিদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কারাগারের বাহিরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রেখেও চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। কারাভ্যন্তরে মাদকাসক্ত বন্দিদেরকে সাধারণ বন্দিদের থেকে আলাদা করে পৃথক আবাসনের মাধ্যমে যথাযথ চিকিৎসা সেবা হয়। কারাগারে আটক বন্দিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিরূপণ করতঃ তাদের আগ্রহ অনুসারে বিভিন্ন ট্রেডে নিয়োজিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে করে বন্দি সাজা ভোগের পর মুক্ত জীবনে ফিরে গিয়ে নানা রকম বিভিন্ন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন।
কারা সূত্র জানায়, গত এক বছরে আড়াই হাজারেরও বেশি কারাবন্দিকে আত্ম কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে কারা বিভাগ। কারা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও দেশি-বিদেশি সংস্থা, সরকারি বিভিন্ন দফতর থেকে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। কারা অধিদফতরের তথ্যমতে, কারাগারের মোট ২৮ ট্রেডে বন্দিরা কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। ট্রেডগুলো হচ্ছে, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড হাউসওয়্যারিং, মেনজ এ্যান্ড জেন্টস পার্লার, ড্রেস মেকিং এ্যান্ড টেলারিং, সেলাই প্রশিক্ষণ, মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ, নরসুন্দর প্রশিক্ষণ, বøক, বাটিক ও বুটিক, কারচুপি, হর্টিকালচার এন্ড নার্সারি ডেভেলপমেন্ট, টাইলস ফিটিং, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড অডিও ভিজুয়াল রিপেয়ার, ওয়েল্ডিং, মাশরুম কাল্টিভেশন, চামড়াজাত হস্তশিল্প, বিউটিফিকেশন, প্লাম্বিং এ্যান্ড পাইপ ফিটিংস, কেঁচো সার, সিভিল পেন্টিং, পারটেক্্র ফার্নিচার, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, সেলফোন সার্ভিসিং, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, ব্যাগ তৈরি, ভূমিকম্পকালীন দুর্যোগ মোকাবেলা ও প্রাথমিক চিকিৎসা, মৌ চাষ, রেফ্রিজারেশন, দর্জি প্রশিক্ষণ এবং দুগ্ধবতী গাভী পালন ও পশু মোটাতাজাকরণ।
সারাদেশের সকল কারাগারের নির্দিষ্ট স্থানে একটি করে ওয়ার্কশেড তৈরি করা হয়েছে। বন্দির উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ এর ভেতরে বন্দি প্রশিক্ষণ পুনর্বাসন স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। কারা অধিদফতর “বন্দিদের সংশোধন সমাজে পুনর্বাসন” কারা সপ্তাহের এ  শ্লোগানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশের সকল কারাগারেই এ ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান আরও বেগবান করার অঙ্গীকার করা হয়।
ঊর্ধ্বতন এক কারা কর্মকর্তা বলেন,  গত বছর আড়াই হাজারের বেশি বন্দিকে ২৮ ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।  এর মধ্যে অসংখ্য বন্দি এসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সমাজে স্বাবলম্বী হয়েছে। আগে বন্দিদের পুরনো বেশকিছু ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলেও বর্তমানে আধুনিক ও যুগোপযোগী ট্রেড নির্বাচন করা হয়েছে। কারাগারে বন্দিরা সাজা শেষে আমাদের সমাজেই ফিরে যান। তারা সামাজিক জীবনে ফিরে গিয়ে যাতে স্বাভাবিক জীবনে নিজেকে নিয়োগ করতে পারেন সেজন্য ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা কারাগারের বন্দিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে । এর বাইরে বন্দির উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ তে বন্দিদের জন্য প্রশিক্ষণ পুনর্বাসন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ স্কুলে যেসব বন্দি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তাদের সরকারি বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সনদ প্রদান করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের পরিকল্পনা আছে, লোকবল বৃদ্ধি করা হলে আমরা নিয়মিত মুক্তি পাওয়া বন্দিদের প্রশিক্ষণ পরবর্তী জীবন ফলোআপ করা হবে। সরকার কর্তৃক এসব প্রশিক্ষিত বন্দিদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে এসব প্রশিক্ষণ কাজে লাগাতে পারেন। এজন্য তিনি প্রশিক্ষিত মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের কর্ম সংস্থানে সরকারের সহযোগীতা কামনা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ