আবার আসব
আমরা ফিরে যাচ্ছি ক্যাম্পে। আবার আসব- আসতে হবে আমাদের। আগে বাড়া- পিছু হঠা- এটাই আমাদের
আলতাফ চৌধুরী
শব্দমালা
১.
চাষী চাষ করে মাটি ও জলে
ফসল ফলে একই রকম;
যদিও মাটি ও জল পরস্পর বন্ধু এবং শত্রæবটে।
২.
জোয়ার ভাটা না থাকলে নদী যেমন
মরে যায়; নরনারী
উর্বরতা হারালে জীবন মৃত হয়ে যায়।
রোকেয়া ইসলাম
তিন ফাগুনের গান
নিদারুণ শহরের প্রতিটা কঠিন বৃক্ষে
গেঁথেছিল প্রেম ছুঁয়ে দারুণ যৌথ নাম
চঞ্চল পাতার অস্পর্শ শরীর জুড়ে তানপুরা
হাওয়ার ভাঁজে ভাসে ভালবাসার গান
গোপন গভীর তারে অলংঘনীয় মিহি সুর
কখনও কাছে আসার অনিবার্য মিথুন কাল
দূরে গেলে স্মৃতিময় উতল তপ্ত বেলা
এগুলো আরেক বসন্তের অকথিত সর্বনাশা প্রহর
তারপরের ফুলেল ফাগুনও বর্ণ-গন্ধ হীন
সুদীর্ঘ রাজপথে অবরোধ চৈত্রের মধ্য দুপুর
চাতক কণ্ঠে শ্লোগান বিরহ গীতিনৃত্য নাট্য
বিষণœ বাউড়ি বসন্তের অথৈ সমুদ্র
পূর্ণিমার ধবল নিশি অবসানে
প্রেম মন্ত্র সিদ্ধ নতুন সূর্য ফাগুন রাঙ্গা আগুন দিনে দাঁড়ায়
নব পল্লবে একা ভোর
ফাহিম ফিরোজ
দূর্বতী.. দূর্বতী
সুখ, পালালো মাটির তলে, অমনি অমনি ভাঙলো আকাশ
জলীয়সমেত; পাখিকুল ডানা ভাঁজ করে
উপবিষ্ট জঙ্গল চূড়ায়
শবের চরিত্র ধার করে
সে আজ বিস্মৃত
স্মরণাতীত পৃথিবী
কুটির এবং পুষ্পদ্বয়
গমনাঞ্চল মনে হয় নদাকীর্ণ খুব; ইঞ্জিন চালিত
শক্তিশালী নৌকা আছে বেশ
ঘোলাতোড়ে সৃষ্ট আগুনে পাহাড় দেখে
ভুলে গেছে তাই
তুষার প্রান্তর
ছোঁয়া আর পারদের বিষয় এখানে খুবই
উচ্চকিত।
৩/৩/২০১৭
ইদ্রিস সরকার
অনন্য দিনের চিত্র
সেসব অনন্য দিনগুলো
এখন আর আমার সাথে কোনো যোগাযোগ
রাখতে চায় না। পালিয়ে পালিয়ে থাকে
ও বৃষ্টি সুদূর সমুদ্র হাওয়া কেনো? কেনো?
বার বার আরজ দুঃখী পূর্ণিমার রাতে
ফেলে আসার স্কুল ঘর কচি কলাপাতা
জামরুল জারুল বিবিধ তপস্যা স্বপ্নসাধ
অনন্য সত্য ও সুন্দরের নাম
জেগে উঠতে চায় আঁধার ফেঁড়ে তামা ফেঁড়ে
সেসব অনন্য দুষ্টিগুলো সেসব অনন্য দিনগুলো শুধুই কী
পাক খেতে থাকবে জনম ভর?
ও কস্ট ও রোদ্র ও নিমর্ম ও খরদুপুর কেনো? কেনো?
কালীপদ দাস
ছাই পাশ
একদিন তোমার মতো করেই দেখলাম
আকাশ নষ্ট শিশিরে গা ভিজিয়ে
সূর্য ওঠার আগে খোলা ময়দানে
সটান শূন্যে উপর পানে নিবিড় ঘন আকাশ
না, নেই তো কোনও নতুন শুলুক
নেই তো কোনও পেঁজা তুলো, এলো মেলো মেঘ
সবই ছাইপাশ।
অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়
ইচ্ছে নামক গোপন চাবি
বুকের মধ্যে দাপিয়ে বেড়ায়
অন্তবিহীন হুলোবেড়াল কেমন যেন অন্তর্দাহে
পুড়তে থাকে সারাটা মন তোমার কাছে যাবার জন্য
পরিবহন সুগম তো নয় ট্রাফিক জ্যামে লাল আলো
আর ইচ্ছে নামক গোপন চাবি
ভুল ধরিয়ে দ্যায় যে আমার সমস্ত রাত উড়তে থাকি
উড়তে উড়তে জ্বলতে জ্বলতে পালকগুলি খসতে থাকে
টুপটাপ হিম ঝরতে থাকে ঝরতে থাকে ঝরতে থাকে
বরফ কেবল গলতে থাকে গলতে থাকে গলতে থাকে।
মাহমুদ কামাল
আসে যায় মাঝখানে সামান্য সময়
আসে যায় মাঝখানে সামান্য সময়
এর মাঝে ঝর্ণাধারা এর মাঝে ঢেউহীন নদী
যখন অচেনা সুর বেজে ওঠে বিকল্প বাগানে
শোক তাপ তুলে রেখে ভ্রমণেÑবিষাদ জাগে ভোর
অপাপ ভোরের শূচি স্নিগ্ধ হয়ে উঁকি দেয় রোদ
জীবন-যতির ছায়ায় অতিদ্রæত বিকেলের নদী
বিকেল পড়ন্ত হয়ে ঢেউগুলো নীরব সন্ধ্যায়
রাতের যৌবন ধ্বনি স্রোতনদী ভেঙ্গে দেয় বৃতি
এ ভাবেই আসে যায় মাঝখানে সামান্য সময়
এই নিয়ে এত কিছু?
শাহীন রেজা
পাখির গল্প
একটি পাখি ছিল
ঘন নীল ঝুটিওয়ালা; পোষাপাখি
প্রতিদিন পাখিটাকে খাঁচার দরজা খুলে
বেরুবার গল্প বলা
কি অক্লান্ত সময় ছিল
পাখিটা শুনতো আর মুখ লুকাতো
শষ্যদানায়; জল ভরা বাটিতে
খেতে খেতে তুলতো ঢেঁকুর
এবং একসময় হাই তুলে
ঘুমাবার নানা কসরৎ
পাখিটা জানতো বেশ
খাঁচার আরামের চেয়ে তার কাছে
সহজলভ্য আর নেই কোন কিছু
অবশেষে একদিন
শেষ হলে শষ্যদানা, বাটির জল
সেই পাখি খাঁচার দরজা ভেঙে
আকাশটাকে কাছে টেনে নিল
গল্প শুনে নয়
প্রয়োজনই তাকে বেরুবার
সাহস জোগাল।
জাহানারা আরজু
দিন শেষে পাখিরা ফেরে না কুলায়
ভার্সিটির আমতলা আর রমনার বটতলা,
শিমুল পলাশ ফোটা সেই ফাল্গুন- দিগন্ত জোড়া
কৃষ্ণচূড়ার আগুন, স্মৃতির মূভি ক্যামেরায় আজো
দীপ্ত হয়ে ফিরে আসে, ফিরে আসে মধুর রেস্তোরাঁ
জটলা-পিকেটিং-পোস্টার-রাতজাগা কর্মসূচী নিয়ে
ক্লান্তিহীন পদক্ষেপে কম্পিত শঙ্কিত রাজপথÑ
চোখে চোখে বিসুভিয়া অঙ্গারÑ
হঠাৎ বুলেট-বারুদ, পথের ওপরে লুটানো
পাখির ঝাঁক-নির্মম ব্যাধের স্থির লক্ষ্যে শরাহত
ঝাঁঝরা তরুণ তপ্ত বুক।
মাথার ওপরে কৃষ্ণ-কোকিলটা ডানা ঝাপটায়Ñ
ফাল্গুন কাঁদে, কাঁদে, আজো এই ফোরাতের তীরেÑ
সেই সাথে কাঁদে দুঃখিনী বাংলার চির ক্রন্দসী
মায়েদের বুক, ডাকেÑ
‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর ফিরে যায়, ফিরে আয়’Ñ
দিন শেষে পাখিরা ফেরে না কুলায়
শুধু অন্ধকারে ঘাতকের ছোরা বারবার চমকায়।
জামালউদ্দিন বারী
কঠিন সময়ের দাগ
মাটিতে পাথরে বৃক্ষে ফুলে বাতাসে পানিতে
দাগ কেটে কেটে এই কঠিন সময় একদিন চলে যাবে
আগন্তুক হিরণ¥য় সময়ের গহŸরে।
নতুন ধুলোর আস্তরণে ভূমি ঢেকে যাবে
ক্ষয়ে যাওয়া পাথর ও ফুলের মিলিত বিভাস
রয়ে যাবে বাতাসে পানিতে।
মানুষেরা পাথরের বৃক্ষের অথবা পাখিদের
নদীর কিংবা বাতাসের ভাষা বোঝেনা
তুমি কি বোঝ আমার ভাষা?
অমোঘ নিয়মে চলে যাব একদিন
বৃন্তহীন গহŸরে,
চলে যাবে তুমিও নিশ্চিত
তবু এই কঠিন সময়ের দাগ
রেখে যাব আমাদের স্মৃতির পর্দা থেকে
ভাষাময় শব্দের শেকলে গেঁথে।
আল মাহমুদ
নিজের সাথে নিজের কথা
সব সময়ই ভাবছি আমি যাচ্ছি চলে
ঘাড় ফিরিয়ে দেখি এখন জলেস্থলে
কারা যেন বলছে আমায়, যাও চলে যাও
যেতে যেতেই বলতে হবে আত্মকথাও।
সুখের পরে দুঃখ দিয়ে সাজানো সব
হাঁটতে হাঁটতে শুনতে পাবে সেই কলরব
আত্মকথা বলতে থাকো নিজের কাছেই
দেখবে নড়ে পত্রালি সব গাছে গাছেই।
গাছ চলেছে, চলছে হাওয়া-শব্দ তো নেই
চলতে চলতে ফিরবে তুমি নিজের কাছেই
আত্মকথা কথা কথা সরল বাণী
শিশিরসিক্ত করবে তোমায় পা দু’খানি
ঘাসের উপর গা বিছিয়ে ঘুমাও যদি
দেখবে স্বপ্নে জাগরণে স্রোতের নদী
জলের ধারা বইছে তোমার গাত্র ছুঁয়ে
চতুর্দিকে সবার মাথা পড়ছে নুয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।